মারিয়াম সেন্টারকে ঋণমুক্ত করতে সকলের সহযোগিতা কামনা
০ সাড়ে ৩ মিলিয়ন পাউন্ড ঋণ ০ ১২ জুলাই শনিবার লাইভ টিভি অ্যাপিল ০ স্ট্যান্ডিং অর্ডার সেটআপ করার আহবান
মারিয়াম সেন্টারকে ঋণমুক্ত করতে কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের ম্যানেজমেন্ট কমিটির নেতৃবৃন্দ। গত ৮ জুলাই মঙ্গলবার বিকেলে লন্ডন মুসলিম সেন্টারের সেমিনার রুমে বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের সম্মানে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে নেতৃবৃন্দ এ আহবান জানান।
এসময় এক সংক্ষিপ্ত প্রেসবিফিংয়ে মসজিদ নেতৃবৃন্দ বলেন, গত বছর রামাদ্বানের আগে সেন্টারটি খুলে দিতে গিয়ে মোটা অংকের অর্থ ক্বরজে হাসানা হিশেবে সংগ্রহ করতে হয়। এই ঋণ পরিশোধ করতে বিভিন্নভাবে ফান্ডরেইজিং অব্যাহত আছে। আগামী ১২ জুলাই শনিবার বিকেল ৩টা থেকে ফজর পর্যন্ত চ্যানেল এস টিভিতে লাইভ ফান্ডরেজিং অ্যাপিল চলবে। এতে বিগতদিনের মতো কমিউনিটির মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আসবেন বলে তাঁরা আশা করছেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের সেক্রেটারি মোঃ আইয়ুব খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক দেলওয়ার খান। এসময় উপস্থিত ছিলেন মসজিদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এবং ইমাম ও খতীব শায়েখ আব্দুল কাইয়ুম। শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম হাফিজ আবু তাইয়্যেব।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মারিয়াম সেন্টারের নিার্মাণকাজ শুরু হয়েছিলো ২০০৯ সালের জুন মাসে। কমিউনিটির মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত সহযোগিতায় গত বছর রামাদ্বানের আগে আর্থাত ২০১৩ সালের জুন মাসে সেন্টারটি খুলে দেওয়া হয়। ফলে মারিয়াম সেন্টারে এখন অতিরিক্ত আরো ২ হাজার মুসল্লিসহ পুরো মসজিদে প্রায় ৮ হাজার মুসল্লি তারাবিহ ও জুমার নামাজ আদায় করার সুযোগ পাচ্চেছন।
এছাড়া মারিয়াম সেন্টারের পূর্বপাশে বিলডার আরিফ জাবাদানীর মালিকানাধীন কিছু জায়াগা তিনি মসজিদের জন্য উতসর্গ করে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি মারিয়াম সেন্টারের গ্রাউন্ড ফ্লোরের হলটি পূর্ব দিকে সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে ইস্ট লন্ডন মসজিদের মূল হলের সাথে গ্রাউন্ড ফ্লোর মিলে একটি বিশাল হলে পরিণত হবে। এ ব্যাপারে একটি প্লানিং পারমিশন এপ্লিকেশন কাউন্সিলের বিবেচনাধীন রয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে কাজ শুরু হতে পারে।
যেভাবে নির্মিত হলো এই বিশাল ভবন
৯ তলা বিশিষ্ট এই ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৯ মিলিয়ন পাউন্ড। আর এই অর্থ এসেছে কমিউনিটির মানুষের দান থেকে। মসজিদে নিয়মিত ফান্ডরেইজিং, রান ফর ইউর মস্ক ক্যাম্পেইন, লাইভ টিভি অ্যাপিল, ফান্ডরেইজিং মান্থ পরিচালনা ও রামাদ্বান মাসে বিশেষ ফান্ডরেইজিং কর্মসূচির মাধ্যমে এই বিশাল ব্যয় মেটানোর চেষ্টা করা হয়। মারিয়াম সেন্টার নির্মাণের শুরুতে কথা দেওয়া হয়েছিলো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ভবনের কাজ শেষ করে জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ফলে অর্থের অভাবে ভবনের কাজ আটকে না রেখে বরং ক্বরজে হাসানা বা সুদমুক্ত লোন সংগ্রহ করে কাজ শেষ করা হয়েছে। কারণ তখন ভবনের কাজ সম্পন্ন করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিলো। একে তো মসজিদে মানুষের স্থান সংকুলান হচ্চিছলোনা। উপরন্তু মহিলাদের নামাজে খুব অসুবিধা হচ্চিছলো। তাছাড়া ফিউনারেল সার্ভিস নির্মাণাধীন থাকায় লাশ গোসল দেওয়া ও জানাজার নামাজ পড়ায় বেশ অসুবিধা হচ্চিছলো। অপরদিকে সেন্টার নির্মাণাধীন থাকায় ফিহ্বগেইট স্ট্রিট দিয়ে মসজিদে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মানুষকে শুধু হোয়াইটচ্যাপেল রোডের মুল প্রবেশপথ দিয়ে প্রবেশ করতে হতো। এসব অসুবিধাজনিত কারণে ক্বরজে হাসানা সংগ্রহ করে সেন্টারের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হয়।
