জাগ্রত টাওয়ার হ্যামলেটস এর সভায় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ
মেয়র লুৎফুর রহমানকে জয়যুক্ত করুন
আসন্ন ২২মে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচনে বিশিষ্ট উলামায়ে কেরাম ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ন্যায় সমঅধিকার ও উন্নয়নের স্বার্থে মেয়র লুৎফুর রহমানের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং ঘৃণা বৈষম্য ও বিভাজনকে প্রত্যাখ্যান করে লুৎফুর রহমানকে মেয়র হিসেবে পূননির্বাচনের আহ্বান জানান।
গত ৪ঠা মে পূর্ব লন্ডনের ওয়াটার লিলিতে জাগ্রত টাওয়ার হ্যামলেটস এর আয়োজনে এক বিরাট জনসভায় উলামায়ে কেরাম, মসজিদের ইমাম, ইসলামিক টিচার্স, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন নির্বাচনী ওয়ার্ড থেকে আগত মুরব্বীগণ সকলের প্রতি এ আহ্বান জানান। তারা বলেন, এককালের পিছিয়ে থাকা টাওয়ার হ্যামলেটস শিক্ষা, উন্নয়ন ও আবাসনের ক্ষেত্রে জাতীয় মূল্যায়ন তালিকার উচ্চতর গ্রীডে স্থান লাভ করেছে। বর্ণবাদ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে টাওয়ার হ্যামলেটস আজ সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের নিরাপদ চয়েস হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বরাবরই একশ্রেণীর লোক উন্নয়ন ও কমিউনিটি কোহেশনকে বাঁকা চোখে দেখে একে বাধাগ্রস্থ করতে নিন্দনীয় কুটকৌশলের আশ্রয় নেয়। কমিউনিটিকে বিভক্ত করে তাদের হীন কোটারী স্বার্থ হাসিল করতে চায়। বিগত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে মেয়র নির্বাচনের মত এবারও এই নিন্দনীয় কাজে জাতীয়ভাবে বিদ্ধেষ ও বৈষম্যের উস্কানিদাতাদের সাথে স্থানীয়ভাবে কিছু সংখ্যক পদ ও অনুগ্রহ লোভী যোগ দেয়। উলামায়ে কেরাম ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ বলেন, ধর্ম বিশ্বাস ও গাত্র বর্ণের কারণে আমাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করা হয়। নির্বাচনের বেলায় আমাদেরকে আলোচনার টার্গেট বানানো হয়। এতে কমিউনিটিতে শংকা ও উদ্বেগের জন্ম নিয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই। তারা বলেন, আমারা লক্ষ করেছি, আলেম সমাজ, মসজিদ এবং কাবা শরীফের ইমামকে বারবার অপ্রাসঙ্গিকভাবে নোংরা রাজনীতির বিষয় হিসেবে টেনে আনা হচ্ছে। আমরা এর নিন্দা জানাই এবং টাওয়ার হ্যামলেটস এর অধিবাসীদেরকে মেয়র লুৎফুর রহমান এবং তার টীমকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানাই।
কাউন্সিল অব মস্কস এর চেয়ারম্যান হাফিজ মাওলানা শামছুল হক এর সভাপতিত্বে ও “জাগ্রত টাওয়ার হ্যামলেটস” এর অন্যতম নেতা মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদের পচিালনায় অনুষ্ঠিত এ জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটস এর নির্বাহী মেয়র জনাব লুৎফুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন “জাগ্রত টাওয়ার হ্যামলেটস” এর অন্যতম আহ্বায়ক অধ্যাপক মাওলানা আবদুল কাদির সালেহ। বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি নেতা সিরাজ হক, বিশিষ্ট সাংবাদিক কেএম আবু তাহের চৌধুরী, সাবেক এমপি এডভোকেট মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী, রাজনীতিবিদ সৈয়দ নুরুল ইসলাম দুলু, ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর অহীদ আহমদ, রাজনীতিবিদ মাওলানা শুয়াইব আহমদ, ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, কবি দবিরুল ইসলাম চৌধুরী, মাওলানা রশীদ আহমদ, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, ইসলামী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুফতি আবদুল মুনতাকিম, বায়তুল আমান মসজিদের চেয়ারম্যান আলহাজ্জ্ব শামসুল হক, মাওলানা সৈয়দ মুশাররফ আলী, মাওলানা আবদুর রব, কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী, মাওলানা সৈয়দ তামিম আহমদ, হাফিজ হুসাইন আহমদ বিশ্বনাথী, মাওলানা শাহ মিজানুল হক, মাওলানা হাফিজ নাজির উদ্দিন, মাওলানা আশফাকুর রহমান, মাওলানা আবদুল করীম, মুফতী বুরহান উদ্দিন, মাওলানা নুফাইছ আহমদ, মাওলানা আবুল হাসানাত চৌধুরী, ও আলহাজ্ব কলা মিয়া প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র লুৎফুর রহমান তাঁকে সমর্থন ও সাহস যোগাবার জন্যে উলামায়ে কেরামের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং জীবনের সকল পর্যায়ে সত্য, ন্যায়, সততা ও ঈমানের পথে অবিচল থাকার জন্যে তাঁদের দোয়া কামনা করে বলেন, আমি এই টাওয়ার হ্যামলেটস এ ছোট থেকে বড় হয়েছি। আমি দেখেছি, আমাদের পূর্ব পুরুষদের টিকে থাকা ও বেঁচে থাকার সংগ্রাম কতো কঠোর ছিল। আমি চাই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি নিরাপদ ও উন্নয়ন সহায়ক বারা হিসেবে উপহার দিতে। