ছবির চেয়েও সুন্দর অন্য এক বাংলাদেশ
আহমেদ ফারুক:
যদি বাংলাদেশকে আপনি আপনার হৃদয়ের সবচেয়ে সুন্দর ছবি ভাবেন, তবে ছবির সব অংশই আপনার হৃদয়ের অংশ হয়ে যাবে। তার পরও ছবির কিছু অংশে কেন যেন বারবার চোখ পড়ে যায়। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, নির্জন বন আর দেশের সবচেয়ে উঁচু কেওক্রাডং-তাজিনডং পর্বতের কারণে বান্দরবান আপনাকে মুগ্ধ করবেই। বিশেষ করে বগালেক বান্দরবানের অন্যতম সৌন্দর্যের আধার। আপনার কল্পনার বাইরে হলেও এটাই সত্য যে, এই লেক সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০০ ফুট ওপরে অবস্থিত। চার দিকে বড় বড় পাহাড়বেষ্টিত এই বগালেক সত্যিই সৃষ্টিকর্তার এক অন্যরকম সৃষ্টি, যা আপনাকে অবাক করবেই। এ ছাড়াও অবাক করবে বাংলাদেশে উৎপন্ন এবং বাংলাদেশেই শেষ একমাত্র সাঙ্গু নদী। কারণ বগালেকে আপনি যাবেন এই নদীর ধার দিয়েই। পাহাড়ের ওপর থেকে লম্বা নদী আপনার দৃষ্টি কেড়ে নেবেই। চলুন আজ ছাপার অক্ষরে ঘুরে আসি সেই পাহাড়ে ঘেরা অপরূপ বগালেকের পাড় থেকে। আগামীতে যা বাস্তবে রূপ দিতে পারবেন।
বান্দরবানের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ব্যাপার হলো রাস্তা। এখানে কোনো রাস্তাই সমতল নয়। সবই উঁচু-নিচু। বিশেষ করে বগালেক কেওক্রাডং যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই ভয়ঙ্কর সব রাস্তা পাড়ি দিতে হবে।
বান্দরবান এবং এর দর্শনীয় স্থান
চট্টগ্রাম থেকে ৯২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ি শহর বান্দরবান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অবারিত সবুজের সমারোহ এবং মেঘ ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে যার আছে, সে বাংলাদেশের পাহাড়িকন্যা বান্দরবান ঘুরে আসতে পারেন। দেখার মতো এখানে যা যা আছে- ১. নীলগিরি (Nilgiri), ২. স্বর্ণমন্দির (Golden Temple), ৩. মেঘলা (Meghla), ৪. শৈলপ্রপাত (Shoilo Falls), ৫. নীলাচল (Nilachol), ৬. মিলনছড়ি (Milonchhori), ৭. চিম্বুক (Chimbuk Hill), ৮. সাঙ্গু নদী (Sangu River), ৯. তাজিনডং (Tajindong Hill), ১০. কেওক্রাডং (Keokaradang Hill), ১১. জাদিপাই ঝরনা (Jadipai Falls), ১২. বগালেক (Boga Lake), ১৩. মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স (Mirinja Tourist Complex), ১৪. প্রান্তিক লেক (Prantik Lake), ১৫. ঋজুক জলপ্রপাত (Rujuk Falls), ১৬. নাফাখুম জলপ্রপাত (Nafakhum Falls)। এ ছাড়া বান্দরবানে কয়েকটি ঝিরি রয়েছে। যেমন- চিংড়ি ঝিরি, পাতাং ঝিরি, রুমানাপাড়া ঝিরি।
বান্দরবান অবস্থান করে আপনি সহজেই সব জায়গায় ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে কেওক্রাডং, তাজিনডং, জাদিপাই ঝরনা ইত্যাদি দেখার জন্য বগালেকে রাত যাপন করাই উত্তম।
