মেক্সিকোতে ইসলামের প্রসার

Mexecoদুই দশক আগেও মেক্সিকোতে আগত কোন মুসলিম পর্যটককে হণ্যে হয়ে নামাজের স্থান বা মসজিদ খুঁজতে হতো। এখন এই পরিস্থিতি আর নেই।
১৯৯৪ সালে মেক্সিকোতে আগত মরক্কোর নাগরিক সাইদ লোহাবি ফক্স নিউজ ল্যাটিনোকে বলেন, পরিস্থিতি অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে পরিবর্তন ঘটছে।
১৯৯৪ সালে লোহাবি যখন এখানে আসেন তখন তিনি ও আরও কিছু মুসলমান এখানকার পাকিস্তানী দূতাবাসে নামাজ পড়তে যেতেন। কারণ এখানে কোন মসজিদ, নামাজের স্থান বা ইসলামী সেন্টার ছিল না। ইংরেজির শিক্ষক লোহাবি ফক্স নিউজ ল্যাটিনোকে আরও বলেন, আমি এখানে আসার পর মুসলমান ও মসজিদ খুঁজতে শুরু করি। কোথাও মসজিদ না পেয়ে পাকিস্তানী দূতাবাসে যাই। সেখানে মাত্র ৮০ জনের মত মুসলমান মিলে নামাজ আদায় করতাম আমাদের অধিকাংশই ছিল বিদেশী।
বর্তমানে তিনি শত শত মুসলমানের সঙ্গে নগরীর অভিজাত আনজুরস শহরতলীর ৩ তলা বিশিষ্ট মুসলিম কমিউনিটি এডুকেশনাল সেন্টারে নামাজ আদায় করেন। বিদেশী ছাড়াও অনেক মেক্সিকান মুসলমানও তাদের সঙ্গে নামাজে শরীক হয়।
ইসলামে নবদীক্ষিত মেক্সিকান বিদেশী অভিবাসী ও দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য ইসলামী সেন্টারে সমবেত হয়। আরবী ও স্পেনিস ভাষায় জুমার খুতবা দেয়া হয়। অনেক মেক্সিকান ইসলাম গ্রহণ করে নবজীবনের সন্ধান পেয়েছে।
৯/১১-এর হামলা ও ইন্টারনেট মেক্সিকোতে ধর্মান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করেছে। লোহাবি বলেন, আমি মনে করি ইন্টারনেট ও ৯/১১ হামলার ঘটনা ইসলামের দ্রুত বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মানুষ জেগে উঠেছে এবং তারা জানতে চায় আমরা আসলেই সন্ত্রাসী কিনা।
সংবাদ মাধ্যম যত অপপ্রচারই করুক আমরা তো আসলে সন্ত্রাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। ইসলাম সন্ত্রাস সমর্থন করে না বরং ইসলাম হচ্ছে এর বিরুদ্ধে।
ইসলামে নবদীক্ষিত বিমানের পাইলট আলেকজান্ডার হুটনস এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। তার মুসলিম নাম হচ্ছে আহমদ আকাশ। তিনি বলেন, ইসলাম সম্পর্কে জানতে আমি ইন্টারনেট ব্যবহার করি এবং বই পড়ি। মেক্সিকোতে ইসলাম অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
১৯৭৯ সালে মিসর সফরের পর ইসলাম গ্রহণ করেন ওমর রেমি। তিনি এখন কমিউনিটি এডুকেশনাল সেন্টারে কাজ করেন। ওমর রেমি বলেন, আল্লাহর পথ বড়ই রহস্যময়। ইন্টারনেট আমাকে সাহায্য করেছে। যারা ইসলাম সম্পর্কে জানতে চায় তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করে এবং খুব সহজেই বিস্তারিত জানতে পারে। ফলে তাদের পক্ষে ইসলাম সম্পর্কে জানা খুব সহজ হয়ে গেছে। এ কারণে অনেকেই এখন ইসলাম গ্রহণ করছে।
গত কয়েক বছরে মেক্সিকোতে ইসলাম দ্রুত বিস্তার লাভ করলেও দেশটিতে ইসলামের আগমন কিন্তু স্পেনীয়দের উপনিবেশ স্থাপনের সময় থেকে। টেকনোলজিক্যাল ইন্সটিটিউট অব মনটেরির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক জিদান জেরাউই আল আওয়াদ বলেন, শুধু মেক্সিকোতে নয় সমগ্র ল্যাটিন আমেরিকাতেই স্পেনীয়দের উপনিবেশ স্থাপনের সময়ে ইসলামের আগমন ঘটে।
অধ্যাপক জিদান বলেন, মেক্সিকোর অনেক মুসলিম অভিবাসীর ছেলেমেয়েরা তাদের ধর্ম হারিয়ে ফেলেছে।
তা সত্ত্বেও মেক্সিকানরা ধর্মান্তরিত হওয়ায় মুসলমানের সংখ্যা বেড়েই চলছে। তিনি বলেন, একদিকে মুসলিম অভিবাসীদের সন্তানরা নিজেদের ধর্ম হারিয়ে অমুসলিম পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে মেক্সিকানরা ইসলামে দীক্ষিত হওয়ায় মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুসলিম বংশোদ্ভূত ব্যক্তি যারা নিজেরা এক সময়ে খৃস্টান হতে বাধ্য  হয়েছিল তাদের উত্তরসুরিরাই এখন আবার ইসলামে ফিরে আসবে।
মেক্সিকোতে যারা ধর্মান্তরিত হয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন বৃটিশ বংশোদ্ভূত মেক্সিকান মার্ক ওমর ওয়েস্টন। তিনি ছিলেন বিশ্বমানের পেশাদার ওয়াটার স্কাইয়ার। তিনি এখন মেক্সিকোর মোরেলস একটি ইসলামী সেন্টার ও একটি হোটেল চালান।
ওমর ওয়েস্টন বলেন, অভিবাসী মুসলিম ও মেক্সিকানদের মধ্যে সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভিন্নতা রয়েছে। অভিবাসী মুসলমানরা তাদের ধর্মকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে আর ধর্মান্তরিত মেক্সিকানরা ইসলাম সম্পর্কে জানার ব্যাপারে আগ্রহী। তবে সাধারণভাবে বলতে হয়। কিশোর এবং ২০-এর কোঠায় যাদের বয়স তারা বিকল্প চিন্তা করে থাকে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা ইসলামের ব্যাপারে জানতে মানুষকে সহায়তা করবে।
মেক্সিকোতে মুসলমানদের সংখ্যা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের হিসাব পাওয়া যায়। মেক্সিকো সরকারের হিসাবে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০। অন্যদিকে ওয়াশিংটন ভিত্তিক পিউ ফোরাম অন রিলিজিয়ান এন্ড পাবলিক লাইফ-এর হিসাবে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার।
সংখ্যার ব্যাপারটা বাদ রেখেও বলা যায়, এব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে সামান্যই সংশয় রয়েছে যে, তারা ইতিমধ্যে বেশ সবল একটি সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছে। ধর্মান্তরিত মেক্সিকান এডুয়ার্ডো লুইস লিজস ফ্রিয়াস বলেন, ইসলাম এখানে প্রসার লাভ করছে। তিনি মুসলিম নাম ধারণ করেছেন লোকমান ইদরিস হিসাবে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামের প্রসার খৃস্টধর্মের প্রসারের সঙ্গেই তুলনীয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button