বৃটিশ নাগরিক মুজিব নিখোঁজের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
প্রবাসীরা দেশের আত্মীয় স্বজন নিয়ে উদ্বিগ্ন
বাংলাদেশ একটি কঠিন সময় পার করছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির সম্মুখিন। আইনের শাসন বলতে গেলেন পুরোপুরি নির্বাসিত। প্রতিদিনের হত্যা, গুম আর অপহরণের ঘটনা দেশবাসি যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনি আমরা যারা প্রবাসে বসবাস করছি দেশে রেখে আসা আত্মীয় স্বজন নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছি।
মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের সোনারগাঁও রেষ্টুরেন্টে যুক্তরাজ্য বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। যুক্তরাজ্য যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র অন্যতম উপদেষ্টা মুজিবুর রহমান মুজিব ও তার গাড়ি চালককে নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুসের সভাপতিত্বে সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করনে সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ ।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আবদুল হামিদ চৌধুরী, আবুল কালাম আযাদ, তৈমুছ আলী, মুজিবুর রহমান, আনোয়ার হোসেন খোকন, নাসিম আহমদ চেনধুরী, হেলাল নাসিমুজ্জামান, সাদিক মিয়া, হাবিবুর রহমান ময়না , মিছবাহুজ্জামান সোহেল, মোকাদ্দেম চৌধুরী নিয়াজ, আবদুর বাছিত বাদশাহ, মঞ্জুর আশরাফ খান, শেখ আলী আহমদ, আফজাল হোসেন, আহমেদ চৌধুরী মনি, দেওয়ান আবদুল বাছিত ।
দেশে স্বৈরতন্ত্র চলছে উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর আহমদ বলেন, গণতন্ত্রের নামে চলছে একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র। এক ব্যক্তির ইচ্ছার উপর সব কিছু নির্ভর করছে। আজকাল ঘর থেকে বের হলেই যাদের সঙ্গে দেখা হয়, পরিচিত-অপরিচিত, সবার মুখে একই প্রশ্ন, কোন পথে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি?
কয়ছর আহমদ বলেন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান মুজিব ও তার গাড়িচালক দু’দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। রবিবার সকালে সুনামগঞ্জে বিএনপির গণঅনশন কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। কর্মসূচি শেষে বিকাল ৪টায় শহরের হাজিপাড়া আবাসিক এলাকা থেকে প্রাইভেটকার নিয়ে তিনি সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার ব্যবহৃত ৩টি মোবাইলে যোগাযোগ করলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরিচিত সকল আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ করেও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
বিরোধীদলের উপর নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার বিরোধী দলকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করতে বর্তমান ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠী এতটাই সীমালংঙ্ঘন করেছে যে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদেরকে পৈশাচিকভাবে হত্যা ও অপহরণ করে গুম করা যেন তাদের দৈনন্দিন কর্মসূচি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই সব জীবনবিনাশী অপকর্মে শাসকগোষ্ঠী নিজেদের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগ ছাড়াও পুলিশ-র্যাবকে ঘাতক বাহিনীতে পরিণত করে ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। মানুষ এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। গুম, হত্যা ও অপহরণ সহ নানা অপকর্মে দেশকে একটি অরাজকতায় দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার। রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে অবৈধ এই সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে । প্রতিদিন দেশজুড়ে গুম ও হত্যার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশের সকল বাংলাদেশী ভাই ও বোনরা।
বৃটিশ নাগরিক গুমের ঘটনা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে কয়ছর আহমদ বলেন, প্রবাসীরা বাংলাদেশে গিয়ে নানা ধরণের হয়রানী ও নির্যাতনের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। তবে, এবারেই প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ বাংলাদেশী ব্যক্তি গুম হয়েছেন আর এতেই পুরো বৃটেন প্রবাসীরা বিস্মিত। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় প্রবাসীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। অতি শীঘ্রই মুজিবুর রহমান মুজিবের হদিস না দিলে সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সব ধরণের আন্দোলন শুরু করা হবে এই বৃটেন থেকে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য বিএনপি এই গুমের ঘটনায় বৃটেনের শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে অবগত করছে। বৃটেনের অন্যতম প্রভাবশালী অল পার্টি পার্লামেন্টের চেয়ার এ্যান মেইন এমপির সাথে সাক্ষাত করে এই বিষয়ে অবগত করা হয়। সাক্ষাতকালে এ্যান মেইন এমপি এই বিষয় নিয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ব্রিটিশ নাগরিক গুমের এই ঘটনায় ইতিমধ্যে বাংলাদেশস্থ বৃটিশ হাই কমিশনারের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও যুক্তরাজ্য বিএনপি’র উপদেষ্টা মুজিবুর রহমান মুজিব ও তার গাড়ি চালককে দ্রুত ফিরিয়ে দেবার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।