সেহরিতে ক্ষেপণাস্ত্র ইফতারে বোমা
সুবহে সাদিক, শেষ রাত- গত রমজানেও গাজার প্রতিটি ঘর একে একে আলোকিত হয়ে উঠতো এ সময়। মসজিদের মাইকে শোনা যেত সেহরির সাইরেন। হুড়মুড় করে বিছানা ছেড়ে সেহরি খাওয়া জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠতো সবাই। কিন্তু এ বছর! দৃশ্যপট একেবারেই উল্টো। আমোদের সেহরি এখন আতংকময়। এই বুঝি ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়বে, বিমান হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে পারিবারিক বন্ধন, হয়তো চোখের সামনেই বুলেটে ঝাঁজরা হয়ে যাবে একমাত্র সন্তান। ভোরের আলো ফোটার আগেই গাজায় এখন ইসরাইল ভয় ছড়িয়ে পড়ে। সারাদিন কোণঠাসা করে রাখা দিন শুরুর সেই আতংক শেষ বেলাতেও পিছু ছাড়ে না। দিন শেষে ইফতারির সময়টা আরও বিভীষিকাময়। আরও লোমহর্ষক। প্রাণভয়ে প্রত্যেকেই থাকে সন্ত্রস্ত্র- একটু পরই রক্তসে াতে মিশে ধর্মীয় আনন্দ ধারা, এখনই তো ওদের সময়। এখনই তো ওরা হামলা চালাবে। গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে এই দুই সময়কেই আক্রমণের মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে ইসরাইল বাহিনী। এ পর্যন্ত যত হামলা চালিয়েছে ইসরাইল তার বেশিরভাগই সেহরি ও ইফতারির সময়। দিন শুরু হয় বিভীষিকায়, রাত কাটে অস্থিরতায় আর সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়ে ইফতারি! এবারের রমজান সম্পর্কে গাজাবাসীর বক্তব্য ঠিক এরকমই-
হামিদ আব্বাস (৬৩) নামের এক বৃদ্ধ দোকানদার বলেন, গত রমজানে গাজার ছোট ছোট ছেলেমেয়ের কাছে রোজা ছিল উৎসবের মতোই। ইফতারের আগে তাদের ভিড় জমতো রাস্তায় আর মসজিদের আঙ্গিনায়। এবার আর সেই দৃশ্য নেই। গাজার রাস্তাঘাট-বাজার ফাঁকা। এমনকি শুক্রবার বিকালেও একটা শিশুর দেখা মিলছে না।
ইসরাইলের বিমান হামলার কারণে বাইরে খোলা স্থানে মানুষের চলাফেরা নেই। বাচ্চাদের ঘরের বাইরে যেতে দেয়া হয় না। আগে জোহরের নামাজের পর মানুষ বাজারে যেত ইফতারির আয়োজন করতে। এখন দোকানপাট বন্ধ থাকে। কোনো কোনো দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই। সারাদিনে দোকানে একজন খরিদ্দারও আসে না। আমি একাই দোকান খুলে বসে থাকি। গাজার এক গৃহিণী বলেন, দোকানপাট বন্ধ থাকার পাশাপাশি তীব্র খাবার সংকট শুরু হয়েছে গাজায়। সেহরি-ইফতারিতে প্রয়োজনীয় আয়োজন নেই। অনেকেই ঘর ছেড়ে বোমার ভয়ে একটু নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। সঙ্গে নিয়েছেন ১০-১৫ দিনের খাবার।
গাজার অন্য এক অধিবাসী মাহমুদ খলিজা। ইফতারের আগে তিনি ছুটছেন হাসপাতালে। তার স্ত্রীর জন্য ওষুধ দরকার। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এসব আমাদের সয়ে গেছে। এখন কষ্টটাকেই স্বাভাবিক মনে হয়। ঘরে খাবার নেই। বাজারে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু সবজি পাওয়া গেলেও তার দাম নাগালের বাইরে।
আরেক ফিলিস্তিনি হাজেম ফারওয়ানা (৩৮)। তিনি ইফতারের জন্য প্যানকেক (ময়দা-ডিম-দুধের তৈরি এক ধরনের পিঠা) তৈরি করেন। তার পুত্র সামিরকে (১২) সঙ্গে নিয়ে পথের পাশে তা বিক্রি করেন। হাজেম বলেন, আমি যখন মরতে যাচ্ছি, তখন মরব। সেটা খোলা মাঠেও মরতে পারি। ঘরের ভেতরেও মরতে পারি।
গাজার সাবেক বাসিন্দা হামিদ (৬৩) সেহরি খেয়ে ফজর নামাজটা মসজিদে পড়তে যান। কিন্তু ওই সময়টা বোমা নিক্ষেপ হয় বেশি। তিনি বলেন, আমি দেয়াল ঘেঁষে ঘেঁষে মসজিদের দিকে হাঁটি।