ফিরে দেখা ২৪ এপ্রিল
গত বছরের ২৪ এপ্রিল ঢাকার অদূরে সাভারে ধসে পরে ৯ তলাবিশিষ্ট ভবন রানা প্লাজা। ওই ভবনে তিনটি পোশাক কারখানা ছিল। নিচ তলায় ছিল মার্কেট। প্রতিদিনের মতো ওইদিনও শ্রমিকরা এসেছিলেন কারখানায়। কাজে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় ঘটে মর্মান্তিক ওই ঘটনা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ধ্বংসস্তূপ থেকে ১ হাজার ১১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ১৬ জন। মোট নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ১৩২ জন। নিহতদের মধ্যে স্বজনদের কাছে মরদেহ তুলে দেওয়া হয় ৮৩৮ জনের। ২৯১ জনের মরদেহ শনাক্ত না করতে পারায় সেগুলোকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। শনাক্ত হয়নি এমন মরদেহের মধ্যে পুরুষ আছে ৫৫ এবং মহিলা ২৩৬ জন। ধসের পর জীবিত উদ্ধার করা হয় দুই হাজার ৪৩৮ জনকে। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয় ১ হাজার ৫২৪ জন। এ ঘটনায় পঙ্গু ও শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছে ৭৭ জন।
দেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ দুর্ঘটনায় মোট তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। তিনটি মামলার মধ্যে একটি করে পুলিশ। ওই মামলায় ত্রুটিপূর্ণ জেনেও শ্রমিকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
সরাসরি হত্যার অভিযোগ এনে আরেকটি মামলা দায়ের করেন নিহত শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী শিউলী আক্তার। অপর মামলাটি বিল্ডিং কোর্ড অনুসরণ না করার অভিযোগে করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
তিনটি মামলাই তদন্ত করছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর।
মামলা তিনটিতে কবে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হবে জানতে চাইলে বিজয় কৃষ্ণ বলেন, ‘২৪ এপ্রিলের আগে চার্জশিট দাখিল করা সম্ভব হবে না। তবে আগামী মাসের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে পারব।’
প্রাণহানির দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনার এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে রানা প্লাজার মালিক যুবলীগ নেতা সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক ওরফে খালেক কুলুসহ আট জন জামিনে রয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃত ২১ জনের মধ্যে ওই আট জন গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।
বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি নাজমুল হক ও বিচারপতি মোশরেফা হোসেন, বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হাসান ও বিচারপতি নাজমুল হকের বেঞ্চ বিভিন্ন সময় তাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন।
জামিনে মুক্ত হওয়া অপর সাত আসামি হলেন-সাভার পৌরসভার বরখাস্ত হওয়া মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি রেফাতউল্লাহ, সোহেল রানাকে যশোরে আত্মগোপনে থাকতে সহায়তাকারী অনিল দাস, শাহ আলম ও আবুল হাসান, রানা প্লাজার অনুমোদন ও নির্মাণ-প্রক্রিয়া তদারকির দায়িত্বে থাকা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এমতেমাম হোসেন, রানা প্লাজার নকশা অনুমোদনের জন্য সুপারিশকারী সাভার পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার ও পৌরসভা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খান ও সাভার পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান।
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোহেল রানার একশ’ ৭৫ শতক জমি বাজেয়াপ্ত করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।
গত ১৮ মার্চ ওই জমি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন।
তিনি জানান, বাজেয়াপ্ত করা জমির মধ্যে সাভারের রানা প্লাজার ১৮ শতক জমি, রানা কমপ্লেক্সের ১০ শতক এবং ধামরাই থানাধীন ওই আসামির মালিকানাধীন আরো একশ’ ৪৭ শতক জমি।
জেলা প্রশাসক ইউসুফ হারুন আরো জানান, গত বছর ৩০ এপ্রিল জনৈক ব্যক্তি হাইকোর্টে ওই ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপুরণ দাবি করে একটি রিট করেন। রিটে হাইকোর্ট একটি মামলার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোহেল রানার সম্পত্তি খুঁজে বের করে (জেলা প্রকাশক কার্যালয়) বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিবিধ মামলা করে সোহেল রানার স্থাবর সম্পত্তি খুঁজে বের করে তা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
তিনি জানান, উক্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এটা না জেনে কেউ যাতে ক্রয় বা বন্ধক গ্রহণ না করেন এজন্য জাতীয় দৈনিক একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা জেলা প্রশাসক অফিসে রক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত এবং এক হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ১৯ জন মারা যান।
মৃত উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৮৪৪ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা রেখে ২৯১ জনের অসনাক্তকৃত লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জীবিত উদ্ধারকৃতদের মধ্যে এক হাজার পাঁচশ’ ২৪ জন আহত হন। তদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন ৭৮ জন।