ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা ৯/১১-এর পর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা

Iraqতিকরিত থেকে ইসলামী রাষ্ট্রের যোদ্ধাদের হটানোর অভিযানে হোঁচট খেয়ে ইরাকি সরকারি সৈন্যরা পিছু হটেছে। জিহাদিরা একটি হেলিকপ্টার গানশিপ ভূপাতিত করেছে। রয়টার্স জানায়, শনিবার  ইরাকি সেনাবাহিনী ও মিলিশিয়া ট্যাংক ও হেলিকপ্টার গানশিপের সমর্থনে তিকরিতে ইসলামী রাষ্ট্রের যোদ্ধাদের হঠিয়ে শহর পুনর্দখলের জন্য প্রচ- হামলা চালায়। কিন্তু দুদিনের লড়াইয়ের পরও তারা সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। রোববার তিকরিত শহর জিহাদিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দেখা যায়। বিবিসি জানায়, সরকারি বাহিনী দক্ষিণে পশ্চাৎপসারণ করেছে। তবে লড়াই চলছে।  এদিকে রোববার জিহাদিরা একটি ইরাকি হেলিকপ্টার গানশিপ ভূপাতিত করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা একটি গানশিপকে ভূপাতিত হতে দেখেন। সেটি একটি বাজারের কাছে বিধ্বস্ত হয়।
ইরাকি  হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষিপ্ত রকেটের আঘাতে শনিবার সন্ধ্যায় তিকরিতের বাইরে আল বু হায়াজি নামক একটি গ্রামে বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ৪ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়। তাদের মধ্যে দুজন মহিলা।
রোববার সকালে বাগদাদ থেকে ৫৩ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত জুরফ আল সাখার শহরের উপকণ্ঠে ইসলামী রাষ্ট্রের যোদ্ধাদের সাথে সরকারি বাহিনীর লড়াই শুরু হয়। পুলিশ ও প্রাদেশিক গভর্নর সূত্রে বলা হয়, তাদের সংখ্যা কয়েকশ’ বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডাররা তাদের মোকাবিলার জন্য বাগদাদের কাছে আরো সৈন্য চেয়েছেন।
এদিকে ইরাকি রাজনীতিকরা দেশের সংকটের মুখে নতুন সরকার গঠন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য চাপের মধ্যে রয়েছেন। রোববার এক বিবৃতিতে ইরাকে জাতিসংঘ মিশন মঙ্গলবার আহূত পার্লামেন্ট অধিবেশনে সকল প্রতিনিধিকে যোগদান করার আবেদন জানিয়েছে।
ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণাকে অভিনন্দন জানিয়ে রোববার সিরিয়ার রাক্কা শহরে জিহাদি যোদ্ধারা মিছিল করেছে। সাইট মনিটরিং সার্ভিস জানায়, অনলাইনে পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায় তারা গাড়ি থেকে পতাকা ধরা হাত নেড়ে ও অস্ত্র উঁচিয়ে এ ঘোষণাকে অভিনন্দিত করছে।
অন্য একটি ভিডিওতে সীমান্ত বিলোপের আহ্বান জানিয়ে সিরিয়ার উত্তরাংশে আল হাকসাহ প্রদেশ ও ইরাকের নিনেভেহ প্রদেশের মধ্যকার সীমান্ত চৌকি বিলুপ্ত করার পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, আমরা ইসলামী উম্মাহকে জানাতে চাই যে, আমরা এখন ইরাকে রয়েছি। সাইকস-পিকোট চুক্তির অধীনে যে সীমান্ত তৈরি করা হয়েছিল আমরা তা ভেঙে দিয়েছি। এখন কোনো মুসলমান পাসপোর্ট ছাড়াই ইরাকে প্রবেশ করতে পারবে। উল্লেখ্য, ১৯১৬ সালে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইকস ও ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিকোটের মধ্যকার গোপন চুক্তিতে অটোম্যান সাম্রাজ্য ভেঙে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সীমান্ত রেখা আঁকা হয়।
ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া  (আইসিস) রোববার ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করে। ওয়েবসাইট ও টুইটারে পোস্ট করা বিবৃতিতে মুখপাত্র আবু মুহাম্মদ আল আদনানি বলেন, সিরিয়ার আলেপ্পো প্রদেশ থেকে ইরাকের দিয়ালা প্রদেশ পর্যন্ত এ রাষ্ট্র বিস্তৃত। এখন থেকে আর ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া নয়, এর সরকারি নাম দ্য ইসলামিক স্টেট বা ইসলামী রাষ্ট্র।  আইসিসের শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদী এর রাষ্ট্রপ্রধান বা খলিফা। সকল মুসলিমের তিনি খলিফা। তার প্রতি আনুগত্য ঘোষণার জন্য সকল শাখা সংগঠনের প্রতি বিবৃতিতে আহ্বান জানানো হয়।
