২৫বছর পূর্ণ করলো বিশ্বখ্যাত “লী-রাজ রেস্টুরেন্ট”
এনাম চৌধুরী: ব্রিটিশ রেস্টুরেন্ট ব্যবসার আইকন ব্রিটিশ-এশিয়ান ক্যারী ইন্ডাষ্ট্রির শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিশ্বখ্যাত “লী-রাজ” রেস্টুরেন্ট পঁচিশ বছরে পদার্পন করলো। ব্রিটিশ রাজ পরিবার থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের রাষ্ট্র প্রধান ও বিখ্যাত সেলিব্রেটিদের পছন্দের “লী-রাজ” রেস্টুরেন্ট ব্রিটেনে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার ক্ষেত্রে সাফল্যের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এক ফান্ডরেইজিং ডিনার পার্টির আয়োজন করে।
গত ২৬ জুন ব্রিটিশক্যারী এ্যাওয়ার্ডের ফাউন্ডার ও বিশ্বখ্যাত লী-রাজ রেস্টুরেন্ট এর সত্ত্বাধিকারী ও স্পাইস বিজনেস ম্যাগাজিনের সম্পাদক এনাম আলী এমবিই’র উদ্যোগে আয়োজিত এ ডিনার পার্টিতে বিপুল সংখ্যক আমন্ত্রিত অতিথি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সমাগম ঘটে।
অনুষ্ঠানের সাফল্যের অভিযাত্রায় ‘লী-রাজ’ পঁচিশ বছরে পদার্পণ করায় এ বছর বিশ্বখ্যাত প্যারা অলিম্পিয়ান লীজেন্ট ‘ডেভিড ওয়ার সিভিই-কে ফান্ডরেইজিং ডিনার পার্টি থেকে প্রাপ্ত পঁচিশ হাজার পাউন্ড প্রদান করা হবে বলে জানান এনাম আলী এমবিই। ডেভিট ওয়ার সিভিই প্যারা অলিম্পিয়ানে অংশগ্রহণকারী প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের কল্যাণে এ অর্থ তার একাডেমীর মাধ্যমে ব্যয় করবেন।
সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে লী-রাজ রেস্টুরেন্ট গত ২৫ বছরে মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশী অর্থ বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন চ্যারিটিতে প্রদান করেছে।
২৬ জুন আয়োজিত অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, লর্ড চ্যান্সেলর এবং সেক্রেটারী অব স্টেইট ফর জাস্টিস ক্রিস গেইলিং এমপি, মিসেস গ্রইলিং এবং চেলসি ফুটবল টিমের সাবেক ম্যানেজার ববি ক্যাম্পবেল সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের কল্যাণে এনাম আলী এমবিইর ‘লী-রাজ’ রেস্টুরেন্টের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার পাউন্ড সহায়তা প্রদানকে স্বাগত জানিয়ে অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা বলেন, ব্রিটিশ ক্যারী ইন্ডাষ্ট্রিতে এনাম আলী এমবিই সফলতার প্রবেশ দ্বার। তিনি ক্যারী ব্যবসাকে শিল্পে পরিচিত দিয়েছেন এবং ইউরোপ ছাড়িয়ে পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ থেকে সেলিব্রেটিদের কাছে পৌছে দিয়েছেন।
বক্তারা বলেন, একটা সময় ব্রিটিশরা ভাবতো ব্রিটেনের রেস্টুরেন্ট ব্যবসাগুলো ইন্ডিয়ানদের দ্বারা পরিচালিত। এনাম আলী এমবিই সেই ধারণাকেও পাল্টে দিয়ে প্রমাণ করেছেন ব্রিটেনের প্রায় শতভাগ সফল রেস্টুরেন্ট বাংলাদেশীরা পরিচালনা করছে এবং তারা সাফল্যের সাথে ব্রিটিশ ক্যারী ইন্ডাষ্ট্রির সুনাম বয়ে আনছে।
