আল্লাহ ও রাসূলের অবমাননা তৌহিদী জনতা মানবে না
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আমীর আল্লাামা শাহ্ আহমদ শফী বলেছেন, এটা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে নাস্তিক-মুরতাদরা এভাবে আল্লাহ ও রাসূলকে অবমাননা করবে তা কখনও দেশের তৌহিদী জনতা মেনে নিবে না। আমাদের উদ্দেশ্য এসব নাস্তিক-মুরতাদদের মোকাবিলা করা। আমাদের এ আন্দোলন ততক্ষণ চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত নাস্তিক-মুরতাদদের নির্মূল করা না যাবে। আওয়ামী লীগ ভাইদের সাথে আমাদের কোন খারাপ সম্পর্ক নাই। তাদেরকে কখনও আমরা গালি দিইনি। শেখ হাসিনাকেও কখনো গালি দিই নাই। আমাদের উদ্দ্যেশ্য কাউকে গালাগালি করা নয়। তাদেরকে কেন আমরা গালিগালাজ করব।
সোমবার ৩ টায় হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আল-আমানহ্ ফাউন্ডেশন আয়োজিত ইসলামী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগ নামে যে সংগঠনটি আছে তাদেরকে নাকি আমরা গালমন্দ করি। তাদেরকে কখনও গালাগালি আমরা করি না। তবে দেশে বিভিন্ন পার্টি এসে মুসলমানদের বিষয় নিয়ে এলোমেলো কথা বলবে তা কখনও মেনে নেয়া যায় না।
হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, এই দেশ থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য দেশী বিদেশী সকল কুফুরী শক্তি ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাচ্ছে। এমনকি দেশে ইসলামী তাহযীব, তামাদ্দুনের প্রচার-প্রসার,তাফসীর মাহফিল ও ইসলামী সম্মেলন তথা ইসলামের পক্ষে কথা বলা সকল মাধ্যমকে সংকুচিত করার জন্য একটি শক্তি সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় মুসলমানদের ক্ষীণ মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ নোমানী ও মাওলানা জাহাঙ্গীর মেহেদী যৌথ সঞ্চালনায় উক্ত ইসলামী সম্মেলনে সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন আল্লামা শামসুল আলম, আল্লামা হাফেজ আহমদুল্লাহ, মাওলানা নোমান ফয়জী, মাওলানা সাজেদুর রহমান, মাওলানা আজিজুর হক আল মাদানী, মাওলানা মুহাম্মদ শফী, মাওলানা সলিম উল্লাহ, মুফতী সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সাথে ইসলামের সম্পর্ক মদিনায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হিজরতের পূর্ব থেকে। অতএব দেড় হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, তথা তাহযীব তামাদ্দুনকে ধ্বংস করার সুযোগ কোন অপশক্তিকে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে আমরা না খেয়ে থাকতে পারি, বুকের তাজা রক্ত ভাসিয়ে দিতে পরি, কিন্তু ঈমান থেকে বিচ্যুত হতে পারিনা। এ দেশের ওলামায়ে কেরাম রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ও জাগতিক স্বার্থে কোনো কর্মসূচি দেননি। যখনই ইসলামের উপর আঘাত এসেছে, আল্লাহর আস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তার পরিবারকে কটাক্ষ করা হয়েছে তখন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঘরে বসে থাকতে পারেনি।
বক্তারা আরো বলেন, দেশে চলমান গুম-খুন, অত্যাচার অবিচার ইভটিজিং, নারী নির্যাতনসহ সকল অপরাধ থেকে দেশকে বাঁচাতে চাইলে দেশ পরিচালনাসহ সকল ক্ষেত্রে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে।
গতকাল বিকেলে উক্ত মহাসমাবেশে দুপুর থেকে হাটহাজারী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল সহ বিভিন্ন স্থান থেকে শতশত ধর্মপ্রাণ মুসলমান দলে দলে পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার লিফলেট নিয়ে জিপ, সিএনজি অটো-ট্যাক্সি ও পায়ে হেঁটে সম্মেলনে অংশ নেন। তবে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এ সম্মেলন শান্তি পূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। সম্মেলনস্থলে আগতরা নাশকতা করবে এমন আশঙ্কায় সম্মেলনস্থল ছাড়াও বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছিল পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ৩ শতাধিক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।
বক্তব্য শেষে প্রধান অতিথি আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী দেশ জাতি ও ইসলামের কল্যাণে এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আন্দোলনে গত ৫ ও ৬ মে সহ শহীদ হওয়া শহীদগণের মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের সুস্বাস্থ্য কামনা ও মজলুম কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তির জন্য দোয়া করেন।