যাতায়াত : ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে প্রথমে চট্টগ্রাম, তারপর চট্টগ্রাম থেকে সোজা বান্দরবান অথবা ডাইরেক্ট বান্দরবান যাওয়া যায়। তবে যাতায়াতের জন্য বাসই সবচেয়ে ভালো। ঢাকা থেকে বান্দরবান পর্যন্ত ডাইরেক্ট ননএসি ভাড়া জনপ্রতি ৬২০ টাকা। শ্যামলী, এস আলম, হানিফ, ইউনিক ইত্যাদি বাস ছাড়ে গাবতলী, ফকিরাপুল, কমলাপুর অথবা মতিঝিল কাউন্টার থেকে। তবে টিকিট সংগ্রহ করে যেকেনো কাউন্টার থেকে ওঠা যায়।
ট্রেনে চট্টগ্রাম পর্যন্ত : এসি সিট ৭৩০ টাকা, এসি বার্থ ১০৯০ টাকা। ননএসি সুলভ ১৬০ টাকা, শোভন ২৬৫ টাকা, শোভন চেয়ার ৩২০ টাকা, প্রথম সিট ৪২৫ টাকা, প্রথম বার্থ ৬৩৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৬১০ টাকা (Dec, 2012)। ট্রেনে চট্টগ্রাম পৌঁছানোর পর চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে পূরবী এবং পূর্বাণী নামক দু’টি ডাইরেক্ট ননএসি বাস আছে। ৩০ মিনিট পর পর বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৮০-১০০ টাকা।
বান্দরবান কোথায় থাকবেন : হোটেল ফোর স্টার : (বান্দরবান সদর) সিঙ্গেল ৩০০ টাকা, ডাবল ৬০০ টাকা, ট্রিপল ৯০০ টাকা, এসি ডাবল ১২০০ টাকা। এসি ট্রিপল ১৫০০ টাকা। যোগাযোগ : ০৩৬১-৬৩৫৬৬, ০৩৬১-৬২৪৬৬, ০১৮১৩২৭৮৭৩১, ০১৫৫৩৪২১০৮৯ হোটেল থ্রি স্টার : এটি বান্দরবান বাসস্টপের পাশে অবস্থিত। নীলগিরির গাড়ি এই হোটেলের সামনে থেকে ছাড়া হয়। এটি ৮-১০ জন থাকতে পারে চার বেডের এমন একটি ফ্যাট। প্রতি ননএসি ফ্যাট ২৫০০ টাকা, এসি ৩০০০ টাকা। বুকিং ফোন : থ্রি স্টার এবং ফোর স্টার হোটেল মালিক একজন, মানিক চৌধুরী-০১৫৫৩৪২১০৮৯।
এ ছাড়াও রয়েছে হোটেল প্লাজা বান্দরবান : (সদর), ০৩৬১-৬৩২৫২। হোটেল গ্রিন হিল : (বান্দরবান সদর), ০৩৬১-৬২৫১৪, ০১৮২০৪০০৮৭৭। হোটেল হিলবার্ড (বান্দরবান সদর), ০৩৬১-৬২৪৪১, ০১৮২৩৩৪৬৩৮২। হোটেল পূরবী : (বান্দরবান সদর), ০৩৬১-৬২৫৩১, ০১৫৫ ৬৭৪২৪৩৪। মোটামুটি সব হোটেলের ভাড়া কাছাকাছি।
সাঙ্গু নদী : বান্দরবান শহরের পূর্ব পাশে পাহাড়ি ঢালে বয়ে চলা সাঙ্গু নদী দেখতে দারুণ দৃষ্টিনন্দন। বগালেক যেতে এই নদী আপনার সাথে সাথেই থাকবে। অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এই নদী মোটেও বাংলাদেশের অন্য নদীর মতো না, বরং পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে ঘুরে ঘুরে ছুটে চলেছে। কখনো মনে হবে নদীর মাথা আকাশ থেকে নেমে এসেছে। কখনো মনে হবে হঠাৎ নদীটা হারিয়ে গেল ঘন পাহাড়ের জঙ্গলে।
বগালেক : সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বগালেক। কেওক্রাডাংয়ের কোল ঘেঁষে বান্দারবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে এবং রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। পাহাড়ের ওপরে প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে এই লেকের অবস্থান। এ পানি দেখতে প্রায় নীল রঙের। এ লেকের পাশে বাস করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ুদ্র উপজাতি বম ও খুমী সম্প্রদায়। অদ্ভুত সুন্দর এই নীল রঙের লেকের সঠিক গভীরতা বের করা যায়নি। স্থানীয়ভাবে ২০০ থেকে ২৫০ ফুট বলা হলেও সোলার মেশিনে ১৫১ ফুট পর্যন্ত গভীরতা পাওয়া গেছে। এটি সম্পূর্ণ আবদ্ধ একটি লেক। এর আশপাশে পানির কোনো উৎসও নেই। তবে বগালেক যে উচ্চতায় অবস্থিত তা থেকে ১৫৩ মিটার নিচে একটি ছোট ঝরনার উৎস আছে, যা বগাছড়া (জ্বালামুখ) নামে পরিচিত। