নারী অধিকারের নামে চলছে তথ্য সন্ত্রাস

মহান আল্লাহতায়ালা তার অসীম ক্ষমতাবলে সৃষ্টি করলেন মানুষ। প্রথম মানুষ হলেন আদম (আ:)। আল্লাহপাক আদমকে (আ:) বেহেস্তে বসবাস করার আদেশ করলেন। কিন্তু আদম (আ:) এর কাছে বেহেস্তের এই সুন্দর প্রকৃতি, পাহাড়, নদী, ঝর্ণা, পাখির গান, শরাবের ঝর্ণা, মধুর ঝর্ণা কিছুই ভালো লাগছে না। তখন মহান আল্লাহতায়ালা আদম (আ:) এর জন্য একজন সাথী তৈরি করলেন; যাকে নিয়ে তিনি মনের আনন্দে এই বেহেস্তে ঘুরে বেড়াতে পারেন। আল্লাহ পাক আদেশ করলেন, তোমরা দু’জন একত্রে এই বেহেস্তে বসবাস করো। কিন্তু এই গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। তাহলে তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আমার ক্রোধের শিকার হবে। এরপর দু’জনে নিরাপদে বেহেস্তে বসবাস শুরু করলেন। কিন্তু শয়তান তাদের সুখে বাধা হয়ে দাঁড়ালো। সে তাঁদের উভয়কেই নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে আল্লাহ পাকের নাফরমান বান্দা হতে ওয়াসওয়াসা দিতে লাগলো। এতে গুঁটির চাল হিসেবে ব্যহবার করলো বিবি হাওয়া (আ:) কে। এভাবে সৃষ্টির শুরু থেকে শয়তান নারীদের পেছনে লাগলো। নারীদের মাধ্যমেই পুরুষদেরকে মহান আল্লাহ পাকের পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করাই হলো শয়তানের অন্যতম মিশন। সেই মিশন আজ অবধি চলছে। চলছে বংলাদেশসহ বিশ্বময়।
পৃথিবীর শুরু থেকে নারীরা পুরুষের সহযোগী হিসেবে পাশে ছিল, আজোও আছে। নারী ছাড়া পুরুষের জীবন অসম্পূর্ণ থাকে, কিছুটা অসম্ভবও বটে। নারী কখনো মা, কখনো ভগ্নি, কখনো প্রিয়তমা স্ত্রী, কখনো কন্যা হয়ে আমাদের জীবনকে সুষমামন্ডিত করে তোলে। পবিত্র কুরআনে আছে, “পুরুষ যেমন কাজ করবে তেমন ফল পাবে এবং নারী যেমন কাজ করবে ঠিক তেমনি ফল পাবে” (সূরা নিসা:৩২)। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেস্ত।’ আরো বলা হয়েছে, যে তাঁকে ছাড়া যদি কাউকে তিনি সিজদা করার জন্য মনোনীত করতেন তাহলে স্ত্রীকে তার স্বামীকে, সন্তানকে তার মাকে, সিজদা করার হুকুম দিতেন। এখানে স্বামী এবং মা উভয়কেই সম্মানিত করা হয়েছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে হয়Ñ ‘জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী, শস্য লক্ষ্মী নারী,/ সুষমা-লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি। …জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড় অভিযান,/মাতা ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ন।’
ইসলাম নারীকে অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদা দান করেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও পৃথিবীর দিকে দিকে বর্তমানে নারীরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত আর অবহেলার শিকার হচ্ছে। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতাই নারীর সঠিক মর্যাদা না পাওয়ার অন্যতম কারণ। আল্লাহ পাক নারী-পুরুষের মাঝখানে কোনো পার্থক্যের দেয়াল গড়ে তোলেননি। গড়ে তোলেননি দুর্ভেদ্য প্রাচীর। মানুষ হিসেবে উভয়েরই সমান মর্যাদা এবং অধিকার। তবে তাদের দৈহিক কাঠামো যেহেতু ভিন্ন সেহেতু তাদের কাজের ধরনও হবে ভিন্ন এটাই স্বাভাবিক। এটাই নারী স্বাধীনতার ব্যাপারে ইসলামে স্পষ্ট বক্তব্য এ নিয়ে ধূ¤্রজাল সৃষ্টি করার কোনোই অবকাশ নেই। উপরোক্ত আলোচনায় এটাই প্রমাণ হলো যে, ইসলাম নারীকে বঞ্চিত করেনি, করেছে সম্মানিত, দিয়েছে অধিকার। অথচ গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর একটি মিলনায়তনে নারী নেত্রীদের নিয়ে একটি মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। উক্ত অনুষ্ঠানে নারী নেতৃবৃন্দ ছাড়া ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আগামীতে ১৪ দল ক্ষমতায় যেতে না পারলে নারীদের মধ্যযুগের মতো ঘরে ঢুকিয়ে দেয়া হবে।’ এ ছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে আমির হোসেন আমু, মোহাম্মদ নাসিম, রাশেদ খান মেনন বক্তব্য রাখেন, নারী নেত্রীদের মধ্যে মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, দীপু মণি উপস্থিত ছিলেন। এভাবে বর্তমান সরকার নানাভাবে নারীদের মধ্যে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যার বীজ বপণ করছে। যার মধ্য দিয়ে সরলা নারীদের ইসলাম এবং ইসলামী দল সম্পর্কে ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছে। যা কখনো ইসলাম সমর্থন দেয় না। এবং একটা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশিলতার জন্য তা কখনো কাম্য হতে পারে না।
