কিভাবে আসে ব্রিটিশ রাজকীয় নাম
সদ্যভূমিষ্ঠ রাজপুত্রের নাম রাখা হয়েছে জর্জ আলেকজান্ডার লুইস । “জর্জ” এসেছে বর্তমান রাণী ২য় এলিজাবেথের বাবার ৬ষ্ঠ জর্জ থেকে, “আলেকজান্ডার” স্কটল্যান্ডের প্রাচীণ রাজাদের একজনের নাম ছিল। আর “লুইস” এসেছে রাণী এলিজাবেথের স্বামী প্রিন্স ফিলিপের এক চাচা লর্ড লুইস মাউন্টব্যাটেনের কাছ থেকে। প্রিন্স উইলিয়াম ও ডাচেস কেট যেহেতু যথাক্রমে ডিউক ও ডাচেস অব কেমব্রিজ নামে পরিচিত,তাই তাঁদের সন্তান জর্জ আলেকজান্ডার লুইস এখন থেকে “প্রিন্স অব কেম্ব্রিজ” নামেও পরিচিত হবে। যদিও ব্রিটিশ পত্রিকা “দ্য মেইল” এই ধারণা বাতিল করে দিয়েছে,তবে অধিকাংশ এটাই মনে করে।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের নামগুলো নিয়ে অনেকেরই মনে কৌতূহল জাগতে পারে। কারণ,রাজপরিবারের সদস্যরা একই সাথে রাজকীয় নাম ও নিজস্ব নাম বহন করেন। প্রশ্ন হলো, এই রাজকীয় নামগুলো কিভাবে দেয়া হয়।
১৯১৭ সালের পূর্বে রাজপরিবারের সদস্যরা তাদের নিজস্ব নামে পরিচিত হতেন না। তারা রাজবংশের যে পরিবার থেকে আসতেন,সে পরিবারের নামে পরিচিত হতেন।
ঐতিহাসিক ভাবে রাজা ও রাজপুত্রগণ সেসব দেশ বা এলাকা শাসন করতেন,সেসব স্থানের নামেই পরিচিত হতেন। এ কারণে রাজা ও রাণীরা তাদের রাজকীয় নামেই সব দলিল-দস্তাবেজে স্বাক্ষর করতেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে।
নামকরণের এই ধারা বা নিয়ম পরিবর্তিত হয়ে যায়,যখন ব্রিটিশ রাজপরিবারের উত্তরাধিকারীদের মাঝে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়, যেমন চতুর্থ হেনরি দ্য ল্যাঞ্চেসট্রিয়ানস ও চতুর্থ এডওয়ার্ড দ্য ইউর্কিস্ট-এর কিংবা সপ্তম হেনরি ও টিউডরদের মাঝে দ্বন্দ্ব রাজপরিবারের নামকরণের ঐতিহাসিক ধারাকে বিভক্ত করে দেয়। আবার অনেক সময় রাজবংশের কোন এক পরিবার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তার কোন এক মেয়ে সদস্যকে রাজবংশেরই অন্তর্গত অন্য কোনো পরিবারে বিয়ে দেয়া হয়। এভাবেও উত্তরাধিকারের স্থানান্তরের ফলেও নাম পরিবর্তিত হয়েছে,যেমন- দ্বিতীয় হেনরী ও এনজেভিনস, ১ম জেমস ও স্টুয়ার্টস, ১ম জর্জ ও হ্যানোভারিয়ানস।
রাজশিশুরা জন্মের সাথে সাথে তাদের বাবার দেয়া নামের সাথে সাথে বাবার পারিবারিক নামেও পরিচিত হতো। যে কারণে রাণী ভিক্টোরিয়ার বড় ছেলে সপ্তম এডওয়ার্ড তাঁর বাবা প্রিন্স এলবার্টের পারিবারিক নাম“স্যাকসে-কোবার্গ-গোথা”ও গ্রহণ করেছিলেন। সপ্তম এডওয়ার্ডের পর তাঁর ছেলে পঞ্চম জর্জ রাজা হন,সময়টা ১৯১০ সাল।
১৯১৭ সালে নামকরণের এই ধারাতে আরেকবার বিশাল পরিবর্তন আসে। যখন রাজা ৫ম জর্জ “উইন্ডসর”কে শুধু নিজের পারিবারিক নামই নয়, রাজবংশের নাম হিসেবেও বেছে নেন। এর কারণ হচ্ছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি ছিল ব্রিটেনের শত্রু , আর ৫ম জর্জের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পারিবারিক নামে জার্মান ছোঁয়া ছিল। “উইন্ডসর” নামটি একটি দূর্গের নামে নেয়া। প্রিভি কাউন্সিলের এক সভায় ৫ম জর্জ ঘোষণা দেন,” রাণী ভিক্টোরিয়ার সকল পুরুষ ও অবিবাহিত উত্তরাধিকারীরা নিজের নামের পর ‘উইন্ডসর’কে পারিবারিক নাম হিসেবে ব্যবহার করবে। “
১৯৫২ সালে বর্তমান রাণী এলিজাবেথ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হবার পর “উইন্ডসোর” নামটিই গ্রহণ করেন,তবে ১৯৬০ সালে তিনি ও তাঁর স্বামী ডিউক অব এডিনবার্গ প্রিন্স ফিলিপ চান যে তাঁদের সরাসরি উত্তরাধিকারীরা আলাদাভাবে পরিচিত হোক। রাজকীয় নাম “উইন্ডসোর” ঠিক রেখে ৫ম জর্জের সকল পুরুষ ও অবিবাহিত নারী উত্তরাধিকারীরা যেটি ব্যবহার করে আসছিল। এর পর থেকে বর্তমান রাণী ২য় এলিজাবেথ ও ডিউক অব এডিনবার্গ এর সরাসরি উত্তরাধিকারীরা “মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর” উপনাম ব্যবহার করেন। প্রিন্স ফিলিপ রাজকীয় নৌবাহিনীতে ল্যাফটেনেন্ট পদে থাকাকালীন “ফিলিপ মাউন্টব্যাটেন” নামে পরিচিত হতেন। এই উপনাম অফিসিয়ালি প্রকাশিত হয়, ১৯৭৩ সালের ১৪ নভেম্বর প্রিন্সেস এনি ও ক্যাপ্টেন মার্ক ফিলিপের বিয়ের রেজিস্টারে।
তবে এটি কোন চিরস্থায়ী ও বাধ্যতামূলক প্রথা নয়, নামকরণের এই ধারা সব সময়ই পরিবর্তিত হবে,যতদিন রাজপরিবার থাকবে।