বাজেট সংকটে মার্কিন সেনাবাহিনী
বাজেট সঙ্কটে ভুগছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। রাশিয়া-চীন যেখানে ক্রমবর্ধমানহারে সামরিক ব্যয় বাড়াচ্ছে সেখানে মার্কিন সেনাবাহিনীর বাজেট কমছে। সম্প্রতি রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
খবরে বলা হয়, নানা ধরনের প্রতিকূলতার দরুন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন সামরিক ব্যয় ক্রমান্বয়ে কমাতে হচ্ছে। ২০০৯ সালে মার্কিন সামরিক ব্যয় ছিল প্রায় সাতশো বিলিয়ন ডলার।
কিন্তু ২০১৫ সালের জন্য ৪৯৬ বিলিয়ন ডলার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। অবশ্য এর সঙ্গে আফগানিস্তানের জন্য পৃথকভাবে ৭৯ বিলিয়ন ডলার রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সামরিক কৌশল ও বিশ্ব অধ্যয়ন কেন্দ্র (সিএসআইএস) ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ২১ শতাংশ সামরিক বাজেট সংকোচনের পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু একই সময়ে চীন, রাশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশই ক্রমান্বয়ে সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে চলছে। ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়া প্রায় ৩০ শতাংশ এবং চীন ৪০ শতাংশেরও বেশি সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগর, আফগানিস্তান, লিবিয়া, মালি ও সিরিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ আগেই ছিল। রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল, নাইজেরিয়ায় জঙ্গি সংগঠন বোকো হারামের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। আর ইরাকের ইসলামি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর মিত্রদের নতুন করে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।
এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাবিদদের জন্য সামরিক ব্যয়ের সংকোচন কঠিন কাজে পরিণত হয়েছে। তার ওপর প্রায় প্রতি মাসেই নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সমস্যার সমাধানে সেনা মোতায়ন দরকার হলেও বাজেট সংকটের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।
উত্তর কোরিয়া ও ইরান সমস্যা এখনও শেষ হয়ে যায়নি উল্লেখ করে সামরিক কৌশল ও বিশ্ব অধ্যয়ন কেন্দ্রের ফেলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতি-সংক্রান্ত ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ক্যাথলেন হিকস বলেন, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী কঠিন সময় পার করছে।
কয়েক বছরব্যাপী যুদ্ধে সামরিক ব্যয় অনেকাংশে বাড়িয়েছে। সামরিক ব্যয় বিশ্লেষকদের হিসাবমতে, আফগানিস্তানে একজন সাধারণ সেনার পেছনে বছরে অন্তত ২০ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি খরচ হচ্ছে। তদুপরি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সংকট ওয়াশিংটনকে আরও চিন্তায় ফেলেছে।
গত বছরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক থেকে পুরোপুরি সেনা ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি ইরাক ও লেবাননে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা মার্কিন সরকারকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। উপসাগরীয় অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে বিশেষ বাহিনীসহ কয়েক শত মার্কিন সেনা মোতায়েন রাখতে হচ্ছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক একাডেমির এক বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সেনাবাহিনী ব্যবহারে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
সম্প্রতি পেন্টাগনের অর্থবিষয়ক প্রধান রবার্ট হাল রয়টার্সকে জানান, ইরাকে যুদ্ধের জন্য নতুন করে অর্থ ব্যয় নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ইউরোপের জন্যও সামরিক ব্যয় খুব একটা বাড়বে না । অতিরিক্ত এক বিলিয়ন ডলারের মতো যোগ হতে পারে ।
এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বে সর্বোচ্চ সামরিক ব্যয় করে থাকে। বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কেবল যুক্তরাষ্ট্রই করে ।
যেখানে অধিকাংশ দেশই প্রতিবেশী দেশের তুলনায় সামরিক শক্তি বাড়িয়ে চলছে সেখানে যুক্তরাষ্ট্র খুব কমই সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে।
গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জেনারেল মার্টিন ডেম্পসি সামরিক কর্মকর্তাদের অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা ঝুঁকিতে বিশ্বাসী। বাজেট সংকটের কারণে আমাদের অধিক ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। আশা করছি এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।
অস্ট্রেলিয়ার ‘ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস’ নামক প্রতিষ্ঠানের সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে গত সাত বছরে বিশ্বব্যাপী সংঘাত উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করা হয়। যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় মাথা ব্যথার কারণ।