কুনমিংয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লালগালিচা সংবর্ধনা

PMপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনে ছয় দিনের সরকারি সফরে শুক্রবার কুনমিং পৌঁছালে তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের আমন্ত্রণে তিনি চীন সফর করছেন।
প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইট স্থানীয় সময় ১১টা ২৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ৯টা ২৫ মিনিট) কুনমিং চাংশুই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আজিজুল হক এবং ইউনান প্রদেশের ভাইস গভর্নর মিম লি জিহেং তাঁকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া উপহার দেয়া হয়।
বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা শেষে শেখ হাসিনাকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে গ্রীনলেক হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। কুনমিংয়ে তিনি এই হোটেলেই অবস্থান করবেন।
এর আগে বাংলাদেশের স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বিদায় জানান।
এছাড়া বিমানবন্দরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও চীনের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আগামী ৯ জুন বেইজিংয়ে গ্রেট হল অব পিপল-এ আনুষ্ঠানিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনার পর তিনি লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে একটি যৌথ ইস্তেহারে স্বাক্ষর করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে গ্রেট হল অব পিপল-এ একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সেখানে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এছাড়া শেখ হাসিনা লি কেকিয়াং আয়োজিত একটি ভোজসভায় অংশ নেবেন।
সফরের প্রথম ধাপে প্রধানমন্ত্রী কুনমিংয়ে থাকবেন এবং এখান থেকে রোববার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
শেখ হাসিনা আজ কুনমিংয়ে দ্বিতীয় চায়না-সাউথ এশিয়া এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন এবং ইউনান প্রদেশের গভর্নর লি জিহেং আয়োজিত এক ভোজসভায় যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী আগামী ৭ জুন নবম চায়না-সাউথ এশিয়া বিজনেস ফোরামে মূলবক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। পরে তিনি স্টোন ফরেস্ট পরিদর্শন করবেন। সন্ধ্যায় ইউনান প্রদেশের গভর্নর তার পূর্বসূরীকে সঙ্গে নিয়ে হোটেল স্যুটে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
বেইজিংয়ে তিনি আগামী ৮ জুন মনুমেন্ট অব দ্য পিপলস হিরোজ-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তিনি বেইজিং চাওয়াং থিয়েটার এ্যান্ড এ্যাক্রোবেটিক ওয়ার্ল্ডও পরিদর্শন করবেন।
আগামী ৯ জুন প্রধানমন্ত্রী চায়না ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে (সিআইআইএস) এক সেমিনারে মূলবক্তব্য রাখবেন। তিনি ১০ জুন বেইজিংয়ে বাংলাদেশ চায়না ট্রেড এ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন ফোরামে ভাষণ দেবেন।
তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন এবং গ্রেট হল অব পিপল-এ চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের চেয়ারম্যান উ ঝেংশেংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী সিসিটিভি, ফনিক্স টিভি, ইউনান টিভি ও চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনালের বাংলা বিভাগকে সাক্ষাৎকার দেবেন। এছাড়া চীনের কমিউনিকেশন ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও তিনি যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী আগামী ১১ জুন হংকং হয়ে দেশে ফিরবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার চীন সফরকালে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে সোনাদিয়া দ্বীপ সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের সহযোগিতা কামনা।
পাশাপাশি ছয়টি বুহৎ প্রকল্পে বাংলাদেশ চীনের সাহায্য লাভের চেষ্টা করা হবে। প্রকল্পগুলো হলো, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন, ন্যাশনাল আইসিটি ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্ণমেন্ট ফেস-৩, রাজশাহী ওয়াসা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, কর্ণফুলী নদীতে কনস্ট্রাকশন অব মাল্টি-লেন ভিত্তিক টানেল, চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর দ্বিতীয় রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণ এবং চট্টগ্রাম-রামু-কক্সবাজার ও রামু-গুনধুম রেলপথ নির্মাণ।
সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষার বিভিন্ন ইস্যুতে চীনের নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা।
চীন সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, রাজনীতি বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব সহিদুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৭০ সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও রয়েছে।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৪০ বছর পূর্ণ হবে আগামী বছর। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। -বাসস

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button