বর্তমানে আমাদের দেশের নারীরা অনেক এগিয়ে গেছে। ‘তারা ঘরে-বাইরে সমান তালে পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। এভারেস্ট জয় থেকে প্যারাসুটে যে কোনো চ্যালেঞ্জিং কাজে নারীরা নিজ প্রতিভাবলে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। নারীরা আজ শুধু বরীন্দ্রনাথের ‘চোখের বালি’র ‘অবলা’ চরিত্র নয়।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শুরু করে নারীরা আজ অবস্থান করছে কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে। তবে তারা কখনোই পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী নয় সহযোগী এবং সম্পূরক হিসেবেই কাজ করছে। নারী-পুরুষের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যায় সমাজ এগিয়ে যায় দেশ। …আরব বিশ্বের নারীদের সম্পর্কে এতদিন পশ্চিমা দুনিয়ার ধারণা ছিল, তাদের জীবন চার দেয়ালে আবদ্ধ এবং অবরোধের অন্তরালেই তাদের সব ভূমিকা ও কাজ। কিন্তু আরব বিশ্বের গণজাগরণ এ ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। নারীরা এখন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে।
তিউনিসিয়া, মিসর, সিরিয়া, ইরান, ইয়েমেন, ওমান, জর্ডান প্রভৃতি দেশের রাজপথের গণদাবির আন্দোলনে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থানকে স্পষ্ট করেছে।’ (আফরোজা সুলতানা, ১৯ এপ্রিল, ২০১৩ দৈনিক নয়া দিগন্ত)।
প্রতিবছর আমাদের দেশে ঘটা করে নারী দিবস পালিত হয়ে থাকে। এ উপলক্ষে সভা-সেমিনার-মানববন্ধন-আলোচনা সভার আয়োজন হয়ে থাকে ব্যাপকহারে। নারী নেত্রীরা নারীদের সমান অধিকারের কথা স্লোগান দেন, হাত উঁচিয়ে প্রতিবাদ করেন।  মঞ্চ কাঁপিয়ে বক্তৃতা করেন। কিন্তু বাস্তবতা কী? নারীরা কি তাদের অধিকার ফিরে পেয়েছে? অথচ বর্তমান সরকারের আমলে যে ভয়াবহ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তা অতীতের সকল ঘটনাকেই হার মানিয়েছে। টাঙ্গাইলের মধুপুরে ময়নাকে প্রায় ১৫ দিন আটকে রেখে দশ-বারোজন নরপশু পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এরপর আরেক মেয়েকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ করা হয়। যা ভাবলে লোম শিউরে উঠে, মন কেঁদে উঠে, লজ্জায় অপমানে আমাদের মাথা হেট হয়ে যায়। এভাবে পত্রিকার পাতা উল্টালে প্রতিদিন অসংখ্য নারী নির্যাতনের ঘটনা এসিড নিক্ষেপ, ইভটিজিংয়ের ঘটনা আমাদের চোখে পড়ে। দিন দিন এর হার আশঙ্কাজনকহারে কেবল বেড়েই চলছে। তবুও আমাদের দেশের নারী নেত্রীদের নারী সমাজের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত এবং প্রদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। তারা শুধু স্বাধীনতার নামে নারীদের ভোগ্য পণ্য বানাতে ব্যস্ত। স্বাধীনতার নামে কিভাবে নারীদের উলঙ্গ করে ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসবে এটার ফন্দি আঁটছে। কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ দেয়ার নামে নারীদেরকে পুরুষের সমকক্ষ দাঁড় করাতেই উঠেপড়ে লেগেছে তারা। অথচ, নারীরা কখনো পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়; ছিলও না। তারা হলেনÑ পুরুষের সহযোগী উৎসাহ উদ্দীপনা আর নির্ভরতার আশ্রয়স্থল।