আরো সাড়ে ৩ মিলিয়ন পাউন্ড প্রয়োজন
মারিয়াম সেন্টারকে ঋণমুক্ত করতে এখনও সাড়ে ৩ মিলিয়ন পাউন্ডের প্রয়োজন। কারণ যারা এই সেন্টারের কাজ শেষ করতে ক্বরজে হাসানা বা সুদমুক্ত ঋণ দিয়েছেন, তাদের অর্থ ফিরিয়ে দিতে হবে। বিভিন্নভাবে ফান্ডরেইজিং ক্যাম্পেইন অব্যাহত রেখে ক্বরজে হাসানা পরিশোধের চেস্টা চলছে। গত মার্চ মাসকে ফান্ডরেইজিং মান্থ ঘোষণা করে প্রায় ১৫০০ স্ট্যান্ডিং অর্ডার সংগ্রহ করা হয়েছে। এখনও অনেকেই স্ট্যান্ডিং অর্ডার সেট-আপ করছেন। দানশীল মানুষ ৫ পাউন্ড থেকে শুরু করে ১০০ পাউন্ড পর্যন্ত স্ট্যান্ডিং অর্ডার করছেন। চলতি রামাদ্বানে সকলকে একটি করে স্ট্যান্ডিং অর্ডার সেট-আপ করার আহবান জানিয়ে বলা হয়, হতে পারে এটি ৫ পাউন্ডের একটি স্ট্যান্ডিং অর্ডার। কিন্তু মাসে ৫ পাউন্ড দিলে বছরে ৬০ পাউন্ড হয়ে যাবে। প্রবাদে আছে, বিন্দু বিন্দু জল থেকে সিন্ধু বা সাগর হয়। আমরাও মনে করি, এই ৫ পাউন্ডের স্ট্যান্ডিং অর্ডারে প্রাপ্ত অর্থসাহায্য দিয়ে একদিন আমাদের সাড়ে ৩ মিলিয়ন পাাউন্ডের ঋণও পরিশোধ হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
আল-হামরা ওয়াল উন্মুক্ত করা হয়েছে
মারিয়াম সেন্টারের প্রবেশপথে আকর্ষণীয় স্থাপনা হচ্চেছ আল-হামরা ডোনার ওয়াল। দাতাদের নাম অংকিত আকর্ষনীয় এই ওয়ালটি ২০১৩ সালের রামাদ্বানের শুরুতে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এই ওয়াল উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর মসজিদের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি হয়েছে। মাত্র ১৫শত পাউন্ড দান করে যেকেউ উক্ত ওয়ালে একটি টাইল ক্রয় করে নিজের অথবা প্রিয়জনের নাম লিপিবদ্ধ করে রাখতে পারবেন। ১৫০০টি টাইলের মধ্যে আর স্বল্প সংখ্যক টাইল বাকী আছে।
মারিয়াম সেন্টারে যা থাকছে
মারিয়াম সেন্টার খুলে দেওয়ার পর অতিরিক্ত আরো ২ হাজার মানুষ নামাজ আদায়ের সুযোগ পাচ্চেছন। বিশেষ করে মহিলাদের জন্য বড় পরিসরে আলাদা নামাজের সুব্যবস্থা হয়েছে। তাছাড়া নতুনভাবে বড় আকারে ফিউনারেল সার্ভিস চালু হওয়ায় এখন লাশ গোসল দেওয়া, কাফন পরানো, জানাজার নামাজ পড়া ইত্যাদি সহজ হয়েছে। এছাড়া ২০১৫ সালের সেপ্টে“রের মধ্যে মারিয়াম একাডেমী চালুর লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। এই একাডেমীতে মুলত মেয়েদের শিক্ষাদান করা হবে। প্রথম দিকে ১৫০ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন। তাদের শিক্ষাদানে থাকবেন বৃটেনে উচ্চচ শিক্ষিত অভিজ্ঞ শিক্ষকগণ।
নন-মুসলিমদের জন্য নির্মিত স্থায়ী এক্সিবিশন সেন্টারটি প্রাথমিকভাবে চালু হয়েছে। এখন প্রায় নিয়মিতই নন মুসলিমরা আসছেন। একসময় তাদেরকে মসজিদের ভেতরে ঢুকিয়ে নামাজের দৃশ্য দেখানো হতো। এখন এক্সিবিশন সেন্টার থেকে খুব সহজে তাদেরকে নামাজসহ অন্যান্য ধর্মীয় কর্মকান্ড দেখানো যায়। তবে এক্সিবিশন সেন্টারকে আরো আধুনিকায়ন ও সমৃদ্ধ করার কাজ চলছে। এছাড়াও মহিলাদের জন্য হেলথ এন্ড ফিটনেস সুবিধাসহ আরো নানা কল্যাণমুখী কার্যক্রম চালুর কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, ইফতার মাহফিলে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার অর্ধশতাধিক সাংবাদিক, সম্পাদক ও পৃষ্ঠপোষক উপস্থিত ছিলেন। এসময় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন বাংলা টিভির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সৈয়দ সামাদুল হক, এটিএন বাংলা ইউকের সিইও হাফিজ আলম বখশ, সাপ্তাহিক জনমতের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদক এমদাদুল হক চৌধুরী, সাপ্তাহিক বাংলা টাইমস এর প্রধান সম্পাদক তাজ রহমান, সাপ্তাহিক লন্ডন বাংলা সম্পাদক কে এম আবু তাহের চৌধুরী, সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইছির মাহমুদ, সাপ্তাহিক বাংলা পোস্ট সম্পাদক ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী, সাপ্তাহিক সুরমার বার্তা সম্পাদক কবি আব্দুল কাইয়ুম, সাংবাদিক হাসান হাফিজুর রহমান পলক, রেডিও প্রেজেন্টার মিসবাহ জামাল।