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমি সকলের জন্য সমানভাবে আমি কাজ করতে চাই, আমার ধর্ম বিশ্বাস ও আমার বাঙ্গালিত্ব আমার অহংকার। একে জলাঞ্জলি দিয়ে সুবিধা হাসিল করাকে আমি উন্নয়ন মনে করি না। গত নির্বাচনে এই বারার জনগণ আমাকে যে ভালোবাসা ও সমর্থন দিয়েছেন তা আমি জীবনে কখনো ভুলবোনা। আমি আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। সর্বদাই আমার ভোটারদের নিকট নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করি। যারা আমাদের মধ্যে বিভিক্তির বাণী শোনাচ্ছেন তারা অতীতেও সফল হননি আজও হবে না। আমি আপনাদের সন্তান হিসেবে আবারও আপনাদের সেবা করার সুযোগ চাই।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা শামছুল হক বলেন, আলেম সমাজ সব সময়ই চায় সমাজে শান্তি ও সোহার্দ্য বজায় থাকুক এবং মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় হোক। কিন্তু কেউ যখন উদ্দেশ্যমূলকভাবে আলেমদের টার্গেট করে, মসজিদগুলোকে বিতর্কের মধ্যে আনতে চায়, তখন এর প্রতিবাদ করা আমাদের নৈতিক ও ঈমানী দায়িত্ব বলে মনে করি। আমরা দ্ধ্যার্থহীন ভাষায় বলতে চাই ধর্ম মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরী করেনা বরং সকলেই এক আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে মৈত্রীর সেতুবন্ধন তৈরী করে। সত্য, ন্যায় এবং ধর্ম বিশ্বাস নিয়েই আগামী নির্বাচনে লুৎফুর রহমানকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানাই।
স্বাগত বক্তব্যে মাওলানা আবদুল কাদির সালেহ বলেন, আমাদেরকে নিয়ে যারা নোংরা রাজনীতি করতে চান তাদের প্রতি জোড়ালো প্রতিবাদ হিসেবেই আমরা জাগ্রত টাওয়ার হ্যামলেটস গঠন করেছি। বলতে চাই আমরা জেগে আছি, জেগে থাকবো। ধর্ম আর বর্ণের সস্তা দোহাই দিয়ে আমাদেরকে আর ঘরে বসিয়ে রাখা যাবে না। তিনি বলেন, “আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো”, কথাটি যথার্থ, তবে তা হওয়া উচিত কমিউনিটির বৃহত্তর স্বার্থ ও নিজেদের আত্ম মর্যাদা সমন্নত রাখার স্বার্থে।
কমিউনিটি নেতা সিরাজ হক বলেন, যারা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত মেয়র সিস্টেম চাননি, তারা এখন ঐ পদের জন্যে সরাসরি নির্বাচিত হতে ভোট চাইতে আসছেন। এটা নৈতিকভাবে তাদের জন্য ঠিক না। জনমতের বিরোধিতা করে জনমত চাইতে আসা সুবিধাবাদী চরিত্রের বহি:প্রকাশ। এবারের নির্বাচনে আমরা সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।
কেএম আবু তাহের চৌধুরী বলেন, আমাদের কমিউনিটির সাফল্য ও অগ্রযাত্রাকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য মিথ্যা প্রোপাগান্ডার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। আমরা কোন ভাবেই মিথ্যার সাথে আপোষ করবো না। লুৎফুর রহমান আমাদের গর্ব ও যোগ্য প্রতিনিধি। তিনি সহ তাঁর পুরো টীমকে নির্বাচিত করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
মাওলানা শাহীনুর পাশা বলেন, মেয়র লুৎফুর রহমান টাওয়ার হ্যামলেটস এর হলেও সারাবিশ্বে তার দৃঢ়তা ও দক্ষতার খবর পৌঁছে গেছে। আমার যত আত্মীয় স্বজন ও পরিচিতজন আছেন সবাইকে আমি ন্যায় ও সততার পক্ষে তাঁকে ভোট দেয়ার কথা বলেছি।
বিশিষ্ট রাজনীতিক সৈয়দ নুরুল বলেন, বর্ণবাদ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যে কমিউনিটিকে আমরা দাঁড় করিয়েছি, আমাদেরকে বিদ্ধেষ ও বিভক্তিতে ফেলে যারা এ বিজয়কে নস্যাত করতে চায় আগামী নির্বাচনে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
মাওলানা শুয়াইব আহমদ বলেন, মেয়র লুৎফুর রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে যে হীন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, তা আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। আমিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন লুৎফুর ভাই যোগ্যতা, দক্ষতা ও সকলের সাথে অমায়িক ব্যবহারের কারণে মেয়র পদের জন্য এ প্রজন্মের যোগ্য প্রতিনিধি। আমরা বিশ্বাস করি তিনি কমিউনিটিকে আরো বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
মুফতি আবদুল মুনতাকিম বলেন বাস্তবতা আজ প্রমাণ করছে যে মেয়র লুৎফুর রহমান আপামর জনতার হৃদয়ের স্পন্দন। যেখানে তাঁর সফলতার চিহ্ন সর্বত্র সুস্পষ্ট, সেখানে ভোট ব্যংক বিক্ষিপ্ত করার মধ্যে দিয়ে কমিউনিটির অর্জিত সাফল্য কে ধ্বংস করে ফেলা হবে এটা ভয়াবহ ও অপরিণামদর্শী। মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ বলেন মেয়র লুৎফুর রহমান উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সাফল্যের প্রতীক। তাঁর মার্জিত চরিত্র ও উন্নত রুচিবোধই তাঁকে নেতৃত্বের উচ্চ আসনে সমাসীন করেছে, করবে।