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে লেকের পানি প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাসে ঘোলাটে হয়ে যায়।
রাতযাপনের জন্য বগালেকে জেলা পরিষদের অর্থায়নে একটি রেস্টহাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় বম উপজাতি সম্প্রদায় কিছু ঘর ভাড়া দিয়ে থাকে। বগালেকের পাড়েই বসবাসরত বম সম্প্রদায় পর্যটকদের জন্য রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করে থাকে। রুমা বাজার থেকে প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার ক্রয় করে নেয়াই ভালো। উল্লেখ্য, নিরাপত্তার জন্য রুমা ও বগালেক সেনাক্যাম্পে পর্যটকদের রিপোর্ট করতে হয়। স্থানীয় গাইড ছাড়া হেঁটে রুমা থেকে অন্য কোনো পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়া উচিত নয়।
যাতায়াত : শুষ্ক মওসুমে বান্দরবান জেলা সদরের রুমা জিপস্টেশন থেকে রুমাগামী জিপে করে রুমা সেনা গ্যারিসন (রুমা ব্রিজ) পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখান থেকে নৌকায় করে ২০ মিনিট পথ পাড়ি দিয়ে রুমা উপজেলা সদরে যেতে হয়। বর্ষাকালে রুমাগামী জিপ ক্যৈংঝিরি পর্যন্ত যায়। তারপর ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে প্রায় ১ ঘণ্টার অধিক পথ পাড়ি দিয়ে রুমা সদরে যেতে হয়। রুমা থেকে হেঁটে অথবা জিপে করে বগালেক যেতে হয়। বর্ষা মওসুমে বগালেক যাওয়া নিতান্তই কষ্টসাধ্য, তাই বগালেক ভ্রমণে শীতকাল বেছে নেয়াই ভালো। বান্দরবান থেকে রুমা উপজেলা সদরে যেতে খরচ হবে জনপ্রতি ৮০ টাকা অথবা পুরো জিপ ভাড়া করলে ২২০০-২৫০০ টাকা, আর রুমা থেকে বগালেক যেতে জনপ্রতি ৮০-১০০ টাকা অথবা পুরো জিপ ভাড়া করলে ২২০০-২৫০০ টাকা। বগালেকে রাত যাপন করলে সহজেই কেওক্রাডং ও তাজিনডং ঘুরে আসতে পারেন। হেঁটেই যেতে হবে আপনাকে। সময় লাগবে ৪-৫ ঘণ্টা।
কেওক্রাডং ও তাজিনডং
স্থানীয় উপজাতিদের ভাষায় ‘তাজিন’ শব্দের অর্থ বড় আর ‘ডং’ শব্দের অর্থ পাহাড়, যা একত্র করলে হয় তাজিনডং। এটি বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার রেমাক্রি পাংশা ইউনিয়নে অবস্থিত। রুমা উপজেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পর্বতের অবস্থান। বর্ষা মওসুমে তাজিনডং যাতায়াত অত্যন্ত কষ্টকর। শুষ্ক মওসুমে অনেক পর্যটককে অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে হেঁটে তাজিনডং যেতে দেখা যায়। বর্তমানে রুমা উপজেলা সদর থেকে চাঁদের গাড়িতে করে কেওক্রাডংয়ের কাছাকাছি যাওয়া যায়।