২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের একমাত্র অফিসিয়াল খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘লী রাজ’ রেস্টুরেন্ট সারা বিশ্ব থেকে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি এবং ক্রীড়াবিদদের কাছ থেকে যে খ্যাতি অর্জন করেছে সেটা ব্রিটিশ ক্যারী ইন্ডাষ্ট্রির জন্য সাফল্যের অনেক বড় এক সোপান। এনাম আলী এমবিই সাফল্যের সে অগ্রযাত্রা ‘লী-রাজ’ এর মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন। আমন্ত্রিত অতিথিরা লী-রাজ রেস্টুরেন্টকে ব্রিটিশ-বাংলাদেশীদের অহংকারের প্রতীক হিসেবে অভিহিত করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি লর্ড চ্যান্সেলর এন্ড সেক্রেটারী অব স্টেইট ক্রীস গ্রেইলী বলেন, ব্যবসার পাশাপাশি সমাজের মানুষের প্রতি যে নিজের দায়িত্বের প্রতি একজন ব্যবসায়ী কতটুকু সচেতন হওয়া প্রয়োজন সেটার উদাহরণ এনাম আলী এমবিই। তিনি বলেন, পৃথিবীতে মানুষের কর্ম বেঁচে থাকে, বেঁচে থাকে তার সততা, নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতা। স্বজাতির প্রতি যারা দায়িত্বশীল তারা অন্যান্যদের প্রতিও মুক্ত হস্ত হয়। এনাম আলী এমবিই লী-রাজ রেস্টুরেন্টের মাধ্যমে পৃথিবী ব্যাপী যেমন খ্যাতি কুড়িয়েছেন, তেমনি ব্রিটিশ ক্যারী এ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে সফলতার শীর্ষ বিন্দু ছুঁয়েছেন।
অনুষ্ঠানের আয়োজক লী-রাজ এর সত্ত্বাধিকারী ও ব্রিটিশ ক্যারী এ্যাওয়ার্ডের ফাউন্ডার এনাম আলী এমবিই তার বক্তব্যে বলেন, ব্যবসা করে আমি বিত্তশালী হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি। আমি স্বপ্ন দেখেছি এর মাধ্যমে আমি নতুন এক শিল্পের সৃষ্টি করতে। সকলের ভালবাসায় সেটা সম্ভব হয়েছে। এখন এ শিল্পকে আর ইন্ডিয়ান ক্যারী শিল্প বলে না। ব্রিটিশ বাংলাদেশী ক্যারী শিল্প হিসেবে সম্মান দেখায়। আমি এই ব্যবসায় আসার পর দেখেছি তখন আমাদের রেস্টুরেন্ট ব্যবসাটি ইন্ডিয়ান ক্যারী ব্যবসা হিসেবে অভিহিত করা হত। আমি এজন্য সেই ক্যাম্পেইনে মনোযোগ দিয়েছিলাম যে, এটা এন্ডিয়ান ক্যারী ব্যবসা নয়, এটা ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের গড়ে তোলা একটি শিল্প। আমরা বাংলাদেশীরাই ব্রিটিশ ক্যারী ইন্ডাষ্ট্রির প্রায় শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করছি। তিনি বলেন, বিগত প্রায় ৩৫ বছর থেকে আমি যে এলাকায় বসবাস করছি, সেখানেই আমার স্বপ্নের লী-রাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এখানকার মানুষের ভালবাসা এবং গ্রাহকদের চাহিদার কারনে আমি সফলভাবে লী-রাজের ২৫ বছর পূর্ণ করতে পেরেছি। খাবারের মান বিশ্বমানের হওয়ার কারনেই অলিম্পিকের মত বিশ্বসেরা ইভেন্টে ‘লীজ রাজ’ রেস্টুরেন্ট খাবার সরবরাহ করেছে। তিনি বলেন, বিগত ২৫বছরে আমি লী-রাজের মাধ্যমে প্রায় মিলিয়ন পাউন্ড বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চ্যারিটি সহায়তা প্রদান করতে পেরেছি। এবার প্যারা অলিম্পিকের লীজেন্ট ডেভিট ওয়ার সিবিই একাডেমীকে ২৫ হাজার পাউন্ড প্রদান করা হয়েছে। এর মূল কারণ সুবিধা বঞ্চিত ক্রীড়াবীদদের উৎসাহ প্রদান। এনাম আলী এমবিই লী-রাজ এর অগ্রযাত্রায় আগামী দিনগুলোতেও সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।