বার্ষিক উন্নয়নের ৪০ শতাংশ অর্থ জাকাত থেকে পাওয়া সম্ভব

Zakatবাংলাদেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৪০ শতাংশ অর্থ জাকাত ফান্ড থেকে পাওয়া সম্ভব। প্রতি বছর যার পরিমাণ হবে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। শনিবার গুলশানের ওয়াশিংটন হোটেলে আয়োজিত ‘দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাতের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন। সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) এবং দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের যৌথ উদ্যোগে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন আরব-বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা এম আজিজুল হক। আলোচনায় অংশ নেন বিচারপতি আবদুর রউফ, সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. শমসের আলী, প্রফেসর ড. আবু আহমেদ, ড. মাহবুবুর রহমান, সালাউদ্দিন কাসেম খান, নিয়াজ রহিম, এ কে এম নুরুল ফজল বুলবুল, ড. মঞ্জুর-ই-ইলাহী, সাদেক খান, এরশাদ মজুমদার, শহিদুজ্জামান খান, অধ্যাপক ড. এম মাহবুবুর রহমান, ড. মনওয়ার হোসাইন, অধ্যাপক এম মুজাহিদুল ইসলাম, সাবেল ফিরোজসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকেরা।
আলোচনায় বিচারপতি আবদুর রউফ বলেন, জাকাত ইসলামের পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির একটি। এটি শুধু কোনো জনসেবামূলক কাজ নয়। জাকাত পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ প্রদত্ত একটি দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার, যা বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল পরিকল্পনা ও কর্মসূচিতে পুরোপুরি উপেতি হয়েছে। দুস্থ ও গরিব মানুষের উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশের দারিদ্র্য কমিয়ে আনার কৌশলে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
এ দেশে অনেক মানুষ আছেন যারা জাকাত দেন। কিন্তু এর সংখ্যা সরকারি প্রচেষ্টায় আরো বৃদ্ধি করা যেতে পারে। জাকাত দারিদ্র্য বিমোচনে অর্থনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হতে পারে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ইসলাম সচ্ছল মুসলমানকে সম্পদের ওপর জাকাত দিতে বলেছেন। কিন্তু জাকাত দাতব্য থেকে কোনো পার্থক্য করা হয় না। জাকাতের অর্থ টেকসই উন্নয়নে ব্যবহার করা হয় না। দেশের কল্যাণে জাকাত দিতে হবে। জাকাত দানকারীদের ব্যয় ট্যাক্স থেকে রেহাই পাওয়া উচিত। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জাকাত আদায় করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেয়া সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম নুরুল ফজল বুলবুল বলেন, দেশে প্রতি বছর ইসলামী ব্যাংকগুলো বিপুল অর্থ জাকাত দিচ্ছে। কিন্তু তাদের কোনো ট্যাক্স সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। তিনি জাকাত ব্যয়ে ট্যাক্স সুবিধা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশ্ব ইসলামিক অর্থনীতি ফোরামের সভাপতি সালাউদ্দীন কাসেম খান বলেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে জাকাত ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়েছিল। পরে এখন আবার এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. আবু আহমেদ বলেন, জাকাত আদায়ে সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) অল্প কিছু লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। এটি সাধারণ মানুষের কাছ পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে।
সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. শমসের আলী বলেন, এই সংগঠনটি জাকাত আদায়ের মাধ্যমে বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে। তাদের এই কর্মকাণ্ডের সফলতা সংগঠটির ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা আরো বাড়িয়ে দেবে। জাকাত সরকারের উন্নয়ন প্রচেষ্টার পরিপূরক হতে পারে এবং বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নে নিয়ামক ভূমিকা রাখতে পারে।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী ড. মিয়া মোহাম্মদ আইয়ুব। প্রবন্ধে তিনি বলেন, যদি জাকাতের অর্থ যথাযথভাবে সংগ্রহ করা যায়, তাহলে এ অর্থ দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সংগৃহীত বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ কমিয়ে দেবে ও এতে ঋণের বোঝা তাৎপর্যপূর্ণভাবে হ্রাস পাবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button