মালয়েশিয়ার সমাবেশে তারেক রহমান
আওয়ামী লীগ বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশেকে কলংকিত করেছে
বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশেকে কলংকিত করেছে। তিনি বলেন, শেখ মুজিব ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত করেছিলেন। শেখ হাসিনা ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে এক নম্বর বানিয়েছেন। ২০০৮ সালে ক্ষমতা দখল করে পদ্মা সেতুর দুর্নীতিতে জড়িয়ে আরো একবার দেশকে বিশ্বের দরবারে কলঙ্কিত করেছেন।
বুধবার কুয়ালালামপুরে পুত্রা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে দেওয়ান তুন রাজ্জাক-২ অডিটরিয়ামে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৩তম শাহাদত বার্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, এবার শেখ হাসিনা সোনা চোরদের পক্ষ নিয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সমাজ রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য বিপজ্জনক। শেখ হাসিনার সঙ্গে দেশের জনগণ নেই।
তারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ১৭ দিনের মাথায়ই জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। জিয়াউর রহমান হত্যা সম্পর্কে শেখ হাসিনা জানতেন। আর জানতেন বলেই জিয়াউর রহমানেক হত্যার পর তিনি বোরখা পরে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তাকে রিমান্ডে নেয়া হলেই জিয়া হত্যার রহস্য বের হবে।
তিনি বলেন, দশ ট্রাক অবৈধ অস্ত্র যেসব দায়িত্বশীল মন্ত্রী এবং কর্মকর্তারা আটক করলো তাদেরই যদি ফাঁসির আদেশ হয়; তাহলে সম্প্রতি যারা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে তাদের কি হওয়া উচিৎ।
তারেক রহমান বলেন, কথায় বলে ‘কাক কাকের মাংস খায় না।’ কিন্তু অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় থাকার জন্য নিজের দল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও হত্যা করছে।
তারেক রহমান শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রপরিচালনায় ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে বলেন, বিডিআরএ কর্মরত সেনাবাহিনীর ৫৭জন কর্মকর্তা হত্যার জন্য ডিফেন্স মিনিস্ট্রির দায়িত্বশীল শেখ হাসিনার কেন ফাঁসি হবে না। তিনি বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য শেখ হাসিনার ফাঁসি দাবি করেন।
তারেক রহমান বলেন, শেখ হাসিনা দেশের সকল প্রশাসন ধ্বংস করেছেন। আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। এমনকি আদালতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
এ সময় তারেক রহমান সমাবেশে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিচারপতি কাজী এবাদুল হকের একটি মন্তব্য উদ্ধৃত করেন। আদালত সম্পর্কে শেখ হাসিনার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে “বিচারপতি কাজী এবাদুল হক শেখ হাসিনার প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, খুন, গুম অপহরণ হবে অথচ বিচারকরা সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে কোন বিচার করতে পারবেন না তাহলে বিচার বিভাগ রাখার কি প্রয়োজন। বিচারকদের প্রতি অনাস্থা থাকলে আপনি নিজেই তো বিচার করতে পারেন। তাদের রাখার কি প্রয়োজন?’’
তারেক রহমান বলেন, দেশের আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনীর ঘাড়ে বন্দুক রেখে শেখ হাসিনা ক্ষমতা দখল করে রেখেছেন।
তিনি বলেন, এক সময়কার এলিট ফোর্স র্যাব এখন ভাড়াটে খুনি বাহিনী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আওয়ামী নেতা-মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজন আর দলীয় ক্যাডারদের ঢুকিয়ে র্যাবকে পরিণত করা হয়েছে আওয়ামী রক্ষী বাহিনীতে।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, বাপ-বেটির শাসনামলে বাংলাদেশের জনগণ সবসময়ই নিরাপত্তাহীন।
তিনি ১৯৭৩ সালের ১৭ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম উল্লেখ করে বলেন, শেখ মুজিবের শাসনামলের এখনো কোন পরিবর্তন হয়নি। ১৯৭৩ সালের ১৭ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাকের শিরোনাম ছিলো, “নিরাপত্তার আকুতি গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে”।
সভায় ওই রিপোর্টটি পড়ে শোনান তারেক রহমান। রিপোর্টে লেখা হয়, ‘সমগ্র দেশে আইনশৃংঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির ফলে এবং মানুষের জান-মাল ও ইজ্জতের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাবে গ্রাম-গঞ্জ ও শহরবাসীর মনে হতাশার মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে এবং আইন রক্ষাকারী সংস্থার প্রতি মানুষের আস্থা লোপ পাচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, চুরি-ডাকাতি, লুটতরাজ তো আছেই, রাজনৈতিক, সামাজিক ও বৈষয়িক কারণে শত্রুতামূলক হত্যাকান্ডের ভয়ে মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে। যারা বিত্তশালী তারা শহরের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে এমনকি শহরের আবাসিক হোটেলগুলোতে পর্যন্ত এসে উঠেছেন। যাদের শহরে বাস করিবার সঙ্গতি নাই, তারা বনে-জঙ্গলে অথবা এখানে-ওখানে রাত্রি কাটাচ্ছেন’
তারেক রহমান বলেন, বাপের শাসনামলের মতো একই অবস্থা বেটির শাসনামলেও বিরাজ করছে। এখনো মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই।
আওয়ামী লীগকে অকৃতজ্ঞ আখ্যা দিয়ে তারেক রহমান বলেন, শেখ মুজিব নিজেই ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে গলাটিপে হত্যা করেছিলেন। একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। আওয়ামী লীগকে পুনর্জন্ম দেন। আওয়ামী লীগের উচিত কৃতজ্ঞতার সাথে জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করা।
সভা পরিচালনা করেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপাতি শহীদুল ইসলাম বাবুল ও যুবদলের সহসভাপতি সেলিম।
সমাবেশে তারেক রহমান বলেন, শেখ হাসিনার হাতে দেশ ও দেশের জনগন নিরাপদ নয়। তাই দেশ এবং জনগনের জানমাল বাঁচাতে দেশনেত্রী বেগম খালেদার জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতির শপথ নিতে সবার প্রতি আহবান জানান।
এর আগে দেশের বাইরে একবার জেদ্দায় এবং কয়েকদফা লন্ডনে বাংলাদেশের সার্বিক আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তৃতা করেন তারেক রহমান। এবার প্রথমবারের মত বক্তৃতা করলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী বিএনপি‘র নেতাকর্মী ও শুভার্থীদের উদ্দেশ্যে।
সভায় মালয়েশিয়ার কেপাং, পুচং, কেলাং, শাহ আলম, কেলাংমেরুং, চুঙ্গাইবুলু মাজুদা, রাওয়াংসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। তারেক রহমান অনুষ্ঠানস্থলে পৌছতেই নেতা-কর্মীরা তাকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। সবাইতে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তারেক রহমান।
উল্লেখ্য, ২ জুন তারেক রহমান এক সপ্তাহের সফরে যুক্তরাজ্য থেকে মালযেশিয়া যান।