মৃত্যুর অধিকার নিয়ে উত্তাল ফ্রান্স
কোমায় পড়ে থাকা সাত-সাত জন রোগীকে ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলেছিলেন তিনি। বুধবার সেই চিকিৎসক নিকোলা বোনেমেসোঁকেই বেকসুর খালাস করে দিল ফ্রান্সের আদালত। কারণ, রোগীর পরিজনেরাই তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। গলা ফাটিয়েছেন নিকোলার হয়ে।
হইচই ফেলে দিয়েছে বুধবারের আরও একটি রায়। ছ’বছর ধরে কোমায় পড়ে আছেন বছর চল্লিশের এক যুবক ভিনসেন্ট ল্যামবার্ট। তার স্ত্রী বহু দিন আগেই স্বামীর নিষ্কৃতি-মৃত্যুর আর্জি জানিয়েছিলেন আদালতে। কিন্তু বারে বারে তা খারিজ হয়ে যায়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মঙ্গলবারই সেই আবেদন পাশ করে দিয়েছে ফ্রান্সের আদালত।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে দু’-দুটি রায় নিয়ে তাই টালমাটাল ফ্রান্স। নিষ্কৃতি-মৃত্যুর যৌক্তিকতা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। বুধবার আবার বৃটিশ পার্লামেন্ট জানিয়েছে, নিষ্কৃতি-মৃত্যুকে নিষিদ্ধ করার অর্থ মানবাধিকারের বিরুদ্ধে যাওয়া। যদিও জীবন্মৃত দুই রোগীর ‘মৃত্যু-ভিক্ষা’ খারিজ করে দিয়েছে পার্লামেন্ট। ওই দুই ব্যক্তি নিষ্কৃতি-মৃত্যুর আইনটিকে বৈধ করার আর্জি জানিয়েছিলেন পার্লামেন্টে। যাতে নিয়ম মেনেই চিকিৎসকেরা যন্ত্রণাময় পঙ্গু জীবন থেকে মুক্তি দিতে পারেন তাদের। ওই দুই রোগীর আশাপূরণ হয়নি বটে, তবে প্রশাসনের একাংশের মতে খুব শীঘ্রই নিষ্কৃতি-মৃত্যুর বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হবে পার্লামেন্টে।
এক দিকে, ফ্রান্সের আদালত যখন নিষ্কৃতি-মৃত্যুতে অনুমতি দিচ্ছে, বিষয়টি ভেবে দেখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বৃটেন, স্ট্রসবার্গের ‘ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস’ নির্দেশ জারি করেছে নিষ্কৃতি-মৃত্যুর অনুমতি দেওয়া চলবে না। স্ট্রসবার্গের হলেও, নিয়মানুযায়ী ওই আদালতের রায় মানতে বাধ্য ইউরোপের দেশগুলি। তাই তীরে এসেও তরী ডুববে কি না, আশঙ্কায় ফ্রান্সের একাংশ। ল্যামবার্ট-প্রসঙ্গেই যে আদালতের ওই রায়! স্বামী দীর্ঘদিন ধরে কোমায় রয়েছেন। শরীরে খাবারের নল লাগানো, কৃত্রিম যন্ত্রে কোনো মতে শ্বাসপ্রশ্বাস চলে। এ হেন নিষ্প্রাণ জীবন থেকে স্বামীকে বাঁচাতে ল্যামবার্টের স্ত্রী র্যাচেল ফ্রান্সের আদালতে নিষ্কৃতি-মৃত্যুর আর্জি জানিয়েছিলেন। বৃদ্ধ বাবা-মা পুত্রবধূর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখতে তারা ষ্ট্রসবার্গের মানবাধিকার আদালতে আর্জি জানান। তার রায়েই আপাতত অনিশ্চিত নিষ্কৃতি-মৃত্যুর সিদ্ধান্ত।
বিশ্ব জুড়ে এমন ল্যামবার্টের সংখ্যা নেহাত কম নয়। টেরির ঘটনা একেবারে ল্যামবার্টেরই প্রতিচ্ছবি। ১৯৯০ সালের ঘটনা। মস্তিষ্কে ক্ষত থেকে হৃদযন্ত্র স্তব্ধ হয়ে যায় ফ্লোরিডার বাসিন্দা টেরি শিয়াভোর। ডাক্তারেরা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, তিনি কোনো দিন কোমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন বলে মনে হয় না। র্যাচেলের মতো টেরির স্বামীও তার স্ত্রীর নিষ্কৃতি-মৃত্যু চেয়ে আইন-আদালতের দ্বারস্থ হন। টেরির বাবা-মা জামাইয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আইনি লড়াইয়ের পর জিতে যান টেরির স্বামী। খুলে নেওয়া হয় খাবারের নল। পঙ্গু জীবন থেকে মুক্তি পান মহিলা। র্যাচেল কি পারবেন নিজের লড়াইয়ে টিকে থাকতে? ল্যামবার্টেরই বা শেষমেশ কি হবে? ফ্রান্সই বা কোন পথে হাঁটবে? এমন হাজারো প্রশ্নে এখন উত্তাল ফ্রান্স।