ফিলিস্তিনে মুসলিম নিধন, নীরব আরবসহ বিশ্ব বিবেক
চলছে পবিত্র রমজান মাস। ধর্মপ্রাণ মুসলমারা যখন সিয়াম সাধনায় ব্রত ঠিক তখনই ফিলিস্তিনে চলছে নারকীয় হত্যাকান্ড। নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে ফিলিস্তিনি নারী-শিশুসহ সাধারণ নাগরিকদের। কিন্তু অবাক ব্যাপার হচ্ছে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। জাতিসংঘ দায়সারা বিবৃতি দিয়ে দায়িত্ব এড়াতে চাচ্ছে। নিরব সৌদি আরবসহ গোটা আরব ভূমি।
মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহ পাক-এর রজ্জুকে আঁঁকড়ে ধর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।
ইহুদিবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনে নির্বিচারে মুসলমানদের হত্যা করছে; অথচ কোন মুসলিম দেশই এর আদৌ প্রতিবাদ করছে না।
হাদীস শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, সব মুসলমান মিলে একটা দেহের ন্যায়, দেহের কোন এক স্থানে আঘাত পেলে তা সারা দেহেই সঞ্চালিত হয় তাই ইসলাম ও শরীয়তের দৃষ্টিতে ফিলিস্তিনে মুসলমানদের উপর নির্যাতন বন্ধে পৃথিবীর ২৫০ কোটিরও বেশি মুসলমানের প্রত্যেকের প্রতিবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।
বিগত ৬৬ বছর ধরে ফিলিস্তিনিরা নিজ বসতি ভিটা ছেড়ে শরণার্থী হয়ে আছে এবং এখনও হচ্ছে! আর ১৯৪৮ সালের আগে ইসরাইল নামে কোনো রাষ্ট্র পৃথিবীতে ছিল না! উড়ে এসে জুড়ে বসার মত ব্যাপারটা। ধরুণ, আপনি নিজ বাড়িতে বসবাস করেন। একদিন অচেনা অজানা একদল লোক এসে বলল, আজকেই আপনার বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে! এখন থেকে এ বাড়ি আমাদের। ফিলিস্তিনে এমনটাই ঘটছে।
ফিলিস্তিনিদের ধরে ধরে নিয়ে যাওয়া একটা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার এমনকি ইসরাইলী কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি নেতারাও রক্ষা পান না, স্পিকার, মন্ত্রী এমপিসহ যে কোনো রাজনৈতিক নেতাকে ইচ্ছে করলেই ইসরাইল ধরে নিয়ে যায় আর তাদের খোঁজ পাওয়া যায় না। এমনি একজন ফিলিস্তিনি ফাতাহ নেতা মারওয়ান বারঘুতি কয়েকযুগ থেকে ইসরাইলী কারাগারে। ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের গুম, হত্যা, খুন যেন নিত্যসঙ্গী!
হিটলারকে যেভাবে ইহুদি হত্যাযজ্ঞের মূল নায়ক বলে প্রচার করা হয় আমার মনে হয় আসলে ঘটনা মোটেও তেমন নয়। ঘটনাটা ফুলে ফেঁপে প্রচার করা হয় সেভাবে কি আদৌ ঘটেছিল? এটাও তো হতে পারে ইউরোপ ইহুদি মুক্ত হতে চেয়েছিল তাই এই ঘটনাকে এমনভাবে প্রচার করে যাতে সব ইহুদি ইউরোপ ছেড়ে পালায়! আদতে হয়েছেও তাই! ইহুদিরা দলে দলে পর্যায়ক্রমে ইউরোপ ছেড়ে ফিলিস্তিনে চলে যায়। ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলের ববর্রতার কারণে হিটলারের ইহুদি নিধনের ঘটনাকে অনেকেই ফুলে ফেঁপে প্রচার করেন। ঐ ঘটনা যদি ইউরোপে ঘটে থাকে তাহলে ফিলিস্তিনের জনগণকে কেন এজন্যে ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে? ফিলিস্তিনের জনগণ কি অপরাধ করেছে? দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তো তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না, তবুও কেন ঐ ঘটনার অজুহাতে ৭০ লক্ষেরও বেশী ফিলিস্তিনিকে শরণার্থীতে পরিণত করা হলো এবং ৬০ বছর ধরে তারা শরণার্থীর জীবন যাপন করছে?
আজকের যারা ফিলিস্তিনি তারা সেই চার হাজার বছরের আগে থেকেই সেখানকার অধিবাসী। গবেষণা করে এ কথা প্রমান করেছেন খোদ তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক শোলমো স্যান্ড। তিনি দেখিয়েছেন আজকের হিব্রু জাতির বর্তমান বংশধর যদি থেকে থাকেন তা হলো ফিলিস্তিনের বর্তমান মুসলিম ও খ্রিস্টান সমপ্রদায়। আর আজকের ইসরাইলের ইহুদীরা তো এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ কথা আগেই বলা হয়েছে। তারপরেও এই সব হাস্যকর যুক্তি কোন বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষ বিশ্বাস করতে পারে না। যদি তা মেনে নেই তাহলে বর্তমানের আমেরিকার উচিত্ রেড ইন্ডিয়ানদের আমেরিকা ছেড়ে দিয়ে তাদের পূর্বভুমি ইউরোপে চলে আসা। অস্ট্রেলিয়ারও উচিত্ তাদের আদিবাসীদের কাছে তাদের ভূমি ফিরিয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে বিদায় নেয়া। ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ড এরা বর্তমানে দখলকৃত সব ভূমি ফিরিয়ে দিক মাওরিদের কাছে। এরপরে আরো ইতিহাস আছে। ইহুদীদের জন্য যখন রাষ্ট্র খোঁজা হয় শুরুতে তখন ফিলিস্তিনের কথা বিবেচনায় আনা হয়নি। প্রথমে ইহুদীরা ব্রিটিশদের কাছে দাবি করেছিল উগান্ডা বা আর্জেন্টিনায় তাদের জন্য আলাদা একটা বাসস্থানের জন্য কিন্তু তা কোন কারণে প্রত্যাখ্যাত হয়। তত্কালীন তুর্কি সুলতান আব্দুল হামিদের কাছে জায়নিস্টরা আবেদন করেছিল তুর্কি সুলতানের কাছ থেকে কিছু জমি কিনে ইহুদী রাষ্ট্র পত্তন করার জন্য কিন্তু সুলতান জবাব দিয়েছিলেন, ‘ইহুদীদের এক ইঞ্চ ভূমিও দেয়া হবে না।’
প্রায় ৭০ লাখের মত ফিলিস্তিনি পার্শ্ববর্তী আরবদেশগুলোতে সেই ৬৬ বছর ধরে শরণার্থী জীবন যাপন করছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। ইরান-সিরিয়া বাদে আরবরা যেমন ফিলিস্তিনিদের ভাগ্য বিপর্যয়ে ঘুমে আচ্ছন্ন, শুধু আচ্ছন্ন নয় আরব রাজা বাদশাহরা ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে ব্যস্ত কিভাবে ক্ষমতায় দীর্ঘদিন টিকে থাকা যায় তেমনি বিশ্ব বিবেক এখানে চুপ!