গত ৬ এপ্রিয় মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে এক সভাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরকম বৃহত্তম সমাবেশ বাংলাদেশ পূর্বে কোনোদিন দেখেনি। সে সমাবেশে মুফতী আহমদ শফী ১৩ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। সে দাবিগুলোর মধ্যে কয়েকটি দাবি রয়েছে নারীদের নিয়ে। যা নারীদের প্রকৃত মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এসব দাবি প্রকৃতপক্ষে নারীদের সম্মান ও মর্যাদার রক্ষাকবচ হিসেবেই কাজ করবে। তাদের অন্যতম দাবি হলোÑ নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করা। নারীর জন্য আলাদা শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের ব্যবস্থা করা। এটাই বর্তমান সরকারের কর্তাব্যক্তি এবং তথাকথিত নারীনেত্রীদের গাত্রদাহের অন্যতম কারণ। কারণ তারা একথা ভালো করেই জানে যে, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ হয়ে গেলে পরে তাদের আর কোনো খাওয়া থাকবে না। তাদের জন্য যদি আলাদা কর্মক্ষেত্রের ব্যবস্থা করা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যুযোগ দেয়া হয় তাহলে তারা আর সহজ-সরল নারীদের যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করতে পারবে না। নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। নাক-সিনেমায় রগরগা নারী শরীর প্রদর্শন করে তারা যে কোটি কোটি টাকা আয় করছে সে অবৈধ উপার্জন তাদের বন্ধ হয়ে যাবে।
‘এখন আমাদের দেশ থেকে যদি নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হয়, তবে ইসলামকে বাদ দিয়ে তা করা যাবে না। আমি এটা খুব পরিষ্কারভাবে আপনাদের বলতে চাই, ইসলামকে বাদ দিয়ে আমাদের দেশে (যে দেশে মূলত নব্বই ভাগ মানুষ মুসলিম) চলা যাবে না। যারা ইসলাম থেকে বিদ্রোহ করেছে তারা কিন্তু টিকতে পারেনি, পারছে না।
…আমি বিনীতভাবে বলতে চাই যে, ইসলামের কাঠামোর মধ্যে আমরা যদি এগুতে পারি, তবে তা সব চাইতে ভালো হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইসলামে এরকম একটি ফ্রেমওয়ার্ক আছে, যা নারীদের সামনে এগিয়ে দিতে পারে।’ সূত্র-(শাহ আবদুল হান্নান-নারী ও বাস্তবতা; পৃষ্ঠা-১১)। ইসলামের দেখানো পথ অনুযায়ী যদি আমাদের নারী সমাজ চলে তাহলে তাদের জীবন হবে অনেক বেশি সম্মানিত, সুন্দর ও নিরাপদ। সেজন্য নারীদের উচিত সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলা এবং পর্দার বিধান মেনে জীবন অতিবাহিত করা।
পর্দা সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেনÑ ‘মুসলিম নারীদের বলো তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যে যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ব্যতীত তাদের সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড়  (যেমন ওড়না বা চাদর) দিয়ে আবৃত করে।’
নব্বই ভাগ মুসলিম প্রধান সরকারের উচিত দেশের নারীদেরকে পর্দার বিধান  মেনে চলার জন্য আইন পাস করা। পর্দার মেনে চলার নিরাপদ সুযোগ সৃষ্টি কিংবা উৎসাহ দেয়া। অথচ বর্তমান বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। বাংলাদেশ হাঁটছে উল্টো দিকে। উজানের চলা কইমাছের মতো।
এ বছরের শুরুতে মগবাজারের এক আবাসিক এলাকা থেকে ১৯ জন পর্দানশীন মহিলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মুসলিম প্রধান দেশের জন্য এর চেয়ে বড় লজ্জা, অপমান আর গ্লানিকর বিষয় আর থাকতে পারে না।
নারী স্বাধীনতা আর অধিকারের কথা বলে নারীদের একথা বলার কোনই সুযোগ নেই যে, ইসলাম নারীকে বঞ্চিত করেছে। নারীকে সমান অধিকার দেয়নি। তাদের পুরুষদের দাসী-বাদী করেছেন।
তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত হবে, এ তথ্য সন্ত্রাস এবং ভুলে পতিত নারী জাতিকে মুক্ত করে সঠিক তথ্য দেয়া এবং একথা বুঝানো যে, ইসলাম নারীদের বঞ্চিত করেনি, দিয়েছে অধিকার। তাদেরকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখেনি দিয়েছে সঠিক মর্যাদা এবং আলাদা কর্মক্ষেত্র। সে জন্য আমাদের উচিত স্ত্রী, কন্যাদের বুঝানোর মধ্য দিয়ে এই মহান দায়িত্ব পালন করা।
-সুহৃদ আকবর, লেখক : সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button