সাহায্য পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে ত্রাণসংস্থাগুলো
সন্ত্রাস, হামলা, অপহরণ ইত্যাদি কারণে উন্নয়ন সাহায্য কর্মীদের পক্ষে বিভিন্ন দেশে কাজ করা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে আফ্রিকার অনেক দেশে এই ধরনের সহিংসতা ঘটছে অহরহ। সিরিয়াতেও কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সিরিয়ার অনেক শহর এত বিধ্বস্ত হয়েছে যে, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। অনেক জায়গায় কেবল ধ্বংসাবশেষই দেখা যায়। ২০১৩ সালের বাৎসরিক প্রতিবেদনে এই কথাই বলেন জার্মানির অন্যতম সাহায্যদাতা প্রতিষ্ঠান ভেল্টহুঙারহিলফে’র প্রেসিডেন্ট ব্যার্বেল ডিকমান।
বিশ্বব্যাপী জরুরি সাহায্যে তৎপর প্রতিষ্ঠানটি। আজরাক শরণার্থী শিবিরটি জর্ডানের তৃতীয় শরণার্থী শিবির। প্রতিদিনই অন্তত ৬০০ সিরীয় শরণার্থী সীমান্ত পার হয়ে জর্ডানে আসেন। বিশ্বব্যাপী সমালোচিত সিরিয়ার সাম্প্রতিক নির্বাচনও কোনো সুরাহা এনে দিতে পারবে না। সংকট সমাধানের কোনো লক্ষণ সেখানে দেখা যাচ্ছে না। কেননা বিবদমান দলগুলো একেবারেই কাছাকাছি আসতে চাইছে না, বলেন ডিকমান। গত বছর চরম মানবিক সংকটের মধ্যে কাটাতে হয়েছে সিরিয়ার মানুষকে। ভেল্টহুঙারহিলফে নামক এই জার্মান এনজিও-টির মোবাইল সাহায্য টিমকে প্রায় সবসময় সাহায্য কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। প্রায় প্রতিমাসেই সংকট লেগে ছিল। জানান সাহায্য প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল সেক্রেটারি ভল্ফগাং ইয়ামান। এইসব সংকটের কারণে সংস্থাটির পক্ষে স্থায়ীভাবে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সাহায্য প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে কর্মী পাওয়াও মুস্কিল হচ্ছে। অনেক এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উন্নয়ন সাহায্য কর্মীরা অপহরণ ও হামলার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে সাহারার দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোতে কাজ করা বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলোর জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। সারা অঞ্চলজুড়ে বিরাজ করছে যুদ্ধংদেহী অবস্থা। নানা ধরনের চরমপন্থার বিস্তৃতি ঘটছে। এভাবেই বলেন ইয়ামান। এছাড়া লেবাননের অনেক প্রাক্তন সেনা ও বেতনভোগী যোদ্ধা আল-কায়েদা ও অন্যান্য চরমপন্থি গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। এই ধরনের পরিবেশে দুঃস্থ মানুষদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় দক্ষিণ সুদানের কথ কোনো কোনো অঞ্চলে আবার শুধু হেলিকপ্টারের মাধ্যমে সাহায্য সামগ্রী নিক্ষেপ করতে হয়। পাকা রাস্তার অভাবে কাজ করতে আরো অসুবিধা হয় বর্ষাকালে। ডিকমান আশঙ্কা করেন, এইভাবে যুদ্ধ চলতে থাকলে চাষিরা কৃষিখেতে কাজ করতে পারবেন না। এরফলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। এ কারণে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আফ্রিকা ইউনিয়নের প্রতি সংঘর্ষ বন্ধ করার ব্যাপারে সচেষ্ট হতে আহ্বান জানান। তার মতে, এই অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের ব্যাপারে সবারই আগ্রহ থাকা উচিত।
এই ধরনের সহিংসতা গোটা অঞ্চলে তো বটেই অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেমন হঠাৎ করে হামলা ঘটলো কেনিয়ায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিদেশ দফতরের মতো বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন এবং ব্যক্তিগত চাঁদার অর্থে চলে ভেল্টহুঙারহিলফে’র কাজকর্ম। গত বছর সব মিলিয়ে ১৪০ মিলিয়ন ইউরো বিদেশের প্রকল্পগুলোর কাজে ব্যয় করেছে প্রতিষ্ঠানটি। জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা হয়েছে দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া ও ফিলিপাইন্সে। ওয়েবসাইট।