আরবি, ইংরেজি, জার্মান, ফরাসি ও রুশ ভাষায় প্রচারিত বিবৃতিতে বলা হয়, আইসিস খিলাফত বা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আইনি চাহিদা পূরণ করেছে এবং বর্তমান সকল জিহাদি সংগঠন ও বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা নয়া খলিফা ইব্রাহিমের (আল বাগদাদীকে আইসিসের দেয়া নাম) প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে ধর্মীয়ভাবে দায়বদ্ধ।
ব্রুকিংস দোহা সেন্টারের ভিজিটিং ফেলো চার্লস লিস্টার বলেন, আইসিসের এ ঘোষণা উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য বহন করে। এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, কিন্তু এটা ঠিক যে ইসলামী  খিলাফত বা ইসলামী রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়টি ৯/১১-এর পর  আন্তর্জাতিক জিহাদবাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। তিনি বলেন, এ ঘোষণার প্রতিক্রিয়া হবে বিশ্বব্যাপী যেহেতু আল কায়দা ও তার সহযোগীদের এবং অন্যান্য সংগঠনকে ইসলামী রাষ্ট্রকে সমর্থন ও যোগদান অথবা তার বিরোধিতার পথ গ্রহণ করতে হবে।
উপসাগরীয় আরব দেশগুলো যেমন সউদী আরব ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রকাশ্য ঘোষণাকে বিপজ্জনক বলে মনে করতে পারে। এটাকে তাদের ক্ষমতা ও রাজতন্ত্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ বলে গণ্য করা হতে পারে।
নিউইয়র্কের কনসালটেন্সি সুফান গ্রুপের মতে ১২ হাজার যোদ্ধা সিরিয়ায় গমন করে। এর মধ্যে ৩ হাজার ছিল বিদেশি  যারা ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ, আমেরিকা, অন্যান্য আরব দেশ ও ককেশিয়ার অধিবাসী। পশ্চিমা যোদ্ধাদের শতকরা ৮০ ভাগই আইসিসের সাথে যোগ দিয়েছে। ব্রিটেনের বিদেশি গোয়েন্দা বিভাগ এমআই৬-এর সন্ত্রাস দমন প্রধান রিচার্ড ব্যারেট বলেন, আল বাগদাদী বিস্ময়কর সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন- তিনি একের পর এক শহর ও স্থান দখল করেছেন, বিপুলসংখ্যক যোদ্ধাকে সমবেত করেছেন।
ডি ডব্লিউর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য নিজের নিরাপত্তা। ইরাকের ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি তার কাছে পরবর্তী বিবেচনা বা গৌণ বিষয়। বাস্তব সত্য যে, ইরাক ভেঙে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের তেমন কিছু যায় আসে না। যুক্তরাষ্ট্রে ওবামার জনপ্রিয়তা বর্তমানে নি¤œ পর্যায়ে। কিন্তু ইরাক প্রসঙ্গে অধিকাংশ আমেরিকান তাকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র আইসিসকে স্বল্প মেয়াদে দুর্বল করতে চায়, আরো ভালো হয় তাকে তাড়িয়ে দিতে পারলে। সে কারণেই সে ইরাকে সামরিক উপদেষ্টা পাঠিয়েছে, ইরানের সাথে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করছে। সে কারণেই জন কেরি সউদী আরব ও অন্য ধনী উপসাগরীয় দেশগুলোকে বলেছেন আইসিসকে প্রশ্রয় দেয়া বা অর্থ যোগানো বরদাশতযোগ্য নয়। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে- যদি আইসিস বাগদাদে ঢুকেই পড়ে। সবার জানা যে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ দূতাবাস রয়েছে বাগদাদে- জনবলের সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজার। যদি ইরাকি সেনাবাহিনীর পতন ঘটে তবে সে কূটনীতিকগণ ও তাদের পরিবারবর্গকে কয়েকদিনের মধ্যেই সরিয়ে নিতে পারবে। পারস্য উপসাগরে বিমানবাহী জাহাজসহ তার কমপক্ষে ৮টি যুদ্ধ জাহাজ রয়েছে। তারা এ কাজটি করতে পারবে যদি সে রকম সময় সময় সত্যিই আসে। সূত্র রয়টার্স, এপি, এএফপি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button