টাওয়ার হ্যামলেটস’র বিজয় ধরে রাখতে পারবে কি বাংলাদেশীরা
অলিউল্লাহ নোমান: ২২ মে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস’র স্থানীয় সরকার নির্বাচন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেও বাংলাদেশের মতো জম জমাট প্রচারণা নেই। মাইকের আওয়াজ নেই। ভোট চাওয়ার গান নেই। রাস্তায় কোন মিছিল নেই। রাজপথে মিটিং নেই। দেয়ালে পোস্টার নেই। রাস্তার মোড়ে মোড়ে নেই নির্বাচনী ক্যাম্প। তার মানে কি নেই কোনো প্রচারণা! প্রচারণা অবশ্য আছে। সেটা একেবারেই নীরবে। ভোটারের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে ইশতেহার। মুখে মুখে জমে উঠেছে প্রচারণা।
মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন পুরো নির্বাচনী এলাকা। ইশতেহারে ঘোষণা করেছেন আগামী দিনের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ভোটারদের। স্বপ্নে আকৃষ্ট হয়ে ভোটাররা সমর্থন দেবেন এই প্রত্যশা প্রার্থীদের। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এই কাউন্সিলে গত নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন একজন বাংলাদেশী। অর্থাত্ বাংলাদেশী বংশদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক লুত্ফর রহমান। পেশায় আইনজীবী। তিনি ব্রিটিশ লেবার পার্টির সদস্য ছিলেন। গত নির্বাচনে পার্টি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচন করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে। ভোটাররা তাকে করেছিলেন। এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবেই নির্বাচন করছেন লুত্ফর রহমান। প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে তার টিম থেকে। এবার বিজয় ধরে রাখতে পারবেন কিনা সেই দিকে সবার নজর। কারন লেবার পার্টি এবার মরিয়া হয়ে প্রচারণায় নেমেছে। প্রচারণায় যোগ দিয়েছে পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় নেতা অ্যাড মিলিবান্ড।
টাওয়ার হ্যামলেটস-এ নির্বাহী মেয়র প্রার্থীর সংখ্যা ১০ জন। বর্তমান মেয়র লুত্ফর রহমান, লেবার পার্টির জন গিবস, কনজাভেটিভ পার্টির প্রার্থী ক্রিস্টোফর ইউলফোর্ড, লিবারেল ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী রীতেন্দ্র ব্যানার্জি, ইউকে ইন্ডিপেন্ডেট পার্টির প্রার্থী নিকোলাস ম্যাককুইন, গ্রিন পার্টির প্রার্থী ক্রিস স্মিথ, ট্রেড ইউনিয়নিস্ট অ্যান্ড সোসালিস্ট কোয়ালিশন পার্টির প্রার্থী হিউগো পিয়েরে, স্বতন্ত্র প্রার্থী লন্ডনে চ্যানেল আই’র পরিচালন ও উপস্থাপক রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী সোয়েব, ব্যবসায়ী খোয়াজ আলী খান ও হাফিজ আবদুল কাদির নির্বাহী মেয়র পদে ভোটের লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছেন।
প্রর্থাীর সংখ্যা যাই হোক, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বর্তমান মেয়র লুত্ফর রহমান এবং লেবার পার্টির জন গিবসের মধ্যে। যদিও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থী লুত্ফর রহমানসহ ৪ জন। তাতে কিছু যায় আসে না। লুত্ফর রহমানের জনপ্রিয়তা এখনো তুঙ্গে। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অত্যন্ত সাদলাপি, ভদ্র এবং বিনয়ী লুত্ফর রহমান। সততা এবং কর্মনিষ্ঠায় তার তুলনা হয় না, এই হচ্ছে ভোটারদের অভিমত। কর্ম, সততা, আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠা দিয়ে তিনি মানুষের মন জয় করেছেন। গত কয়েক মাস আগে থেকে তার বিরুদ্ধে নানামুখী অপপ্রচারের চেষ্টা চালানো হয়। বিবিসি প্যানরোমা পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে লেগেছিল। আনা হয়েছিল সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ। তবে এসব অপপ্রচারের পালে হাওয়া লাগেনি। দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। মেয়র লুত্ফর রহমান সেই অভিযোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি স্বচ্ছতার পরীক্ষা দিতে চেয়েছেন অভিযোগের বিরুদ্ধে। ভোটাররা বলেন এখানেই মেয়র লুত্ফর রহমানের শ্রেষ্ঠত্ব।
ভোটররা নানা হিসাব নিকাশ করছেন। গত টার্মে লুত্ফর রহমানের কার্যক্রম নিয়েও চলছে নানা হিসাব নিকাশ। কাউন্সিলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসনসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করছেন ভোটাররা। এদিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন লুত্ফর রহমান। তার উদ্যমী ভূমিকায় টাওয়ার হ্যামলেটস শিক্ষায় অনেক এগিয়েছে। এক সময় শিক্ষায় তুলনামূলক পিছিয়েছিল এই কাউন্সিল। স্কুলগুলোর ফলাফল আগের যে কোনো বছরের তুলনায় ভালো করছে।
প্রত্যেকা প্রার্থী যার যার মতো করে এলাকায় এলাকায় মতবিনিময় সভা করছেন। ভোট চাইছেন। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হচ্ছে। গত ৪ মে ‘জাগ্রত টাওয়ার হ্যামলেটস’ নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছিল। এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন স্তরের মানুষ। আলেম, ওলামা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক থেকে শুরু করে প্রবাসী বাংলাদেশীরা উপস্থিত ছিলেন। এরকম বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন মতবিনিময় সভার মাধ্যমে লুত্ফর রহমানের পক্ষে ভোট চাইছেন। ধরে রাখতে চাইছেন টাওয়ার হ্যামলেটস্’র নির্বাহী মেয়রের চেয়ারটি। তারপরও অনেকে প্রশ্ন করেন বিজয় ধরে রাখতে পারবে কি বাংলাদেশীরা!
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত।