স্বামীর জন্মদিনে হেলিকপ্টার উড়িয়ে সারপ্রাইজ
সম্প্রতি স্বামীর জন্মদিনে হেলিকপ্টার উড়িয়ে সারপ্রাইজ দিতে কক্সবাজার পৌঁছেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী তিশা। দেশের শোবিজ তারকাদের জীবনের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। ফারুকী-তিশা, এ যেন বিষাদ রাজ্যের হাসিমুখ দম্পতি। তাদের নিয়ে লিখেছেন সোহেল অটল।
এটা অবশ্যই বিরল ঘটনা।
দেশে তারকার অভাব নেই। তাদের দাম্পত্য জীবনও চলমান। কিন্তু শোবিজ তারকাদের দাম্পত্য জীবন যেন কচুপাতার পানি। ঠিক গায়ে মাখে না। কিংবা, গায়ে মাখলেও আমজনতা তা ঠাওরে উঠতে পারেন না।
সেই বিষাদ গাথা থেকেই যেন মুক্তি দিলেন নির্মাতা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী ও তিশা। এই তারকা দম্পতি ভালোবাসাবাসির এক অনন্য নজির দেখালেন। হ্যাঁ, অনন্যই বটে! কারণ এর আগে কোনো তারকাকে এমন করে ভালোবাসা প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। অথচ ফারুকীর জন্মদিনে তিশা হেলিকপ্টার উড়িয়ে যেটা করলেন, আমরা যেন তেমন কিছুর আশায়ই ছিলাম।
সে দিন ছিল ফারুকীর জন্মদিন। গত ২ মের ঘটনা। বিজ্ঞাপন নির্মাণের কাজে তিনি ছিলেন কক্সবাজার। সৈকতে সেট ফেলে চলছে শুটিং। মনের মধ্যে জন্মদিনে বউ ফেলে দূরে থাকার কষ্ট তো কিছু ছিলই। তিশা ছিলেন ঢাকা।
ফারুকীর কষ্ট মুহূর্তে উল্লাসে পরিণত হয় বেলা ১টার দিকে। সৈকতে শুটিং এরিয়ার মধ্যে ধূমকেতুর মতো নেমে আসে হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসা নারীর অবয়ব দেখে চমকিত ফারুকী মনিটর থেকে চোখ তুলে তাকান। ‘হেলিকপ্টারে মেয়ে কেন!’ বলে চিৎকার দেন। পরক্ষণেই বুঝতে পারেনÑ এ মেয়ে আর কেউ নন, তার বউ তিশা। ‘আরে, এ দেখি আমার বউ’ বলে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন তিশাকে।
ফারুকীর আনন্দ অনুমেয়। নিশ্চয়ই সেটা অপরিসীম ছিল। কারণ তিনি জানতেন না তিশা এমন কাণ্ড করবেন। পরে সৈকতে কেক কেটে শুটিং টিমের সবাই এই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন নিজেদের মধ্যে।
স্বামীর জন্মদিনে তিশা যা করলেন, তা অনেকটাই নাটক-সিনেমার গল্পের মতো। বাস্তবে এমনটা ঘটতে দেখা যায় না। আর আমাদের শোবিজ তারকাদের জীবনে তো নয়ই। তারকাদের জীবন যেন রহস্যময়তায় ঘেরা। সে রহস্যময়তার মধ্যে ‘অনেক কিছু’র আলামত থাকলেও, প্রেমের আলামত খুঁজতে বেগ পেতে হয়। তারকাদের দাম্পত্য জীবন নিয়েও সাধারণের মধ্যে নানা প্রশ্ন থাকে। সেসব প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তর সাধারণত পাওয়া যায় না। তিশা-ফারুকী দম্পতি যেন সেই দমবন্ধ অনুভূতি থেকে বাঁচালেন। তারা প্রমাণ করলেন, তারকাদেরও মন আছে, তারাও ভালোবাসতে জানেন। ভালোবাসার বার্তা নিয়ে ছুটে যেতে পারেন হেলিকপ্টারে ওড়ে।
হেলিকপ্টারে উড়ে গিয়ে ফারুকীকে সারপ্রাইজ দেয়ার মধ্যে এক ধরনের গল্প আছে। হেলিকপ্টার ভাড়া করে মনের কথা মনের মানুষকে বোঝানোর মতো আর্থিক সঙ্গতি অনেক তারকারই আছে। কিন্তু মনের সঙ্গতি? আর হেলিকপ্টারে উড়ে গিয়ে ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ বলার মধ্যে এক ধরনের সিনেম্যাটিক রোমান্টিসিজম থাকে। সেটা অনুধাবন করতেও একটা মন লাগে। মনের পরীক্ষায় তিশা এবার বোধহয় ফারুকীর কাছে এক শ’তে এক শ’ই পেলেন!
