ফের অপরাধীদের দখলে সিলেটের মানিকপীর (রহ.) টিলার গোরস্থান

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে: বেশ উঁচু টিলা। উপরে একটি মাজার। সিলেটের হযরত মানিকপীর (রহ.)-এর টিলা এটি। এই টিলাতেই অবস্থিত সিলেটের একমাত্র সরকারি গোরস্থান। হযরত মানিকপীর (রহ.) গোরস্থান বলে পরিচিত এই টিলা  ফের চলে গেছে ছিনতাইকারী ও হেরোইনসেবীদের দখলে। পাশে জনাকীর্ণ রাস্তা। ছিনতাই করেই টিলার ভেতরে চলে যায় ছিনতাইকারীরা। পুলিশ অভিযান চালায় কিন্তু কাউকে খুঁজে পায় না। এই টিলায় গত সোমবার রাতে বসে মাদক সেবন করছিল এলাকার কুখ্যাত ছিনতাইকারী রমজান, কবির, মুন্নাসহ কয়েকজন। টিলার ভেতরের দিকে একটি কলোনির পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসে তারা হেরোইন ও গাঁজা সেবন করে। রাতে পবিত্র স্থান মাজার এবং সংলগ্ন গোরস্থানে এই অপবিত্র দৃশ্য দেখে এলাকার প্রতিবাদী যুবক শাহীন বাধা দেয়। টিলায় বসে এসব অনৈতিক কাণ্ড না করার আহ্বান জানান। এতে ক্ষেপে যায় মাদকসেবীরা। তারা চড়াও হয় শাহীনের ওপর। এ সময় এলাকার রাসেল নামের আরও এক যুবকও শাহীনের সঙ্গে প্রতিবাদ জানায়। এ সময় রমজান, কবির ও মুন্নাসহ আরও কয়েকজন ছিনতাইকারী রাসেল ও শাহীনকে ছুরিকাঘাত করে। তারা চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে যায়। এ দৃশ্য দেখে পালিয়ে যায় রমজান ও তার সহযোগীরা। পরে স্থানীয় লোকজন রাসেল ও শাহীনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনার পর স্থানীয়রা এ নিয়ে বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেছেন রাতে। চারাদিঘীরপাড়, মজলিস আমীন ও নয়াসড়ক এলাকার বাসিন্দারা জানান- রমজান, কবির ও রাসেলের বাড়ি মাজারের আশপাশ এলাকায়। তাদের নেতৃত্বে ওই মাজারে রয়েছে একটি সিন্ডিকেট। মদ, গাঁজা, হেরোইনসহ নানা মাদক বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িত এরা। একই সঙ্গে ওই চক্রের সদস্যরা নয়াসড়ক থেকে কুমারপাড়া পর্যন্ত রাস্তায় ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। চলতি রমজানে ওই এলাকায় পথচারীসহ ৫ জনের সর্বস্ব ছিনতাই করা হয়েছে। এদিকে, মাজারের এক নির্জন প্রান্তে জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তারা জানান, শুধু পাড়ার ছেলেরাই নয় বাইরে থেকে লোকজন এসে এখানে জুয়া খেলে। এতে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্ন হচ্ছে বলে দাবি করেন একই পাড়ার বাসিন্দা হারুন আহমদ। তিনি জানান, মাজার পবিত্র স্থান। এই মাজারে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে রাসেল ও শাহীন ছুরিকাহত হয়েছে। এ বিষয়টি এলাকার মানুষ ভালভাবে নেয়নি। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ৮-১০ বছর আগে বিশাল আয়তনের হযরত মানিক পীর (রহ.) গোরস্থানের ভেতর অংশ চলে গিয়েছিল মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের দখলে। ওই সময় মাজার এলাকার একটি খুনের ঘটনার ঘটে। পুলিশি ব্যবস্থা নেয়ার পর মাজারের ভেতরের পরিবেশ বেশ স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সমপ্রতি ফের মাজার ও সংলগ্ন গোরস্থানের ভেতর নিরাপদ মনে করে অপরাধ ঘটিয়ে সেখানেই চলে যাচ্ছে চিহ্নিতরা। এলাকার বাসিন্দারা জানান, হজরত শাহজালাল (রহ.) আগমনের পর সিলেটের ওই উঁচু টিলায় অবস্থান নেন হজরত মানিক পীর (রহ.)। পরে তার মাজারস্থ গোরস্থানকে সিলেটের সরকারি গোরস্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ কারণে এই গোরস্থানে গড়ে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫টি লাশ দাফন করা হয়। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসেন কবর জিয়ারতে। মাজারে আসা এসব মানুষও অসহায় হয়ে পড়েছেন ছিনতাইকারীদের কাছে। তবে সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান, যারা গোরস্থানে বসে অপরাধ চালাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দুই যুবক ছুরিকাহত হওয়ার পর মাজার এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button