নিউ ইর্য়কে রকমারী ও বাহারী ইফতারের বাজার জম জমাট
তৈয়বুর রহমান টনি, নিউ ইর্য়ক থেকে: নিউ ইর্য়কের ইফতারির বিশেষ খ্যাতি রয়েছে এমন এলাকার নাম করলে প্রথমেই আসবে জ্যাকসন হাইটসের এর নাম।
পুরনো ঢাকার স্বাদ ও ঐতিহ্যর সাথে নিউ ইর্য়কেও তৈরী হয় বাহারী আর রকমারী ইফতারি। অনেকের মতে, ১৭০২ সালে ঢাকার দেওয়ান মুর্শিদ কুলি খাঁ চকবাজারকে আধুনিক বাজারে পরিণত করেন। তখন থেকেই প্রতি রমজানে চকবাজারে জমকালো ইফতারি বাজার বসে। সেই থেকে আজও তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় নিউইর্য়কেও ইফতারির বাজার শুরু করে আমাদের ধারনা ১৯৮৮ থেকে। পেঁয়াজু, বেগুনীর মতো দু’তিনটি পদ দিয়ে তাদের যাত্রা শুরু। এখন তাদের ইফতারির সুনাম ছড়িয়ে গেছে চারদিকে।
সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান শুরু হয়েছে, আজ অষ্টম রোজা শেষ হলো। দেশে-বিদেশে অবস্হানরত মুসালমানগন যথাযথ মর্যাদা আর ধর্মীয় উদ্দীপনায় পালন করছেন রমজান। গত রবিবার ২৯ জুন থেকে পুরো আমেরিকাতে ৯৯% মুসলমানরা রোজা শুরু করেছেন। সন্ধ্যার বেশ আগে থেকেই রেষ্ট্রুরেন্ট গুলোতে ইফতারি কেনার জন্য ভিড় লেগে যায়। এবার অনেক দোকান ২০টি থেকে ৫০টি পদ দিয়ে সাজিয়েছে তাদের ইফতার বাজার। এরমধ্যে রয়েছে খাসি ও মুরগীর হালিম, গরু/খাসির চাপ, শিক কাবাব, পরাটা, কাচ্চি বিরিয়ানি(খাসি), জিলাপী, দইবড়া, জালি কাবাব/ মুঠিয়া কাবাব, কিমার চপ, আস্ত মুরগির রোস্ট, খাসির লেগ রোস্ট, সবজী খিচুরী, ভুনা খিচুরী।
জ্যাকসন হাইটসের ‘খাবার বাড়ী’ এর ইফতার আয়োজন সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম স্বত্বাধিকারী হারুন ভূইয়া বলেন, রোজাদারদের ইফতারের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে।
কারণ, আমরা কখনো খাবারের মানের ব্যাপারে আপোস করি না। আমরা সবমসয় মানসম্মত এবং ক্রেতাদের চাহিদার উপর নির্ভর করে ইফতার তৈরী করে থাকি। এক প্রশ্নের জবাবে হারুন ভূইয়া বলেন, ইফতারির দাম তুলনামূলক একটু বেশি। তবে মানের সাথে আপোস না করায় ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে আমাদের ইফতার কিনেন।
এই এলাকা সহ অন্যান্য এলাকায় বহু বছর ধরে সুনামের সাথে ইফতারি বিক্রি করছে আরোও কয়েকটি দোকান। এই গুলির মাঝে অন্যতম হলো প্রিমিয়াম সুইটস এন্ড রেষ্ট্রুরেন্ট, হাট বাজার, ঢাকা গার্ডেন, ফুর্ড কোর্ট, আব্দুল্লাহ সুইটস এন্ড রেষ্ট্রুরেন্ট ইত্যাদি। জ্যামাইকায়- সাগর রেষ্ট্রুরেন্ট, ঘরোয়া, তাজমহল, ষ্টার কাবাব, কিং কাবাব, হাজীর বিরিয়ানী, ব্রুকলীনের ঘরোয়া রেষ্ট্রুরেন্ট, ব্রন্কসের নিরব রেষ্ট্রুরেন্ট, ওজন পার্কের বিসমিল্লাহ রেষ্ট্রুরেন্ট, এ্যষ্টোরীয়ার আলাউদ্দীন, সুন্দরবন, ম্যানহাটন সহ বিভিন্ন বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকায় রেষ্টুরেন্ট গুলিতে শুরু হয়েছে প্রথম রোজা থেকে মজাদার রকমারি ইফতারী বিক্রি। ক্রেতা সাধারণের চাহিদা ও স্বার্থের সাথে মিল রেখে ৪.৯৯ থেকে ৭.৯৯ ডলারে পর্যন্ত ইফতারি বক্স পাওয়া যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে হাট বাজার প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম স্বত্বাধিকারী মহাসীন ননি ও কেশব সরকার বিদ্যূত বলেন, পুরানো ব্যবসা আমাদের। জিলাপী দিয়ে শুরু করে এখন অনেক পদের চিনির জিলাপি, গুড়ের জিলাপি ও ইফতার রয়েছে আমাদের বাজারে। এটা সম্ভব হয়েছে, কেবল ক্রেতাদের ভালবাসার জন্য। তিনি বলেন, ইফতার বিক্রিকে আমরা ব্যবসা হিসেবে দেখি না, দেখি সেবা হিসেবে। তিনি বলেন, তাদের কাচ্চী বিড়ানী, পিঠা ইত্যাদর সুনাম ক্রেতাদের মুখে মুখে। এছাড়া হালিম, খাসি/মুরগীর রোস্ট, গরুর চাপ, ছোলা, বেগুনীতো রয়েছেই।
নিউ ইর্য়কে অনেক রেষ্টুরেন্টে পাওয়া যাচ্ছে পিঁয়াজু থেকে দইবড়া, হালিম থেকে ফিরনি, বিভিন্ন মাংসের রোস্ট, কাবাবসহ নানা বাহারি নামের ও স্বাদের খাবার দিয়ে সাজানো এসব ইফতারি বাজার। রোজাদারদের রসনা মেটাতে যেন আয়োজনের কমতি নেই। আর এই ইফতারি বাজারকে কেন্দ্র করে বদলে গেছে পরিচিত দৃশ্য। এই এলাকার একজন ব্যবসায়ী ফাহাদ সোলেমান জ্যাকসন হাইটসে ছুটে আসেন নানা পদের ইফতারি কিনতে। তিনি বলেন, খাবার বাড়ীর বেশ নাম আছে। তাই এখান থেকে ইফতারি কিনতে এসেছি।
তিনি হালিম আর কাবাব কিনবেন বলে জানালেন।
ব্রন্কসের নিরব রেষ্ট্রুরেন্টে কাবাব ছাড়াও রয়েছে পরোটা, জিলাপি, সবিজবড়াসহ বিভিন্ন রকমের ইফতার। নিরবের রেষ্ট্রুরেন্টের স্বত্তাধিকারী মুহাম্মদ খোকন বলেন, আমরা সবসময় ক্রেতাদের চাহিদা গুরুত্ব দেই। এবারের রমজানে অনেক রেসিপি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীতে রেসিপির সংখ্যা আরও বাড়বে।