খতমে বুখারি মাহফিলে আল্লামা শফী
ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে
দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের খতমে বুখারি ও দোয়া মাহফিলে হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, দেশে-বিদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র ও আঘাত চালানো হচ্ছে। দাড়ি-টুপি ও হিজাব পরিহিতা মুসলমান নারী-পুরুষ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদীদের নানামুখী পদেেপ ঈমান নিয়ে বসবাস করাটাই এখন কঠিন হয়ে উঠছে। তিনি ঈমান ও ইসলামের হেফাজতের ল্েয উলামা-মাশায়েখ ও সাধারণ মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে তরুণ আলেমদের উদ্দেশে বলেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতেও ইসলামের শান্তি, সাম্য ও ঐক্যের বাণী জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে আপনাদেরকে জোরদার ভূমিকা রাখতে হবে।
গতকাল শুক্রবার দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস (স্নাতকোত্তর) শেষ বর্ষের গ্রন্থ বুখারি শরিফের শেষ কাসের পর আখেরি মুনাজাত ও বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী কাস ও দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন ও দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদিস আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
তরুণ আলেম মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব ফয়সাল ও মুহাম্মদ নাসিম বিন মুফতি নূর আহমদের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রবীণ মুহাদ্দিস মুফতি নূর আহমদ, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল হামিদ পীরসাহেব মধুপুর, পটিয়া মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মুফতি মুজাফফর আহমদ, হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মুফতি কিফায়াতুল্লাহ, মুফতি জসীম উদ্দীন, মাওলানা ফোরকান আহমদ প্রমুখ।
দাওরায়ে হাদিস বিদায়ী কাসের ছাত্রদের পে বক্তব্য রাখেন মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন, মুহাম্মদ উবায়দুল্লাহ, মুহাম্মদ আবু সায়েম, মুহাম্মদ আরশাদ আল-মাদানী, মুহাম্মদ কাজী জাহিদুল ইসলাম, ইবরাহীম খলীল, মুহাম্মদ রাশেদ প্রমুখ।
বিকেলে বুখারি শরিফের আখেরি দরসের শুরুতে আখেরি হাদিসের পুরো সনদসহ মতন পাঠের পর হজরত আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী ছাত্রদের উদ্দেশে হাদিসের ওপর বিশদ আলোচনা করেন। আলোচনায় হাদিসের বিশুদ্ধ কিতাব বুখারি শরিফ ও এর রচয়িতা ইমাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারি রহ:-এর কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ইমাম বুখারি রহ: দীর্ঘ ১৬ বছর সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ১,০৮০ জন উস্তাদ থেকে অর্জনকৃত ৬ লাখ হাদিস থেকে বাছাই করে ৭,২৭৫টি হাদিস সঙ্কলন করেছেন। প্রত্যেক হাদিস লেখার আগে গোসল করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে এই দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! হাদিস যদি ভুল হয়, তাহলে শুদ্ধতা অন্তরে ঢেলে দিন।’
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তরুণ আলেমদেরকে উদ্দেশ করে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, নাস্তিক্যবাদীরা দেশে যা শুরু করেছিল, আর কিছু দিন যদি ওরা এসব চালু রাখত, তবে এই বাংলাদেশে ইসলাম ও ঈমান বাকি থাকত না। তিনি বলেন, মৃত্যু আমাদের একদিন অবশ্যই হবে। সুতরাং মুসলমান কখনো মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয় না। আর সেই মৃত্যুটা যদি শাহাদাতের মৃত্যু হয়, তা তো একজন মুসলমানের জন্য অবশ্যই গর্বের বিষয়। হেফাজত আমির আরো বলেন, বর্তমানে নাস্তিক্যবাদী ও তাদের দোসররা সাধারণ জনগণ থেকে আলেমসমাজকে বিচ্ছিন্ন করার নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এ ল্েয বিভিন্ন মাধ্যমে তারা আলেমসমাজ ও কওমি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে নানা কল্পকাহিনী ও মিথ্যাচার শুরু করেছে। সারা জীবন ইসলামের সেবায় কাজ করে আসার পরও আমার নামে নানা মিথ্যা অভিযোগ তোলার ষড়যন্ত্র করছে। কারণ তারা বুঝতে পেরেছে, জনসাধারণের সাথে উলামা-মাশায়েখদের যে নিবিড় সম্পর্ক, এটা বিনষ্ট করতে না পারলে এ দেশে নাস্তিকতা প্রতিষ্ঠা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সুতরাং আলেমসমাজ ও সাধারণ মুসলমানদের ঐক্যবিনাশী যেকোনো ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে উদীয়মান তরুণ ইসলামি নেতৃত্বকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
আল্লামা শফী তরুণ আলেমদেরকে সতর্ক করে বলেন, ঈমান-আকিদা ও ইসলামের জন্য যেকোনো পদপে যেন শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক হয়, সে দিকে নজর রাখবেন। কারণ মুসলমানরা সুশৃঙ্খল জাতি। ইসলামে বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, ভাঙচুর ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই।
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী খতমে বুখারির দরসে ইলমে হাদিসের ইতিহাস ও তাৎপর্য বর্ণনা করার পর বলেন, হেফাজতে ইসলামের ঈমানী আন্দোলনকে কোনোভাবে স্তিমিত করতে না পেরে নাস্তিক্যবাদী শক্তি বর্তমানে নানা মিথ্যা অপবাদ ও রটনার মাধ্যমে জনগণ থেকে উলামায়ে কেরামকে বিচ্ছিন্ন করার মিশন নিয়ে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু অন্য সব ষড়যন্ত্রের মতো এখানেও তারা ব্যর্থ হবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি দুঃখ ও ােভ প্রকাশ করে বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাজ ছিল দেশের জনসাধারণের মাঝে ইসলামি শিা ও আদর্শের ব্যাপক প্রচার প্রসার করা। অথচ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বর্তমান ডিজি শামিম আফজল ইসলাম ও আলেম-উলামার বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। ডিজি যে ভাষায় ইসলামের বিভিন্ন অপব্যাখ্যা শুরু করেছেন, তা কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না। হেফাজত মহাসচিব সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে বলেন, ইসলামের শত্র“তায় লিপ্ত ডিজি শামিম আফজলকে অবিলম্বে অপসারণ করে বিচারের কাঠ গড়ায় আনতে হবে। অন্যথায় তৌহিদী জনতার ােভ বিস্ফোরিত হতে সময় লাগবে না।
তিনি বলেন, ৫ ও ৬ মের চরম জুলুম-অত্যাচারের পরও এ দেশের উলামায়ে কেরাম কোনোরূপ প্রতিশোধ ও সহিংসতায় না জড়িয়ে চরম ধৈর্যধারণ করে এর বিচারের জন্য মহান আল্লাহর দরবারেই ফরিয়াদ জানিয়েছে। চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে উলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার ঐক্যবদ্ধ অবস্থানও আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি জোরালো হয়েছে।
মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ মুহাদ্দিস আল্লামা শামসুল আলম, মুহাদ্দিস মাওলানা মুমতাজুল করীম (বাবা হুজুর), মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা শফিউল আলমসহ শীর্ষপর্যায়ের ইসলামি নেতৃবৃন্দ, উলামা-মাশায়েখ, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধ লাখ তৌহিদী জনতা।