ফিলিস্তিনের সমঝোতা চুক্তিকে বিভিন্ন দেশের অভিনন্দন
ফিলিস্তিনের সমঝোতা চুক্তিকে অভিনন্দিত করেছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। তারা আশা প্রকাশ করে বলেন, এই চুক্তি ফাতাহ ও হামাসের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বিভাজনের পরিসমাপ্তি ঘটাবে এবং সাত বছরের বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটিয়ে তাদেরকে এক কাতারে শামিল করবে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, ঐকমত্যের সরকার গঠন এবং জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গত ২৩ এপ্রিল ফাতাহ এবং হামাসের মধ্যে যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে আমরা তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। গত বৃহস্পতিবার হুররিয়াত ডেইলী নিউজ তার ঐ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। ফিলিস্তিনের বিবদমান গ্রুপ ফাতাহ এবং হামাসের মধ্যে দুইদিন ধরে চলা এক বৈঠকে আগামী পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে একটি ঐকমত্যের সরকার গঠন এবং আগামী ছয় মাসের মধ্যে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় বলে তাদের যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়। নতুন চুক্তিতে ২০১১ ও ২০১২ সালে কায়রো ও দোহায় ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির শর্তগুলো বাস্তবায়ন করার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। হামাসের প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়া বলেন, আন্তঃফিলিস্তিন বিচ্ছিন্নতার অবসানের যুগ শেষ করার ঘোষণা দিতে পেরে আমি সত্যিই খুব খুশি। তিনি আরো বলেন, আমরা চুক্তির সবগুলো শর্ত বাস্তবায়ন করতে সম্মত হয়েছি যেমনিভাবে অতীতে কায়রো ও দোহায় সম্পাদিত চুক্তিতে সম্মত হয়েছিলাম।
এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিনী জনগণ এবং ভূখন্ডের অখ-তা রক্ষার স্বার্থেই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই একতা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র এবং পূর্ব জেরুসালেমকে তার রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠার কাজকে আরো শক্তিশালী করবে। ফিলিস্তিনীদের মধ্যকার বহু প্রতিক্ষিত সমঝোতা চুক্তিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অভিনন্দিত করেছেন। তারা একে দীর্ঘ সাত বছর ধরে চলা বিচ্ছিন্নতার অবসানের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মনে করেন।
মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাবিল ফাহমি এক বিবৃতিতে বলেন, মিসর আশা করে এই চুক্তি ফিলিস্তিনীদের মধ্যকার বিভক্তির অবসান এবং ইসরাইলের সাথে শান্তি চুক্তি সম্পাদনে সহায়ক হবে। অন-ইসলাম অন-লাইন সংবাদ সংস্থা তার ঐ বিবৃতিটি প্রকাশ করে। চীনও একই ধরনের আশাবাদ ব্যক্ত করে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কুইন গাঙগাওয়াস বলেন, ফিলিস্তিনীদের অভ্যন্তরীণ বিষয় সমঝোতার ব্যাপারে যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে সেটা একটা ইতিবাচক অগ্রগতি, চীন একে স্বাগত জানায়। গাঙগাওয়াসের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা সিনহুয়া এ তথ্য জানায়।
তিনি আরো বলেন, আমরা নিশ্চিত এ চুক্তি ফিলিস্তিনীদের অভ্যন্তরীণ সংহতি রক্ষায় সহায়ক হবে। এছাড়াও এ চুক্তি মৌলিকভাবে ফিলিস্তিনীদেরকে জাতি হিসেবে ভাবতে শিখাবে ইসরাইলের সাথে কিভাবে সহ-অবস্থান বজায় রেখে চলা যায়। অপরদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ঐ চুক্তিকে অভিন্দন জানালেও ইসরাইল কঠোরভাবে ঐ চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং গত বুধবার ফিলিস্তিনের সাথে শান্তি আলোচনা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। উপরন্তু ইসরাইল ফাতাহকে এই মর্মে অভিযুক্ত করেছে যে, ফাতাহ ইসরাইলের সাথে শান্তিচুক্তির পরিবর্তে হামাসকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
এক বিবৃতিতে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, অন্যকেউ চাইলেও চাইতে পারে কিন্তু হামাস শান্তি চায়না। আল-জাজিরা এ তথ্য জানায়। নেতানিয়াহু বলেন, আজকের এই সকালবেলা আমি জানতে চাই আবু মাজেন (ফাতাহ সমর্থিত ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস) কোনটা বেছে নিতে চান, ইসরাইলের সাথে শান্তি নাকি হামাসের সাথে চুক্তি? তার ভাষায় হামাস হচ্ছে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রও যাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে।
যদিও প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ইসরাইলের অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং শান্তি আলোচনার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ওয়াদা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আব্বাস বলেন, এখানে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ নেই, ইসরাইলের সাথে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যেতে আমরা বদ্ধপরিকর এবং দু’টি রাষ্ট্রের মৌলিক নীতিমালার ভিত্তিতেই সমন্বিতভাবে ঐ শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।