তালপট্টিতে ১০০ ট্রিলিয়ন গ্যাস মজুত : ভারতীয় গণমাধ্যম

Talpotriভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষমত্তি মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বাংলাদেশের বিজয় হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
তবে ভারতের গণমাধ্যমের দাবি, আসলে এ মামলার রায়ে ভারতের কৌশলগত বিজয় হয়েছে। ভারতের পাওয়া ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মধ্যেই পড়েছে দক্ষিণ তালপট্টি, যেখানে মজুত রয়েছে ১০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। কিন্তু বাংলাদেশের পাওয়া অংশে কী পরিমাণ খনিজ সম্পদ রয়েছে তা নিয়ে এখনো কিছুই জানা যায়নি।
সমপ্রতি নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক আদালত ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি মামলায় মোট ২৫ হাজার ৬০২ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমার মধ্যে রায়ে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকার অধিকার। ভারত পেয়েছে ৬ হাজার ১৩৫ বর্গ কিলোমিটার। সমুদ্রসীমার রায়ে উভয় দেশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
এ রায়ে বাংলাদেশের বিজয় হয়েছে বলে দাবি করে আসছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই দাবি করছেন ক্ষমতাসীন দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
এদিকে সমুদ্রসীমার রায়ের পর ভারতের গণমাধ্যমগুলো বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো তত্পরতা না দেখালেও এখন মুখ খুলতে শুরু করেছে। তারা যথারীতি ব্যাপক বিশ্লেষণ করেছে সমুদ্রসীমা রায় নিয়ে।
ভারতীয় অনলাইন ভিত্তিক পত্রিকা ফার্স্ট পোস্ট ডটকম প্রথমবারের মতো সমুদ্র রায় নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালায় এবং রায়ের প্রতিফলন নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে।
এছাড়া, সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে ভারতীয় জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি ভারতের পরাজয় হিসেবে দেখছে না। বরং তাদের ভাষায়, এই রায়ে ভারতের কৌশলগত বিজয় হয়েছে।
রায়ের বিষয়ে ফার্স্টপোস্টের পরামর্শক এডিটর এবং কৌশলগত বিশ্লেষক রাজিব শর্মা বলেন, রায়ে দীর্ঘদিনের একটি ইস্যুতে ভারতের পক্ষে একটি সমাধান করা সম্ভব হলো। রায়ের ফলে নিউ মুর আইল্যান্ডে ভারতের আসল স্বত্ত্বাধিকারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালত বুঝেই এই রায় দিয়েছেন। এই রায়ের ফলে হাড়িয়াভাঙ্গা নদীতে ভারতে প্রবেশাধিকারও নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনা ও মুখের জায়গাটি ভারতের কাছে বিভিন্ন কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নদীর বির্তকিত অংশে যদি ভারতের দাবি নিশ্চিত করা হয় তবে আগামী দশকগুলোতে ভারত অনেক লাভবান হবে। এর আগে ২০০৬ সালে হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনায় দক্ষিণ মুখের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে ভারত সরকার জানতে পারে যে, এই অঞ্চলে প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ রয়েছে, যেটি অন্ধ্র প্রদেশের কৃষ্ণা-দাবারি মোহনায় মজুদ সম্পদের চেয়েও দ্বিগুণ।
‘ভারত-বাংলাদেশের ৪০ বছরের বিতর্কিত সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত ইউএন ট্রাইব্যুনালের রায়’ শিরোনামে একটি প্রচারিত অনুষ্ঠানে এনডিটিভি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক আদালত যে রায় দিয়েছে সেটি নিঃসন্দেহে একটি ভাল রায়। রায়ে ভারত পরাজিত হয়নি। বরং নিউ মুর আইল্যান্ড ও হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর ভিতর ভারতের প্রবেশাধিকার আরও বাড়বে।
অনুষ্ঠানে তুলে ধরা গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউমুর আইল্যান্ড প্রাকৃতিক তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল এক সম্ভার, যার কারণে এই দ্বীপের মালিকানা নিয়ে প্রতিবেশী দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে সাময়িক উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ ছাড়া হাড়িয়াভাঙ্গা নদী যেটি পশ্চিম বাংলার সুন্দরবনের কোল ধরে বয়ে বেড়ায় সেই নদীতে প্রচুর পরিমাণ হাইড্রো কার্বন রয়েছে, যেটি শুধুমাত্র অন্ধ্র প্রদেশের কৃষ্ণা-গোদাবারি নদীর মোহনায় পাওয়া যায়। পাশাপাশি এই রায়ে উভয় দেশের জেলেদের জন্য বিশাল এক সমুদ্রসীমা ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে গেল।
১৯৭০ সালে সমুদ্র তীরে সাইক্লোন ঝড়ে জেগে ওঠা নিউমুর আইল্যান্ড যেটি বাংলাদেশে দক্ষিণ তালপট্টি নামে পরিচিত সেটির মালিকানা উভয় দেশ দাবি করে আসছিল। এনডিটিভির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের কৌশলগত দিক বিচার করেই এবং ভারতের দাবির ন্যায্যতার ভিত্তিতে এই অঞ্চলের মালিকানা ভারতকে দেওয়া হয়েছে। রায়ের পর ভারত এখন সময় সুযোগমত দ্বীপের প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল উত্তোলন করতে পারবে।
এ ছাড়া রায়ে ভারতের দ্বিতীয় সাফল্য হলো যেহেতু বাংলাদেশ প্রায় বিশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের অধিকার পেয়েছে তাই ভারত সরকার অনেকটাই খুশি হয়েছে। কারণ এতে করে দীর্ঘ দিনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে এবং সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি রায়ের ফলে উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার ও শক্তিশালী হয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button