সিরীয় সঙ্কটের নিষ্পত্তি আর কত দূর ?
সিরীয় সঙ্কট নিষ্পত্তির চেষ্টাকে অসম্ভব আখ্যা দিয়েছিলেন কফি আনান। ব্রাহিমী বলেছিলেন, প্রায় অসম্ভব। সিরীয় সঙ্কট মীমাংসা প্রশ্নে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের কণ্ঠেও সুর বেজে উঠে নিরাশার। ক্ষমতা পরিবর্তন বিষয়ে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সিরীয় সঙ্কটে মধ্যস্থতার সব চেষ্টা আগাগোড়া নস্যাৎ করে এসেছেন। সমস্যার মীমাংসার উপায় প্রশ্নে সিরিয়ার বিবদমান দু’পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য স্থাপিত কোনোদিনও হয়নি।
বান কি মুনের ভাষায়Ñ সিরীয় কর্তৃপক্ষ, মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সিরীয় সঙ্কট নিষ্পত্তির প্রশ্নে সব পক্ষই বহুধাবিভক্তির শিকার। সিরিয়াসংক্রান্ত সংলাপে ইরানকে শামিল করা ছিল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়; কিন্তু করা হয়নি। আসাদবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকেও ঐক্যবদ্ধ আজো করা সম্ভব হয়নি।
কয়েকটি বড় রাজনৈতিক ও সশস্ত্রগোষ্ঠী মীমাংসা সংলাপে যোগ দিতে চায়নি। তারা জানিয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে নিষ্পন্ন কোনো সমঝোতা তারা মানবে না। এমন অবস্থায় ব্রাহিমীর পরিবর্তে অচলাবস্থা নিরসন চেষ্টায় অন্য যে কাউকে আনা হোক, তিনিও ব্যর্থ হতে বাধ্য।
ইউক্রেন সঙ্কটকে ঘিরে রুশ-পশ্চিম সম্পর্কে উত্তেজনা বেড়েছে আগের তুলনায় বেশি। সিরিয়ার সঙ্কট নিরসন চেষ্টায় পরস্পরবিরোধীদের অভিন্ন সংলাপ মঞ্চে একত্রিত করা এর ফলে আরও বেশি অসম্ভব হয়েছে। বিদ্রোহীরা অভ্যন্তরীণ কলহে ক্ষীণ। যুদ্ধ ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর সাফল্য পাচ্ছেন আসাদ। আসাদের আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি ঔদ্ধত্যও বেড়েছে।
২০১৪ সালে যুদ্ধ কার্যত শেষ হয়ে যাবে বলেছেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। এ কথার অর্থ হচ্ছে সঙ্কট নিরসনে কোনো কূটনৈতিক তৎপরতা তিনি অসার ও অনাবশ্যক মনে করছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু হোক বা না হোক, জুনে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ডাকা হয়েছে। ধরেই নেয়া যায়, নির্বাচনে আসাদ বিজয়ী হবেন। সমস্যা ঝুলন্ত রেখে সিরীয় প্রশাসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টার সমালোচনা করতে গিয়ে প্রশাসনের কৃপাভাজন হয়েছেন ব্রাহিমী। জাতিসংঘে সিরীয় রাষ্ট্রদূত বাশার আল জাফরি ব্রাহিমীর মধ্যস্থতা চেষ্টার নিন্দা করেছেন।
সিরীয় সঙ্কট নিরসনের চেষ্টায় এখন ইরান ও সৌদি আরবকে সঙ্গে নিয়ে এগোনোর কথা ভাবতে শুরু করেছে জাতিসংঘ। ইতোমধ্যে সিরীয় সঙ্কট প্রশ্নে ইরান একটি প্রস্তাব তুলেছে এবং বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদে তার প্রস্তাব অনুমোদিত হবে আশ্বাস পেলে জুনে সিরিয়ায় অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন স্থগিত করতে সে সচেষ্ট হবে। ইরানের প্রস্তাবে রয়েছেÑ বিদেশী যোদ্ধাদের সিরিয়া থেকে চলে যেতে হবে, একটি জাতীয় ঐক্য সরকার গঠিত হবে, সিরীয় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার হ্রাস করার লক্ষ্যে সংবিধান পুনর্বিবেচনা করা হবে এবং প্রেসিডেন্সিয়াল ও আইন পরিষদ নির্বাচন সিরিয়ায় আয়োজিত হতে হবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে।
জাতীয় ঐক্য সরকারে আসাদ থাকবেন কি থাকবেন না এবং ক্ষমতা হস্তান্তরে আসাদ রাজি হবেন কি হবেন নাÑ এ প্রশ্নগুলোকে ইরানি প্রস্তাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ সঙ্কট নিরসনে এ প্রশ্নগুলোই এ পর্যন্ত প্রতিবন্ধক হয়ে রয়ে গেছে। মধ্যস্থপদে ব্রাহিমী যেদিন ইস্তফা দেন, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেদিনই তার ইরানি প্রতিপক্ষকে দাওয়াত দেন। সৌদি মন্ত্রী বলেন, ইরানের সঙ্গে যে কোনো মতভেদ প্রশ্নে আলোচনা করতে তিনি প্রস্তুত। সহমর্মিতামূলক জবাব আসে তেহরান থেকেও। ২০১৩ সালের ইরানি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনপরবর্তীতে দু’পক্ষে আরও বেশি হৃদ্যতা প্রকাশ পেতে দেখা যায়। কিন্তু সম্পর্কোন্নয়নের লক্ষ্যে পরে আর কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। ইরাক, বাহরাইন, লেবানন ও ইরানি পরমাণু কার্যক্রম প্রশ্নে উভয় পক্ষের মধ্যকার বিরোধ যথাপূর্ব বহাল রয়েছে।
সিরীয় প্রশাসনের সমর্থনে ইরান অবিচলিত থাকবে আবার অঙ্গীকার জানিয়েছেন ব্রাহিমী। ইতোমধ্যে সৌদি আরবও জানিয়েছে, সিরীয় বিপ্লবীদের নিস্তব্ধ করার দুনিয়ায় কারোরই সাধ্য নেই। বক্তব্যে সিরীয় প্রশাসনের সমর্থনে ইরানি হস্তক্ষেপকে ইশারা করা হয়েছে। ব্রাহিমী ঠিকই বলেছেন, সঙ্কট-সংঘর্ষ যত দীর্ঘায়িত হবে, সঙ্কটের নিষ্পত্তি অর্জন ততই দুরূহ হতে থাকবে। আল জাজিরা।