বাংলাদেশের সমৃদ্ধিতে চীনকে পাশে চাই : প্রধানমন্ত্রী

Hasinaপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ তার সমৃদ্ধি ও অগ্রগ্রতির ক্ষেত্রে চীনকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে পেতে চায়। তিনি চীনের ব্যবসায়ী, বাণিজ্য ও শিল্প নেতৃবৃন্দকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং একইসঙ্গে তিনি তাদের কাছে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতির কথাও তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি আপনারা বাংলাদেশে ব্যবসার জন্য নিশ্চিতভাবেই আকর্ষণীয় পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধা পাবেন।
কুনমিংয়ের হাইগেং কনফারেন্স সেন্টারে শনিবার সকালে নবম চায়না- সাউথ এশিয়া বিজনেস ফোরামে বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জামিল আহমেদ, সার্কের সেক্রেটারি জেনারেল অর্জুন বাহাদুর থাপা, সার্ক চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ইসমাইল আসিফ, চায়না কাউন্সিল ফর প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের চেয়ারম্যান জায়াং চেংওয়ে, ইউনান প্রদেশের কমিটি অব পিপলস কংগ্রেসের সেক্রেটারি কিন গুয়াংরং বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদসহ সার্কভুক্ত বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী এবং চীন, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, পাকিস্তান ও নেপালের বিভিন্ন বাণিজ্য সংস্থার নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
শেখ হাসিনা বলেন, চীনা বিনিয়োগকারীরা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) ও বিল্ড-ওন-অপারেট-ট্রান্সফার (বুট) প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, জলপথ, সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণের মতো বাংলাদেশের বিশেষ বিনিয়োগ কর্মসূচিতে আগ্রহ খুঁজে পেতে পারেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন জাহাজ থেকে শুরু করে সস্তা পণ্য পর্যন্ত উৎপাদন করছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরসমূহ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসার জন্য সহায়ক।
বাংলাদেশের এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (ইপিজেড) বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় জায়গা মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামে পৃথক অর্থনীতি ও শিল্পাঞ্চল বরাদ্দের বিষয়টি বিবেচনা করছে।
এছাড়া বাংলাদেশে সাতটি বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা গঠন করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা দ্বিতীয় চায়না-সাউথ এশিয়া এক্সপোজিশনে আমন্ত্রণ জানানোয় ইউনান প্রদেশের গভর্নরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য প্রতিবেশীদের দিকে হাত বাড়ানো চীনা নেতাদের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিবিড় ও ব্যাপক অংশীদারিত্ব ভিত্তিক বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক সহযোগিতা, পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধার ওপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি বলেন, এ সম্পর্ক আরো জোরদারে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে আগ্রহী।
চীনের অর্থনৈতিক ও কারিগরি অগ্রগতির প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে চীন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হচ্ছে। আর এটা সম্ভব হচ্ছে দেশটির গতিশীল ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বের কারণে।
শেখ হাসিনা বলেন, চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কুনমিং ও ইউনান প্রদেশের নৈকট্য বিশেষ অবস্থান তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমারের মধ্যকার অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়নের বিষয়টি দ্রুত কার্যকর করা গেলে সমগ্র অঞ্চল আর্থ-সামাজিকভাবে উপকৃত হবে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বর্তমানে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে।
তিনি তার বিগত পাঁচ বছরের শাসনামলে (২০০৯- ২০১৩) বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এ সময়ে দেশের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ছয় শতাংশেরও বেশি ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের পাঁচ কোটি লোক নিম্নআয় থেকে মধ্যআয়ের স্তরে পৌঁছেছে। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে দেশের রূপ্তানি আয় ১০৭ শতাংশ বেড়েছে, রেমিটেন্স বেড়েছে ৬২ শতাংশ, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ২১৭ শতাংশ এবং বৈদ্যুতিক সক্ষমতা ১০৯ শতাংশ বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উদার বৈদেশিক নীতি, সহনীয় ঋণ হার, সংগতিপূর্ণ মজুরিতে তরুণ শ্রমিকের পর্যাপ্ততার কারণে প্রতিবছরই প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে।
তিনি বলেন, সড়ক, সেতু, মহাসড়ক, নগর পরিবহণসহ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো অবকাঠামো নির্মাণে চীনের সহায়তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখছে।
শেখ হাসিনা বলেন, চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারদের অন্যতম এবং আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস দেশ।
তিনি বলেন, ‘চীন-বাংলা বাণিজ্য ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল মাত্র ৪৫৮.১২ মিলিয়ন ডলার কিন্তু আমদানি ছিল ৬.৩০৭ বিলিয়ন ডলার।’
তিনি বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে হলে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আরো বাংলাদেশি পণ্য চীনের বাজারে প্রবেশ করতে দেয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আরো তৈরি পোশাক, ওষুধ, হস্তশিল্প, সিরামিক, চামড়াজাত পণ্য ও মৎস্য চীনের আমদানি করা প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে চীনের উদ্যোক্তারা আরো বিনিয়োগ করে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে সাহায্য করতে পারেন।
তিনি বলেন, চীনের উদ্যোক্তরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর বাজারে প্রবেশে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা নিতে পারে।
তিনি বলেন, কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও চীনের প্রায় তিন বিলিয়ন ভোক্তার বিশাল বাজারে পণ্য যোগাতে পারে। -সূত্র: বাসস

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button