শাপলা চত্বরের বর্বর হামলার ঘটনা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না
হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে ঘুমন্ত আলেমদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এখন সেই ঘটনাকে ঢাকা দেয়ার নানা অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু সেই বর্বর হামলার ঘটনা ঢাকার যতই চেষ্টা করা হোক ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন ৫ মের ঘটনাও মানুষের স্মরণে থাকবে। আর যতদিন মানুষ এই ঘটনা স্মরণ করবে ততদিন আওয়ামী লীগ প্রত্যাখ্যাত হবে।
গত বছরের ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজতের অবস্থানের ওপর আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের বর্ষপূর্তিতে গতকাল সোমবার সেই ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ঢাকা মহানগর হেফাজত আয়োজিত আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানে হেফাজত নেতারা এসব কথা বলেন।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও ঢাকা মহানগরীর আহবায়ক আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে রাজধানীর বারিধারা মাদরাসায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আবদুর বর ইউসুফী, যুগ্ম সদস্য সচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, অধ্যাপক মাওলানা আবদুল করীম, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা শফিক উদ্দীন, মাওলানা শেখ লোকমান হোসেন, অধ্যাপক এহতেশাম সরওয়ার, প্রচার বিভাগের সদস্য মাওলানা ওয়ালীউল্লাহ আরমান, মুফতী আবদুল মালেক, মাওলানা রেজাউল করীম প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে নুর হোসাইন কাসেমী বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩দফা দাবি ঈমান আকিদা হেফাজত এবং দেশে শান্তি ও নিরাপত্তার বিধানের জন্য। ঈমান আকীদা হেফাজতের ব্যাপারে কোন আপোষ নেই। এই প্রশ্নে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি দেশে ভোট হয়নি। এই সরকার মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষ তাদের এই এই মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেই। হেফাজতের আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য হেফাজতের আমীর ও তার ছেলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি জুলুম অত্যাচার পরিহার করে ন্যায়ের পথে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, দেশ আজ ভারতীয় আগ্রাসনের শিকার। এই আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।
মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, ৫ মে রাতে আওয়ামী লীগ সরকার ঘুমন্ত আলেমদের ওপর গুলী চালিয়েছিল, গণহত্যা চালিয়েছিল। হত্যাকা-ের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে মুক্তি পাবেন না। জনরোষ আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে। জনগণ এসবের জবাব দেবে। কবে জবাব দেবে জানি না। তিনি বলেন, আজকের সরকার ভোটারবিহীন নির্বাচনের সরকার এই সরকারকে বৈধ সরকার বলার কোন সুযোগ নেই। জনগণ ফুঁসে আছে। যথাসময়ে সরকারের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। তখন এই সরকারের কী পরিণতি হবে তা তারা দেখতে পাবে।
অধ্যাপক মাওলানা শফিক উদ্দিন বলেন, ৫মে শাপলা চত্বরের ঘটনা ঢাকার জন্য সরকার অনেক কিছু করছে। কিন্তু সেই ঘটনা মুছে যাবে না। মিথ্যাচার করে পার পাওয় যাবে না। গুলী করে বন্দুকের নল দিয়ে কিছুদিন ক্ষমতায় থাকা যায় , গণরোষ থেকে বাঁচা যায় না। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, শাপলা চত্বরের ঘটনা ততদিন বেঁচে থাকবে। মানুষের মধ্যে ক্ষোভের আগুন জ¦লছে। একদিন এই আগুন দাউ দাউ করে জ¦লে উঠবে।
মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী বলেন, ৫ মে ভারতের ইশারায় শাপলা চত্বরে আলেমদের ওপর আওয়ামী লীগ গুলী চালিয়েছিল। সেই দিনটি মানুষ কেয়ামত পর্যন্ত স্মরণ করবে। আবু জেহেল আবু লাহাবকে মানুষ যেভাবে ঘৃণা করে শেখ হাসিনার সরকারকেও সেভাবে ঘৃণা করবে।
অধ্যাপক আব্দুল করিম বলেন, ৪৫ বছর পর স্বাধীতা বিরোধীদের বিচার হতে পারলে ১০০ বছর পর হলেও শাপলা চত্বরে হত্যার বিচার হবে।
মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, যারা ৫ মে হত্যাকা- চালিয়েছে তাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়েই তারা ৫ জানুয়ারি তৈরির নির্বাচনী প্রহসন তৈরি করেছিল। ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনাকে মানুষ যতদিন স্মরণ করবে আওয়ামী লীগ ততদিন প্রত্যাখ্যাত হবে। আলোচনা শেষে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী দোয়া পরিচালনা করেন।
নেজামে ইসলাম পার্টি
হেফাজতে ইসলামের ৫ মে’র ঐতিহাসিক ঢাকা অবরোধ ও শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে নেজামে ইসলাম পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, গত বছরের ৫ মে-এর হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ ও শাপলা চত্বরের সমাবেশ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে যে, এদেশের সকল ইসলামী দল, সংগঠন ও তৌহিদী জনতা প্রয়োজনের তাগিদে যেকোন সময় ঐক্যবদ্ধ হতে পারে । মহানবী (সা.) সম্পর্কে কোনো প্রকার ব্যঙ্গাত্মক, অরুচিকর ও অবমাননাকর উক্তি বরদাশত করা হবেনা। এর জন্যে দায়ী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি সংবলিত আইন প্রণয়ন করতে হবে। তৌহিদী জনতা মহানবীর (সা.) মর্যাদার পতাকাকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে আপসহীন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার এবং প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। ইসলামের নিশান-বরদার ইসলামী, দল, সংগঠন ও তৌহিদী জনতা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও যে সংগ্রামের প্রতি বিশ্বস্ত ও অবিচল, তাও এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। হেফাজত যেভাবে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ও চেতনাকে নাড়া দিয়েছে, সে-কথা এদেশের জনগণ চিরদিনই বিস্ময় ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুর রশিদ মজুমদারের সভাপতিত্বে এবং মহানগর সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবদুল কাইয়ূমের পরিচলনায় অনুষ্ঠিত সভায় হেফাজতের ঢাকা অবরোধ ও মহাসমাবেশের বিভিন্ন দিকের ওপর আলোকপাত করে আরো বক্তব্য রাখেন মহাসচিব মাওলানা মোঃ আবদুল লতিফ নেজামী, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা শেখ লোকমান হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এ কে এম আশরাফুল হক, প্রচার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাওলানা মোঃ শওকত আমীন (পীর সাহেব বিবাড়িয়া), দফতর সম্পাদক মোঃ ওবায়দুল হক, হাফেজ মাওলানা আবদুল বাতেন, ইসলামী যুব সমাজের মহাসচিব মাওলানা ইসমাঈল বুখারী, মাওলানা আনোয়ার হোসেন, মাওলানা নুরুজ্জামান ও মোঃ মণির হোসেন প্রমুখ।
ইসলামী আন্দোলন
গতকাল সোমবার বিকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে ৫ মে শাপলা চত্বর ট্রাজেডির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিল-পূর্ব আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর সভাপতি অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পুরানা পল্টনস্থ আইএবি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আমীরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন। বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, ঢাকা মহানগর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, ছাত্রনেতা মু. আরিফুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ফজলুল হক মৃধা, শ্রমিক নেতা ডা. শহিদুল ইসলাম, হারুন অর রশিদ, ঈমান উদ্দিন, মাওলানা এইচ এম সাইফুল ইসলাম, শাহআলম মানিক, নাযির আহমদ শিবলী, মুফতী ফরদি উদ্দন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম প্রমুখ।