শীতলক্ষ্যায় মিললো নজরুলসহ ৬ জনের লাশ
অবশেষে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নিখোঁজ নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৬ জনের লাশ মিললো কলাগাছিয়া এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে। বুধবার বিকালে নিহতদের লাশ নদীতে ভাসতে দেখা যায়।
এদিকে নদী থেকে উদ্ধারকৃত ৬ লাশের মধ্যে ৪ লাশ সনাক্ত করা গেছে। সনাক্তকৃত অপর ৩ জন হলেন, মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের ড্রাইভার ইব্রাহিম।
এর আগে বিকালে জেলার বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রথম তিন লাশ ভেসে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে নৌকা দিয়ে তল্লাসি চালিয়ে ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় মোট ৬ টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিকে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ভীড় জমিয়েছে হাজারো মানুষ ও নিহতের স্বজনেরা। নিহতের স্বজনদের কান্নার রোলে ভারী হয়ে গেছে আশে-পাশের চারপাশ।
বন্দর থানার ওসি মোকাররম জানান, স্থানীয়দের খবর পাওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। পরিবারের সদস্যরা পাঞ্জাবি দেখে সনাক্ত করেছেন নিহতের লাশ অপহৃত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের।
তিনি বলেন, লাশ দেখে মনে হয়েছে এটা পরিকিল্পিত হত্যাকান্ড। প্রতিটি লাশের সাথে ইট বাঁধা ছিলো যাতে এগুলো ডুবে যায়। কিন্তু লাশ পঁচে ভেসে উঠে।
স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, নিহত নজরুলের স্ত্রী ও কন্যা গায়ে পাঞ্জাবি দেখে তার স্বামীর লাশ সানক্ত করেছেন।
গত ২৭ এপ্রিল রবিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, প্যানেল মেয়র-২ ও আওয়ামী লীগ সমর্থক নজরুল ইসলাম ও তার চার সহযোগীকে তাদের বহনকারী প্রাইভেটকারসহ অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা।
একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের আদালত থেকে প্রাইভেটকারে করে বেরিয়ে যাওয়ার পর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে তাদের অপহরণ করা হয়।
ওই রাতে নজরুলের গাড়িটি গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে শালবনের পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে তাদের কোনো সন্ধান মিলছিল না।
নজরুল অপহরণের সময় থেকে নিখোঁজ রয়েছেন নারায়ণগঞ্জের প্রবীণ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার (৬০) ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম। আইনজীবীর গাড়িটি নজরুলের গাড়ির পরপরই আদালতপাড়া থেকে বেরিয়েছিল জানিয়ে চন্দনের পরিবার ধারণা করছে, কাউন্সিলের অপহরণের ঘটনা দেখে ফেলায় হয়তো তাদেরও ধরে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা।
নজরুলের ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে নারায়ণগঞ্জে অপহৃত হয়েছিলেন পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক, তবে ৩৫ ঘণ্টা পর ছাড়া পান তিনি।
নজরুল অপহরণের পর নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র্যাবের সিইও এবং ফতুল্লা থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত নজরুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একটি জোড়া খুনসহ অন্তত ১৫টি মামলা এবং বহু সাধারণ ডায়রি (জিডি) রয়েছে।
ঢাকার ধানমণ্ডিতে অ্যাডভোকেট বাবর আলী হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে নজরুলের ফাঁসির দণ্ড হলেও উচ্চ আদালত থেকে তিনি বেকসুর খালাস পান।