এক মাসের জন্য ছয় পণ্য রফতানি নিষিদ্ধ

এক মাসের জন্য ছয় সবজিজাতীয় পণ্য রফতানি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে সরকার। এই পণ্যগুলো হলো- বেগুন, রসুন, শসা, কাঁচামরিচ, লেবু ও ধনে পাতা। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত এই ছয় পণ্য বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রফতানি করা যাবে না। গতকাল বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সভায় অংশগ্রহণ করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, আসন্ন রমজান মাসসহ সব সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। সরকার এ বিষয়ে সজাগ রয়েছে। পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে একাধিক বৈঠক করেছে। ভোজ্যতেল, ডাল, ছোলা, চিনিসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক থাকবে।  বর্তমানে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পণ্য মজুদ রয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
মন্ত্রী বলেন, আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে ভোক্তাদের সুবিধার জন্য বেগুন, রসুন, শসা, কাঁচামরিচ, লেবু, ধনেপাতা আজ (গতকাল) থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত রফতানি বন্ধ থাকবে। পবিত্র রমজান মাসে কোনো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাবে না ও সরবরাহ কম হবে না। তিনি বলেন, যে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে সেই পণ্যকে শুল্কমুক্ত ঘোষণা করা হবে ও তা বিনা শুল্কে আমদানি করা যাবে।
মন্ত্রী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট বা মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকার ও সরকারের গোয়েন্দা বিভাগগুলো এ বিষয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন,  পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য যাতে স্বাভাবিক থাকে সে জন্য সরকার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে চাহিদা মোতাবেক পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমার ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তবে ভারত পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি করার কারণে এখানে তার প্রভাব পড়তে পারে।
তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ১৪টি টিম ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারগুলোতে অভিযান পরিচালনা করছে। বাজারের প্রতিটি দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তালিকা সহজে দর্শনীয় স্থানে টাঙিয়ে রাখার এবং পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সময় পাকা রশিদ সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিটি পণ্যের নির্ধারিত খুচরা মূল্যে বিক্রয় করতে হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
ঢাকাসহ সারা দেশে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং প্রতিটি জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিম নিয়মিতভাবে এসব মূল্যতালিকা তদারকি করবে। যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি সরকারের এ নির্দেশনা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ লাইসেন্স বা নিবন্ধন সাময়িকভাবে বাতিল ও পণ্য বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মুর্তজা রেজা চৌধুরী, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মহাপরিচালক ডব্লিউটিও) অমিতাভ চক্রবর্তী, অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) মো: শওকত আলী ওয়ারেসি, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) এস এম শওকত আলী, অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মনোজ কুমার রায়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: আবুল হোসেন মিঞা, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সরোয়ার জাহান ও জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রার বিজন কুমার বৈশ্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button