মাঝে-মধ্যেই আমরা হলিউড-বলিউড তারকাদের বাঁধনহারা প্রেমের গল্প শুনি। আমাদের প্রেমের গল্পগুলো জলেই ডুবে থাকে। প্রেমের গল্প মন খুলে বলার মতো সৎসাহস এখনো তৈরি হয়নি আমাদের তারকাদের। এই সমাজও সেটা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার মতো সাবালক হয়নি। সব মিলিয়ে তারকাদের প্রেমের গল্প কখনোই তারা মন খুলে বলতে পারেন না। মন খুলে, দশজনকে দেখিয়ে ভালোবাসাবাসি করতে পারেন না। সেটা সম্ভব হয় শুধু বিয়ে-শাদি করার পরই। সমাজ স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসাবাসি মেনে হয়। আমাদের পোড়া কপাল, বিয়ের পর তারকারা বদলে যান। কারো ঘর ভাঙে। কারো ঘরে বলার মতো গল্প থাকে না। তারকা দম্পতির ভালোবাসাবাসি আমাদের দেখাও হয় না। কিছু শেখাও হয় না।
সেই দ্বীর্ঘশ্বাস থেকেই যেন বাঁচালেন তিশা-ফারুকী। ২০১০ সালের ১৬ জুলাই বিয়ে করেন তারা। তার আগে দীর্ঘ দিন প্রেম করেছেন দু’জন চুটিয়ে। বিয়ের পর কেটে গেছে প্রায় চার বছর। বাঙালির বউ চার বছরে পুরনো হয়ে যাওয়ার রীতি আছে। সংসার এক ঘেয়ে হয়ে ওঠার রীতিও আছে। তিশা-ফারুকী সেই সূত্র থেকে যেন আমাদের বাইরে নিয়ে এলেন। এই জন্মদিন তাই শুধু একটা সারপ্রাইজড উৎসবই হয়ে থাকল না। ভালোবাসার, ভালো থাকার পথও বাতলে দিলেন তিশা-ফারুকী।
তিশা-ফারুকীর এই জন্মদিন কাণ্ড নিশ্চয়ই আশপাশের মানুষের ওপরও প্রভাব ফেলবে। শোাবিজ তারকাদের ওপর তো বটেই, সাধারণের ওপরও। পত্রিকার পাতায় তিশার হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসা, ফারুকীকে জড়িয়ে ধরার ছবি দেখে ভালো লাগেনি, এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে। খুব বেশি হিংসুটে না হলে এই ফ্রেম মনের মধ্যে সতেজ বাতাস সঞ্চালন করার কথা। যারা ভালোবাসা প্রকাশে দ্বিধান্বিত, তাদের জন্য টনিক হতে পারে এই ফ্রেম। যারা ভালোবাসাবাসি করতে পারছেন না, তারা নতুন করে চেষ্টা করার কথা ভাবার অবকাশ পাবেন এই ফ্রেম দেখে।
তারকার জীবনে শুধু গল্পকে চিত্রায়ন করার দায়ই থাকে না। কিছু গল্প রেখে যাওয়ার দায়ও থাকে। তিশা-ফারুকী সেই গল্পই রেখে গেলেন সময়ের গায়ে। আর সাধারণের জন্য আরেকটা মেসেজ উন্মুক্ত করলেন। তারকার জীবন মানেই শুধু বিতর্কিত নয়। তারকার জীবনেও ভালোবাসাবাসি থাকে। মাখামাখি থাকে। অন্য দশজনের মতো।
ফারুকী-তিশার এই স্বপ্নময় দাম্পত্য জীবন দীর্ঘ হোক। আর, আরো বেশি শোবিজ তারকার জীবনে এমন আনন্দময় ঘটনা ঘটুক। এমন প্রত্যাশা করাই যায়।