সমুদ্রসীমার রায় ঢাকা ও দিল্লির কাছে হস্তান্তর
বাংলাদেশ ও ভারতের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের রায় নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী সালিসি আদালত সোমবার ঢাকা ও দিল্লির কাছে হস্তান্তর করেছে। আদালতের বিধি অনুযায়ী এ রায় ২৪ ঘণ্টার আগে কোনো পক্ষ জনসমক্ষে প্রকাশ করতে পারবে না। তাই আগামীকাল দুই দেশ রায়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ করবে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরী বলেন, ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের রায় সরকারের কাছে এসেছে। এ রায় পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আগামীকাল রায়ের ব্যাপারে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানানো হবে।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে আলোচনার পর মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর সালিসি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ জার্মানির হামবুর্গভিত্তিক সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে (ইটলস) মামলা করেছিল। আর ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মামলা করেছিল স্থায়ী সালিসি আদালতে। ২০১২ সালের ১৫ মার্চ ইটলস বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি করে রায় দেয়।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায়গুলোর ফলে সমুদ্রসীমা নিয়ে বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী দেশ দুটির দীর্ঘ বিরোধের অবসান হতে যাচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বিরোধবিহীন ব্লক তৈরীতে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে। এতে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী আন্তর্জাতিক কোম্পানীগুলো বাংলাদেশের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠবে।
সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার আগে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশ যে ব্লকগুলো তৈরী করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছিল তার অধিকাংশের বিরুদ্ধেই ভারত ও বাংলাদেশ আপত্তি জানিয়েছিল। এমনকি দরপত্রে অংশ না নিতে প্রতিবেশী দেশ দুটি আন্তর্জাতিক কোম্পানীগুলোকে প্রভাবিত করেছিল। ফলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করলেও বাংলাদেশ তাতে কাক্সিত সাড়া পায়নি।
স্বাধীনতার পর থেকেই দুই প্রতিবেশীর সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারনে বাংলাদেশ দফায় দফায় আলোচনা চালিয়ে আসছিল। ২০০৮ সালে এ আলোচনা নতুন মাত্র পায়। কিন্তু আলোচনায় কোনো সমাধান না আসায় পরবর্তী বছর অক্টোবরে বাংলাদেশ দুই দেশের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারনে আন্তর্জাতিক আদালতের আশ্রয় নেয়।
ইটলসের রায়ে বাংলাদেশ ৭০ হাজার বর্গ কিলোমিটার বিরোধমুক্ত সমুদ্রাঞ্চল পেয়েছে। বাংলাদেশের নিজস্ব বিরোধমুক্ত সমুদ্রাঞ্চল রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার। আর ভারতের সাথে বিরোধপূর্ণ অঞ্চল রয়েছে ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার। ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা চূড়ান্ত রায় পাওয়ার পর বাংলাদেশের মোট সমুদ্রাঞ্চলের পরিমাণ সুনির্দিষ্টভাবে জানা যাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গতকাল নেদারল্যান্ডস সময় সকাল ১০টায় এবং বাংলাদেশ সময় বেলা ২টায় স্থায়ী সালিসি আদালত এই রায় ঘোষণা করেছে। সমুদ্রসীমা বিষয়ক আন্তর্জাতিক আদালতগুলোর রায়ই চূড়ান্ত। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা সুযোগ নেই।
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অবস্থিত স্থায়ী সালিসি আদালতে ২০১৩ সালের ৯ থেকে ১৮ ডিসেম্বর সমুদ্রসীমা নির্ধারণ বাংলাদেশ ও ভারত যার যার পে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। শুনানি শেষে আদালতের থেকে বলা হয়, কার্যবিধির ১৫ ধারা অনুযায়ী ছয় মাস পর এই দুই নিকট প্রতিবেশীর সমুদ্রসীমা নির্ধারণের রায় দেয়া হবে। সে হিসাবে গত ১৮ জুন রায় ঘোষণার কথা ছিল। তবে তা কিছুটা বিলম্বিত হয়।
বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা নির্ধারণে ন্যায্যতাকে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছে। আর ভারত সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করতে চেয়েছে। ইতোপূর্বে ইটলস এই দুই পদ্ধতির সমন্বয়ে রায় দিয়েছিল, যা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার মেনে নিয়েছে। নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী সালিসি আদালতের রায়ও এই দুই পদ্ধতির সমন্বয়ে দেয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সাথে ঢাকা আসা দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অবশ্যই দুই পক্ষ মেনে নেবে।