যাত্রার জন্য বগালেক থেকে খুব ভোরে যাত্রা করতে হবে, সে েেত্র আসা-যাওয়াসহ ৮-১০ ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস থাকতে হবে। তাজিনডং ভ্রমণকারীদের অবশ্যই ভ্রমণের সময় শুকনো খাবার, খাবার পানি, জরুরি ওষুধপত্র সাথে নিতে হবে। যাত্রাপথ দুর্গম ও কষ্টসাধ্য বিধায় মহিলা ও শিশুদের নিয়ে এ পথে যাত্রা করা উচিত নয়। রুমা উপজেলা সদরে রাতযাপনের জন্য কয়েকটি হোটেল থাকায় দলবেঁধে যাত্রা করার আগে হোটেল বুকিং করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নিন।
পর্যটকদের তাজিনডং যেতে হলে বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রথম যেতে হবে রুমা উপজেলা সদরে। রুমা উপজেলা যাত্রাপথে রুমা সেনা গ্যারিসনে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। পরে রুমা উপজেলা সদর সেনাক্যাম্পে আবারো
রিপোর্ট করতে হবে। রুমা উপজেলা সদর থেকে সাধারণত বিকেল ৪টার পরে বগালেক, কেওক্রাডং বা তাজিনডংয়ের উদ্দেশে যেতে দেয়া হয় না। যাত্রা যদি হয় বর্ষা মওসুমে তাহলে বান্দরবান শহরের রুমা জিপস্টেশন থেকে রুমাগামী চাঁদের গাড়িতে করে ক্যৈংঝিরি যেতে হবে। তারপর নৌকায় ১ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে রুমা সদর। যদি শীতের মওসুম হয় তাহলে জিপে করে রুমা উপজেলা সদরের কাছে বোটঘাটায় পৌঁছে দেবে গাড়ি, সেখান থেকে নৌকায় করে ১৫-২০ মিনিটের নৌকা ভ্রমণ শেষে আপনি রুমা উপজেলা সদরে পৌঁছতে পারবেন। রুমা উপজেলা সদর থেকে হেঁটে বগালেক হয়ে কেওক্রাডংয়ের পাশ দিয়ে তাজিনডং যেতে হয়।
থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা হবে বগালেক, দার্জিলিং পাড়াতে… রুমা বাজার থেকে বগালেক/কেওক্রাডং/ তাজিনডং/জাদিপাই যেতে হলে গাইড নেয়া লাগবে… কেওক্রাডং পর্যন্ত গাইড প্রতিদিন ৫০০ টাকা, তাজিনডং/জাদিপাই গেলে ২৫০০ টাকা।
জাদিপাই জলপ্রপাত
কেওক্রাডং থেকে হেঁটে ১ ঘণ্টায় জাদিপাই জলপ্রপাতে পৌঁছানো যায়। কেওক্রাডং থেকে নিচে নামতে হয় যাওয়ার সময়। ফিরে আসার সময় ওপরে উঠতে হয় বিধায় ২ ঘণ্টার মতো লাগে। তবে নিচে নামাই বিপজ্জনক। শেষের কিছু অংশ বেশ পিচ্ছিল। দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। যাওয়ার সময় জোঁকের কামড় অবধারিত। সাথে অবশ্যই গাইড নিতে হবে।
ঋজুক জলপ্রপাত
প্রাকৃতিক পাহাড়ি পানির অবিরাম এ ধারাটি জেলা সদর থেকে ৬৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রুমা উপজেলায় অবস্থিত। নদীপথে রুমা থেকে থানচি যাওয়ার পথে সাঙ্গু নদীর পাড়ে ৩০০ ফুট উঁচু থেকে সারা বছরই এ জলপ্রপাতটিতে রিমঝিম শব্দে পানি পড়ে। রুমা থেকে ইঞ্জিনচালিত দেশী নৌকায় সহজেই এ স্থানে যাওয়া যায়। মার্মা ভাষায় একে রী স্বং স্বং বলা হয়। রুমা বাজার থেকে নৌকা ভাড়া করে যাওয়া যায়। নৌকা ভাড়া ৫০০-৫৫০ টাকা।
