রংপুরের চার উপজেলায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন
জালভোট, পদে পদে আচরণবিধি লঙ্ঘন, প্রার্থীর ছবি ও প্রতিকসংবলিত স্লিপ, চেয়ারম্যান প্রার্থী, ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার, বিজিবি প্রার্থী হট্টগোল, কেন্দ্রের বাইরে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সরকার দলীয় প্রার্থী সমর্থক কর্তৃক এজেন্ট বের করে দেয়াসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে সোমবার টানা আট ঘন্টা ভোট গ্রহণ হয়েছে রংপুরের সদর, পীরগাছা, কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়া উপজেলায়। তবে প্রচার প্রচারণায় যে উৎসব ছিল সেই অনুযায়ী ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ভোট পড়েছে বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
সকালের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় আবহাওয়া ভালো থাকায ভোটকেন্দ্রগুলোর আশেপাশে প্রচুর পরিমান লোক সমাগম দেখা গেলেও ভোট কেন্দ্রে ছিল ভোটার উপস্থিতি কম। সারা দিন ঝির ঝির করে ভোটাররা আসেন কেন্দ্রে। এরমধ্যে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল বেশী।
সকাল ৯ টা পর্যন্ত কাউনিয়ার হারাগাছ সারাই পোদ্দার পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলামের ছবি ও প্রতীক মোটর সাইকেল প্রতীক দিয়ে স্লিপ দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সেখানকার পিজাইটিং অফিসার আব্দুর রকিব উদ্দিনকে বিএনপিসমর্থিত প্রার্থী মাহফুজার রহমান মিঠুর বড় ভাই নির্বাচন মনিটরিং কমিটির সদস্য আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ করলে প্রিজাইটিং অফিসার বুথে বুথে গিয়ে এ ধরনের স্লিপ আসলে তার ভোট না নেয়ার নির্দেশ দেন। এরপরেও আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে তার ওপর ওই স্লিপে ভোট নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়।একই অভিযোগ করে জাতীয পাটি প্রার্র্থী সামসুল ইসলাম ভরসা বলেন, পুরো উপজেলাতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী এভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। এই ইস্যুতে হারাগাছ বকুল তলা পাটোয়ারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি ও আওযামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ৫ জন আহত হয়।
এ বিষয়ে প্রিজাইটিং কর্মকর্তা আব্দুর রকিব জানান, বিষয়টি হাতেনাতে ধরার পর আমি নির্দেশ দিয়েছি এধরনের স্লিপে ভোট না নেয়ার জন্য। ছোট সাদা কাগজে স্লিপ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়াও ওই কেন্দ্রে প্রার্থীদের অনেক এজেন্টকে মোবাইল ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
এছাড়া কাউনিয়া আহম্মদ আলী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম মায়ার দুলাভাই সাখাওয়াত হোসেনের বাড়ি থেকে প্রত্যেক ভোটারকে ২০০ থেকে ৩০০ করে টাকা দেয়া হয়। বিষয়টি বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে সেখানে অতিরিক্ত আইনশৃংখলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফের নেতৃত্বে সেখানে আইন শৃঙখলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা যায়। এরপর সেখানে আসেন এসপি আব্দুর রাজ্জাক। এসময় সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে।এছাড়া মাছহারি এলাকার একটি ভোট কেন্দ্রে সরকার দলীয় প্রার্থীর লোকজন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর এক কর্মীকে বেধড়ক মারপিট করে।
অন্যদিকে কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল কাদের জিলানী জানান, আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মাসুদ রানাকে পাগলাপীর থেকে গ্রেফতার করা হযেছে।
এদিকে পীরাগাছার জবানোবিশ বালিকা দাখিল মাদ্রারাসা ভোট কেন্দ্রে আওয়ামীলীগ সমথিৃত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন কেন্দ্রে ফুকতে চাইলে পুলিশ তাকে বাঁধা দেয় । এসময সেখানে পুলিশের সাথে তার সমথৃকদের কথাকাটাকাটি হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিম এসে পরিস্থিতি নিযন্ত্রণে আনে। এসময় ছবি ধারন করায় স্থানীয় সাংবাদিক তাজরুল ইসলামের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ছবি ডিলিট করে দেয বিজিবি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর। বেলা ২ টার সময় পীরগাছা ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহেজ্জামান সুমনকে। এছাড়া এই উপজেলার চৌধুরানী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের সাথে জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া ধাওয়ি ও হাতাহাতি হয়। একই ঘটনা ঘটে গাবুড়ার চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। এখানে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর সমর্থকদের সাথে বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। বিকেলে কাশিয়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগসমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়। এনিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করে ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে বিজিবিসহ অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক জানান, অত্যন্ত উৎসব মুখর পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে ভোট পোল হযেছে অনেক কম। বিকেল সাড়ে ৩ টায় পীরগাছা মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিজাইটিং কর্মকর্তা ইয়াকুবুল হাসান বলেন, তার কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৫ টি। এরমধ্যে ১ হাজারন ৬৭১ টি ভোট পড়েছে।
সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট চলে। মোট ২৮৭টি ভোট কেন্দ্রে ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৯২৪ জন ভোটার ছিল। চার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ২৫ জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ২৪ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ১৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ১টিতে ১৯ দল-আওয়ামীলীগ, ২ টি জাতীয় পার্টি ১৯ দল এবং একটিতে জাতীয় পার্টি ও জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনকে নির্বিঘœ করতে চারস্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে চার উপজেলা।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও এডিসি শহিদুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, নির্বাচনকে নির্বিঘœ করতে ৩ হাজার ৪৭০ জন পুলিশ, সাড়ে ৩ হাজার আনছার, ৮ প্লাটুন সেনাবাহিনী, ৮ প্লাটুন বিজি এবং ৫ প্লাটুন র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ১১ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ১১ টি মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের একটি স্থায়ী আদালতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।