আহমাদিনেজাদের অনাড়ম্বর বিদায়
ইরানের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরাইলের কট্টরবিরোধী ড. মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। গতকাল ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ অফিস তার। টানা দুই বছর ক্ষমতায় থাকা আহমাদিনেজাদের উত্তরসূরি হচ্ছে উদারপন্থী হাসান রৌহানি। সউদী বাদশা ফাহাদের আত্মীয়ের মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়া এ খবর জানিয়েছে। আগামীকাল ৪ আগস্ট শপথ নেবেন গত ১৪ জুনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হন রৌহানি।
৮ বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অনাড়ম্বরভাবে বিদায় নিচ্ছেন আহমাদিনেজাদ। তার বিদায় উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে আপত্তি জানান বিশ্বের দরিদ্র রাষ্ট্রপ্রধানগুলোর একজন আহমাদিনেজাদ। সংবর্ধনার অর্থ গরিবি মোকাবিলার জন্য ব্যয় করতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মাহমুদ আহমাদিনেজাদ এর আগেও এধরনের নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি তার নিজের ব্যবহৃত গাড়িটি বিক্রি করে স্বল্প আয়ের লোকদের আবাসন সমস্যা সমাধানে নেয়া প্রকল্পে দান করে দিয়েছেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা মেহর জানিয়েছে, রাষ্ট্রপ্রধানের পদ ছেড়ে দেয়ার পর একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে আহমাদিনেজাদের। জাতীয় সাংস্কৃতিক বিপ্লবী উচ্চ পরিষদের সর্বশেষ বৈঠকে তার পরিকল্পনাকে অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। রাজনীতিতে প্রভাব ও নিজের উপস্থিতি ধরে রাখতে সাবেক প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে স্থাপনের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ওই কার্যালয়ের প্রধান পরিচালক হবে মাহমুদ আহমাদিনেজাদ।
অবসর সময়টায় লেখালেখি আর প্রকাশনার সঙ্গেও জড়িত থাকতে চান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে ‘শয়তান’ বলা এ ইরানি কট্টরপন্থী নেতা। গত আট বছর ধরে তার প্রশাসনকে নানাভাবে সহযোগিতা করার জন্য তিনি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান। প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ বলেন, যারা তার প্রশাসনের সঙ্গে একমত হয়েছেন কিংবা তার প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন সবাই মূলত ইসলামী বিপ্লবের আদর্শকে সামনে রেখেই কাজ করেছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা পাশাপাশি থেকে কাজ করেছি এক আল্লাহ ও ন্যায়বিচারের পতাকা তুলে ধরার জন্য। এ কারণে যারা গত আট বছর ধরে কষ্ট সহ্য করে কাজ করেছেন সেইসব সাংবাদিককে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
২০০৫ সালে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে আহমাদিনেজাদ ক্ষমতায় আসেন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হন। সাংবিধানিক বাধা থাকায় ২০১৩ সালের নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও কড়াকড়ি শর্তেও নিজস্ব পরমাণু কর্মসূচিকে এগিয়ে নেন তিনি। ইসরাইলের আশঙ্কা, পরমাণু অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে ইরান। মহৎ উদ্দেশ্যের কথা বলে গোপনে অস্ত্র তৈরি পরমাণু কর্মসূচি চালাচ্ছে এমন অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের। কিন্তু তেহরান বরাবরই বলছে, তাদের এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। সূত্র : ওয়েবসাইট।