নাফাখুম জলপ্রপাত (বাংলাদেশের নায়াগ্রা)
বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি স্থানটি সাঙ্গু নদীর উজানে একটি মারমা বসতি। মারমা ভাষায় ‘খুম’ মানে হচ্ছে জলপ্রপাত। রেমাক্রি থেকে ৩ ঘণ্টার হাঁটাপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় আশ্চর্য সুন্দর সেই জলপ্রপাতে, যার নাম ‘নাফাখুম’। রেমাক্রি খালের পানিপ্রবাহ এই নাফাখুমে এসে বাঁক খেয়ে হঠাৎ করেই নেমে গেছে প্রায় ২৫-৩০ ফুট… প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্টি হয়েছে চমৎকার এক জলপ্রপাত। সূর্যের আলোয় যেখানে নিত্য খেলা করে বর্ণিল রঙধনু। ভরা বর্ষায় রেমাক্রি খালের জলপ্রবাহ নিতান্ত কম নয়। প্রায় যেন উজানের সাঙ্গু নদীর মতোই। পানিপ্রবাহের ভলিউমের দিক থেকে সম্ভবত নাফাখুমই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত।
যাতায়াত
বান্দরবান শহর থেকে থানচি উপজেলা সদরের দূরত্ব ৮২ কিলোমিটার। রিজার্ভ চাঁদের গাড়িতে বান্দরবান থেকে থানচি যেতে লাগবে ৩ ঘণ্টা, ভাড়া নেবে চার হাজার টাকা। থানচি থেকে রেমাক্রি নৌকায় যাওয়া-আসা, ভাড়া চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। বর্ষায় ইঞ্জিন বোটে থানচি থেকে তিন্দু যেতে লাগবে আড়াই ঘণ্টা। তিন্দু থেকে রেমাক্রি যেতে লাগবে আরো আড়াই ঘণ্টা। এই পাঁচ ঘণ্টার নৌপথে আপনি উজান ঠেলে ওপরের দিকে উঠতে থাকবেন। শীতের সময় ইঞ্জিন বোট চলার মতো নদীতে যথেষ্ট গভীরতা থাকে না। তখন ঠ্যালা নৌকাই একমাত্র বাহন। বর্ষা মওসুমে তিন দিনের জন্য ইঞ্জিন বোটের ভাড়া পড়বে চার-পাঁচ হাজার টাকা। আর শীত মওসুমে ঠ্যালা-নৌকার ভাড়া পড়বে প্রতিদিনের জন্য এক হাজার টাকা।
থাকার জন্য যেতে হবে তিন্দু, রেমাক্রি। মারমাদের বাঁশ-কাঠের বাড়িতে অনায়াসে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে আপনাদের। মারমাদের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই খুব অল্প টাকায় এমন থাকা-খাওয়ার সুবিধা রয়েছে। তিনবেলা খাওয়ার খরচ পড়বে জনপ্রতি ২০০ টাকা, আর থাকা ফ্রি। তবে যে বাড়িতে ফ্রি থাকবেন, খেতে হবে তার দাওয়ায় বসেই।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অবারিত সবুজের সমারোহ ও মেঘ ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে যার আছে, সে সহজেই বাংলাদেশের পাহাড়িকন্যা বান্দরবান ঘুরে আসতে পারেন।
আজ বগালেক এবং এর আশপাশের স্পটগুলোর বর্ণনাই শুধু তুলে ধরলাম। সবচেয়ে বড় কথা, অ্যাডভেঞ্চার মনমানসিকতা না থাকলে এখানে না যাওয়াই উত্তম। বিশেষ করে বর্ষাকালে একটু বিপদ বেশি। এ ছাড়াও শিশু ও মহিলাদের না যাওয়াই ভালো। তবে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ভয়াবহ সুন্দরকে বুকে ধারণ করতে হলে কষ্ট ও সাহস দুটোই থাকা জরুরি। আর যাদের এ দুটো আছে তারা আজই বেরিয়ে পড়ুন। দেখবেন অন্য এক বাংলাদেশ, যা আপনার চেনাজানার অনেক বাইরে।