লন্ডনে টিউব স্টেশনে অবৈধ অভিবাসী ধরার অভিযান
লন্ডনে অবৈধ অভিবাসীদের উদ্দেশে বিতর্কিত ‘দেশে ফিরে যাও’ প্রচারাভিযানের পর এখন শুরু হয়েছে গণপরিবহনের যাত্রীদের আকস্মিক পরিচয়পত্র যাচাইয়ের অভিযান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লন্ডনের ভূতল পরিবহন—লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডের কেনসাল গ্রিন স্টেশনে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ দপ্তর (ইউকে বর্ডার এজেন্সি) একদল পোশাকধারী কর্মকর্তা আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করেন। গত বুধবার সকালে পূর্ব লন্ডনের স্ট্রাটফোর্ড স্টেশনেও একই ধরনের অভিযান পরিচালিত হয়।
ওই কর্মকর্তারা সন্দেহভাজনদের পরিচয়পত্র ও অভিবাসনের কাগজপত্র যাচাই করতে শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক টুইটারে এই অভিযানের ছবি দিয়ে অনেক প্রত্যক্ষদর্শী সেখানে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কথা বলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই সব কর্মকর্তা শ্বেতাঙ্গদের বিষয়ে তেমন একটা আগ্রহী ছিলেন না। মূলত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হন এশীয় ও আফ্রিকা ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূত যাত্রীরা। স্থানীয় পত্রিকা কিলবার্ন টাইমস জানিয়েছে, এসব কর্মকর্তা ছিলেন উত্তেজিত ও ভীতিকর এবং তাঁরা শুধু অশ্বেতাঙ্গদেরই লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিচ্ছিলেন।
ইউকে বর্ডার এজেন্সি এর আগে অবৈধ অভিবাসী শ্রমিক-কর্মচারীদের খুঁজে বের করতে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করলেও কোনো রেল বা বাসস্টেশনে এ ধরনের অভিযান চালাতে দেখা যায়নি।
ব্রিটেনের সরকার গত সপ্তাহে ‘দেশে ফিরে যাও, নইলে গ্রেপ্তার করে ফেরত পাঠানো হবে’ লেখা ব্যানার ঝোলানো ভ্রাম্যমাণ মোটরযানে লন্ডনে যে এক সপ্তাহের পরীক্ষামূলক প্রচারাভিযান চালায়, তাতে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দেওয়ার পর এই নতুন মাত্রায় ধরপাকড়ের অভিযান শুরু হয়েছে।
এই প্রচারাভিযানে বর্ণবাদী ঘৃণা ছড়াবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে অনেকেই এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। এমনকি জোট সরকারের শরিক লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা উপপ্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ এই অভিযানের সমালোচনা করে বলেছেন, এটি ব্রিটিশ রাজনীতির সভ্য রীতির বিরোধী। তাঁর আরেক সহকর্মী বাণিজ্যমন্ত্রী ভিন্স ক্যাবল একে একটি নোংরা প্রচারণা বলে অভিহিত করেন। কিন্তু নিক ক্লেগের বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সরকার লন্ডনে পরিচালিত এই পরীক্ষামূলক প্রচারাভিযানকে দেশের সব জায়গায় সম্প্রসারণের কথা বিবেচনা করছে।
এ ছাড়া ওই ভ্রাম্যমাণ ভ্যানের ব্যানারে ‘গত সপ্তাহে ১০৬ জন বেআইনি অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে’ এই তথ্যকে বিভ্রান্তিকর দাবি করে লেবার পার্টির লর্ড লিপসি অ্যাডভার্টাইজিং স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটির কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অন্যদিকে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেন্ট ফোরাম অব ইস্ট লন্ডন তাদের ভাষায় এই বিদ্বেষমূলক প্রচারণা বন্ধের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হবে বলে জানিয়েছে।