কর্মজীবীদের মধ্যে দারিদ্র্য বাড়ছে যুক্তরাজ্যে
শামীমা বিনতে রহমান: যুক্তরাজ্যে মার্গারেট থ্যাচারের শাসনামলের পর থেকে গত ৩০ বছরে টাকা-পয়সাহীন গরিব পরিবারের সংখ্যা এখন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। দেশটিতে মৌলিক অধিকার বঞ্চিত মানুষের ওপর সবচে বড় এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় বাড়ায় দারিদ্র্য ঠেকাতে পারছে না পূর্ণকালীন চাকরিও । উপার্জনক্ষম প্রতি ৬ জনের একজনই এখন ‘গরিব’ বলে গণ্য হচ্ছে।
সরকারের দারিদ্র্য বিষয়ক উপদেষ্টা ফ্রাঙ্ক ফিল্ড বলেন, প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্যই প্রমাণ করে দারিদ্র্য সমস্যা সমাধানে জোটের পরিকল্পনায় আর “কাজ হচ্ছে না”। তিনি, সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি দারিদ্র্যের হার কমানোর জন্য ইশতেহার তৈরির আহবান জানান।
৮টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত ‘দ্য পোভারটি অ্যাণ্ড সোস্যাল এক্সক্লুশন’ প্রকল্পে ব্রিটেন ও উত্তর আয়ারল্যাণ্ডের সাড়ে ১৪ হাজার মানুষের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক এ গবেষণায় মূল যে তথ্যগুলা উঠে এসেছে; তা হল: ৫ লাখেরও বেশি শিশুর পর্যাপ্ত খাবারের সংস্থান করতে পারছে না তাদের পরিবার, ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষে উপযুক্ত বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারছে না, ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ এত গরিব যে কোনো সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর সামর্থ্য নেই এবং প্রায় ৫৫ লাখ মানুষের প্রয়োজনীয় পোশাক-পরিচ্ছদ নেই।
জরিপে দেখা গেছে, জীবন-যাপনের মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে “৩ বা ৩’র চেয়ে বেশি মৌলিক প্রয়োজন’ এর হার ব্রিটেনের পরিবারগুলাতে ১৯৮৩ সালে মার্গারেট থ্যাচার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ১৪ শতাংশ(৩০ লাখ) থেকে বেড়ে ৩৩ শতাংশ(৮৭ লাখ) হয়েছে ২০১২ সালে। যদিও এ সময়ের মধ্যে অর্থনীতির প্রসার দ্বিগুণ হয়েছে। গবেষকরা ‘৩ বা ততোধিক ফর্মুলা’ ব্যবহার করেছেন, যাতে করে সরাসরি ১৯৮৩ সালের একই বিষয়ের গবেষণার সঙ্গে এ হারের তুলনা করা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, গবেষণায় পাওয়া তথ্য দারিদ্র্য নিয়ে প্রচলিত মিথের অসাঢ়ত্বই প্রমাণ করেছে, যে মিথে বলা হয়, কর্ম-সংস্থানের অভাব, নয়ত কর্মক্ষেত্র ছোট হয়ে আসাই দারিদ্র্যের কারণ । প্রায় অর্ধেক “কর্মজীবী গরিবই”সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা বা তারচে বেশি ঘন্টা কাজ করছে।
জোসেফ রনট্রি ফাউণ্ডেশনের(জেআরএফ) আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা যুক্তরাজ্যের ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের প্রায় অর্ধেকই সেইসব পরিবারের সদস্য, যেখানে কেউ না কেউ কাজ করে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়: খাবার, ভাড়া, শিশুর যত্ন-আত্তি, বিদ্যুৎ-গ্যাস খরচে যে পরিমাণ অর্থের দরকার পড়ে, ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে তা বেড়েছে এক তৃতীয়াংশ।
‘ইকোনমিক অ্যাণ্ড সোস্যাল রিসার্চ কাউন্সিল’ এর অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণাটির প্রধান গবেষক, ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের টাউনসেণ্ড সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পোভার্টি রিসার্চ’এর অধ্যাপক ডেভিড গর্ডন বলেন, দারিদ্র্যের মূল কারণ দূরীকরণে সরকারের নেয়া কৌশল নীতি “পুরোপুরি ব্যর্থ”।
২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে দারিদ্র্য নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করা ফ্রাঙ্ক ফিল্ড বলেন, এ গবেষণা “ দু:খজনক হলেও জোরালোভাবে এতে উঠে এসেছে যে চাকরি এখন আর পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচাতে পারছে না”।
“দারিদ্র্যের কারণ মোকাবেলা করাটাই এখন স্পষ্টত সঠিক কৌশল” উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “এ গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, প্রচলিত কৌশল আর কাজ করছে না। এখানে তাই সব রাজনৈতিক দলগুলার বড় চ্যালেঞ্জ হল- ভয়ঙ্কর ভাবে বেড়ে যাওয়া এ দারিদ্র্যের রাশ টেনে ধরতে তাদের ইশতেহার কী বলছে সেটি দেখা।
তবে ‘ওয়ার্ক অ্যাণ্ড পেনশন ডিপার্টমেন্ট’ এর এক মুখপাত্র এ গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসা চিত্র বিভ্রান্তিকর দাবি করে বলেন, “এরপরও গত ৩০ বছরে উপার্জন বাড়ার অকাট্য প্রমাণ আমাদের আছে। ১৯৯৮ সাল থেকে ১ কোটি ৪০ লাখেরও কিছু বেশি মানুষ দারিদ্র্য পরিস্থিতির মধ্যে আছে- পরিসংখ্যানে এটি পরিষ্কার হলেও এ সরকারের নেতৃত্বে আমরা সফলভাবেই অতি দারিদ্র্য পরিস্থিতি ঠেকাতে পেরেছি।
সূত্র: দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট