শাপলা চত্বরে অভিযানের এক বছর
বছর ঘুরে আবার ফিরে এলো ঐতিহাসিক ৫ মে। ২০১৩ সালের এই দিনে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ১৩ দফা দাবিতে লংমার্চ শেষে ঢাকায় ইতিহাসের বৃহত্তম সমাবেশের আয়োজন করে। বস্তুত, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে ৫ মে ছিল এক টার্নিং পয়েন্ট।
৫ মে ঘিরে সে সময় দেশব্যাপী এক রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগ ও তার সমমনা দলগুলো লংমার্চের তীব্র বিরোধিতা করলেও সরকার বিরোধী এবং ইসলামপন্থী সব দল লংমার্চকে সমর্থন ও সহায়তা দেয়। লংমার্চ শেষে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বিকেলের অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ। তবে সমাবেশ শুরুর আগেই সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হেফাজতকর্মী নিহত হন। সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে যখন হেফাজত নেতারা রাতে মতিঝিলে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে সমাবেশ শেষ করে ফিরে যাবার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। অবশেষে রাত ১২টার পর থেকে হেফাজতের অবস্থান ভণ্ডুল করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
মধ্যরাত থেকে শুরু হয় যৌথ বাহিনীর অভিযান। এরপর ভোররাতের আগেই শাপলা চত্বর খালি হয়ে যায়। অভিযানে অংশ নেয় বিজিবি-র্যাবসহ অন্তত ১০ হাজার নিরাপত্তারক্ষী।
গণহত্যার অভিযোগ
হেফাজতের ৫ মে সমাবেশ ঘিরে কতজন লোক নিহত হয়েছে তা আজো রহস্যঘেরা। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে প্রথমে ৫ মে দিবাগত গভীর রাতের অভিযানে কয়েক হাজার লোক নিহত হওয়ার অভিযোগ করা হয়। বিএনপিও একে ইতিহাসের ভয়াবহ গণহত্যা বলে মন্তব্য করে। সরকারের পক্ষ থেকে গভীর রাতের অভিযানে কোনো হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করা হয়। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস নোটে স্বীকার করা হয় যে, ৫ মে ও ৬ মের সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ ২০ জনের বেশি লোক নিহত হয়েছেন। এ সময় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা তথ্য প্রকাশিত হয়। বিদেশি গণমাধ্যমেও বহু রিপোর্ট প্রকাশ করে। ওই রাতের ঘটনাবলী ব্যাপক প্রচারের কারণে বন্ধ করে দেয়া হয় দিগন্ত ও ইসলামী টিভির সম্প্রচার, যা আজো চালু হয়নি।
হেফাজতের সমাবেশ ঘিরে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে অনুসন্ধান চালায় দেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। তাতে তারা ৫ মের সমাবেশ ঘিরে ৬০ জনের বেশি লোক নিহত হওয়ার দাবি করে। এরপর সরকার অধিকারের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও এএসএম নাসিরউদ্দিন এলানকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন।
তবে আদিলুর বারবারই বলে আসছেন যে তাদের তথ্য সঠিক ছিল।
হেফাজতের সমাবেশে হতাহত নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বেশ বেকায়দায় পড়ে। হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ নিহত হওয়ার গুজব দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগ কঠিন রাজনৈতিক পরীক্ষার মুখোমুখি হয়।
এর মাসের খানেক পরে অনুষ্ঠিত দেশের গুরুত্বপূর্ণ চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অকল্পনীয় পরাজয় ঘটে। এরপর আওয়ামী লীগের দূর্গখ্যাত গাজীপুর সিটিতেও শোচনীয় পরাজয় ঘটে আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগের এই পরাজয়ের পেছনে হেফাজতের ঘটনাবলীই সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে বলে অনেকের ধারণা।
হেফাজতের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড আজো রাজনীতিতে বহুল আলোচিত।