টুইন টাওয়ার মালয়েশিয়ার এক বিস্ময় বাণিজ্য ও পর্যটন কেন্দ্র
শহীদুল ইসলাম মালয়েশিয়া থেকে ফিরে : মালয়েশিয়ায় যত পর্যটক যায় তাদের অন্যতম প্রধান আকর্ষই কেএলসিসি (কুয়ালালামপুর সিটি সেন্টার) যাকে মানুষ টুইন টাওয়ার হিসেবেই জানে। রাজধানী শহরের মধ্যবর্তী স্থানে সবচেয়ে ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত এই টাওয়ার। বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান এটি। শুধু বাণিজ্য কেন্দ্রই নয় ১০০ একর জমির উপরে প্রতিষ্ঠিত টাওয়ার ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় কৃত্রিম লেক, ফোয়ারা,গাছ-গাছালী মিলিয়ে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য সংবলিত বেড়ানোর জায়গাও বানানো হয়েছে যা বিশ্ব পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
মালয়েশিয়ার টুইন টাওয়ার সম্পর্কে প্রথমেই জেনে নেয়া যাক কতিপয় গুরত্বপূর্ণ তথ্য। কুয়ালালামপুর সিটি সেন্টার শহরের গুরত্বপুর্ণ জালান আমপাং, পি, পামলী, বিনজাই, কিয়া পেং এবং পিনাং-এর রাস্তাগুলো দ্বারা সংযুক্ত। সুরিয়া কেএলসিসি, এভিনিউ কেসহ বিখ্যাত বিখ্যাত অসংখ্য শপিং কমপ্লেক্স রয়েছে এই টাওয়ারে। এর পাশেই রয়েছে জি টাওয়ার, মানদারিন ওরিয়েন্টাল, গ্রান্ড হাইট কুয়ালালামপুর এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল কুয়ালালামপুর হোটেলের মতো বড় বড় আবাসিক হোটেল। কার্যত কেএলসিসি কুয়ালালামপুর শহরের মধ্যে আরেকটি শহরের মতো যা ১০০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। মালয়েশিয়ার সর্বোচ্চ দুটি ভবনকে একত্রে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যেও রয়েছে ৫টি হোটেল, শপিং সেন্টার, অফিস ইত্যাদি। কেএলসিসির অফিসিয়াল নাম পেট্টোনাস টুইন টাওয়ার কেএলসিসি। এর সাথে রয়েছে বিশাল পাবলিক পার্ক ও মসজিদ যা জনগণের জন্য রয়েছে উন্মুক্ত। তবে টুইন টাওয়ারের ৭০ তলায় অবস্থিত ব্রিজে উঠতে হলে একদিন আগে টিকিট কাটতে হয়। এই জায়গা থেকে গোটা শহর দেখা যায়। সংযুক্ত পার্কটিও বিশাল। এতে রয়েছে বিশাল কৃত্রিম লেক, নয়নাভিরাম ঝর্ণা, ঘোরাফেরা সুন্দর লন যেন শিল্পীর সুনিপুণ তুলির আঁচড়ে হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয়। দিনের বেলায় এক দৃশ্য রাতের দৃশ্য ভিন্ন। ফোয়ারার পানির সাথে রং বেরঙের আলোর বিচ্ছুরণ সৌন্দর্য পিপাসুদের মন বেঁধে রাখতে সক্ষম হয়। দর্শকরা এই লেক বা ফোয়ারা অঞ্চলে এসে নানা এ্যাঙ্গেল থেকে টুইন টাওয়ারের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করে ছবি তোলেন।
কেএলসিসির নির্মাণ কাজ প্রথম শুরু হয় ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি। ১৯৯৬ সালের ১ জানুয়ারি এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এত বড় একটি বিস্ময়কর স্থাপনার নির্মাণ কাজ মাত্র ৫ বছরে শেষ করতে পারাও আরেক বিস্ময়। ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি জনগণের জন্য সেটা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ১৯৯৯ সালের ৩১ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টায় দেশটির মহান স্বাধীনতা দিবসে আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি ড. মাহাথির মোহাম্মদ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
কেএলসিসি বাইরে থেকে দেখতে স্টিলের কাঠামো দ্বারা তৈরি দুটি খাড়া ভবন মনে হয়। রোদের ঝলক এসে তার বিচ্ছুরণ ঘটায় সবার চোখে। ৯৬ তলা বিশিষ্ট ভবন দুটিকে সংযুক্ত করেছে একটি ব্রিজ। নীচের কয়েক তলা বোঝাই দায় যে তা আলাদা আলাদা ভবনের অংশ। বাইরটা স্টিলের প্রলেপ হলেও ভিতরের কনস্ট্রাকশন সম্পূর্ণই পাথরের। কুয়ালালামপুরের অন্যান্য সুউচ্চ ভবনগুলোও এই এলাকাতেই অবস্থিত। উপর দিকে নজর করলে কোন ভবনের চূড়া দেখা যায় না। এই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা দেখার জন্য অবিশ্বাস্য হলেও বিনা পয়সায় বাসে যাতায়াতের সুযোগ আছে। তাও যেনতেন বাস নয় রীতিমতো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস। অবশ্য মালয়েশিয়ায় চলাচলকারী বাস, ট্রেন ট্যাক্সি, প্রাইভেট গাড়ি সবই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সব চলে নিয়মে, মানুষ কাজ করে যন্ত্র দিয়ে যন্ত্রের মতোই। ডিজিটাল বলতে যা বোঝায় তা দেখতে কাছের দেশ হিসেবে মালয়েশিয়া ঘুরে আসা যেতে পারে।