মুসলমানদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে ব্রাজিলে
ব্রাজিল থেকে রফিকুল হায়দার ফরহাদ: ৮৬ লাখ বর্গকিলোমিটারের দেশ ব্রাজিলে লোকসংখ্যা মাত্র ২০ কোটি। আর এই ২০ কোটির মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ১৬ লাখ। মোট জনসংখ্যার ৫-৬ শতাংশ মুসলমান। এই গাণিতিক হিসাবে ল্যাটিনের সর্ববৃহৎ এই দেশটিতে ইসলাম ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা কম মনে হলেও খুশির সংবাদ দ্রুত মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে ব্রাজিলে। এক সাওপাওলোতেই মাসে গড়ে ছয়জন মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন বলে জানান সাওপাওলোর ব্রাইস মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ রডরিগো।
১৬ শ’ শতকে ব্রাজিলে মুসলমানদের আগমন আফ্রিকান দাসদের মাধ্যমে। পর্তুগিজ, ফরাসি, স্প্যানিশ আর ইংরেজরা আফ্রিকা থেকে যেসব কালো চামড়ার দাসদের ব্রাজিলে ধরে আনেন চাষাবাদের জন্য তাদের একটি অংশ ছিল মুসলমান। এবারের বিশ্বকাপের ভেনু সালভাদর হলো বাহিয়া রাজ্যের রাজধানী। এই বাহিয়াতেই প্রথমে দাস হিসেবে আসে মুসলমানেরা। এরাই তখন বাহিয়াতে প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। কিন্তু প্রভু সাদা চামড়ার খ্রিষ্টানেরা এ নিয়ে অত্যাচার শুরু করে মুসলমানদের ওপর। মুসলমানেরাও গড়ে তোলে প্রতিরোধ। শুরু হয় খ্রিষ্টানদের বিপক্ষে মুসলমানদের জেহাদ। কিন্তু দাস হওয়ায় তারা ছিল দুর্বল। ফলে কয়েক মাসের মধ্যেই পরাজিত হন মুসলমানেরা। পর্তুগিজ খ্রিষ্টানরা ধ্বংস করে দেয় সেই মসজিদটি। যদিও ব্রাজিলের ইতিহাসে এই জেহাদের নাম নেই বলে জানান ১২ বছর আগে মুসলমান হওয়া মাজিদ (যার পূর্বনাম মার্কোস দেবাহোম)।
১৯ শ’ শতকে ব্রাজিলে দাস প্রথা বিলুপ্ত হয় ইংল্যান্ডের চাপে পড়ে। ব্রাজিলই সর্বশেষ দেশ যারা বিলুপ্ত করে দাস প্রথা। কিন্তু এই দাস প্রথা বিলোপ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়। ধ্বংস করা হয় অনেক মসজিদ। তখন মুসলমানদের নেতা ছিলেন জম্বি। বাকি যারা মুসলমান ছিলেন তারা খ্রিষ্টানদের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছেন। মুসলিম পরিচয়টা আর ছিল না। যদিও সালভাদরে একটি মুসলিম কলোনি ছিল।
তবে ব্রাজিলের মুসলমানদের জন্য সুসময় আসতে শুরু করে ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে। লেবানন ও সিরিয়া থেকে মুসলমানেরা ব্রাজিল আসতে থাকেন আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় এবং লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময়। রাজা দ্বিতীয় পেড্রোর সাথে চুক্তি হয় লেবাননের। লেবানিজরা ব্যবসায় করার জন্য আসতে শুরু করে দেশটিতে। বর্তমানে ব্রাজিলের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা এই মুসলমান ব্যবসায়ীরা।
এরপরেই বৃদ্ধি পেতে থাকে মুসলমানের সংখ্যা। ইমাম রডরিগোর দেয়া তথ্য বর্তমানে ব্রাজিলের প্রত্যেক শহরেই মসজিদ আছে। মোট মসজিদের সংখ্যা ১২০টি। আরব মুসলমানদের সাথে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ও ভারত থেকে আসা মুসলমানরাও এখন ইসলাম প্রচার করছে। সাওপাওলোতে বাংলাদেশের জামায়াত-শিবিরের শ’ দুয়েক কর্মী ব্রাজিলে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। তারাও ইসলাম প্রচারে ব্যস্ত। তাদের হাতে সব সময়ই থাকে ধর্মীয় বই, যা তারা বিলি করে। তাদের কেউ কেউ ব্রাজিলিয়ান মেয়েকে মুসলমান বানিয়ে বিয়ে করে স্ত্রীকে দিয়ে মহিলাদের মধ্যে ইসলামের দাওয়াত দেয়াচ্ছেন। আর সাওপাওলোর মসজিদে প্রতিদিনই দেখা যায় ব্রাজিলিয়ান খ্রিষ্টান মহিলারা আসছেন ইসলাম সম্পর্কে জানতে। প্রতি শনিবার এখানে ইসলামবিষয়ক কাস করানো হয় স্থানীয়দের নিয়ে।
একই সাথে মুসলমানেরা এখানে একটি মুসলিম কলোনি করার চেষ্টা করছেন। গত দুই বছরে প্রায় দুইশত সিরিয়ান মুসলমান পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন ব্রাজিলে। তাদেরই একজন মুহাম্মদ। তার ব্যস্ত সময় কাটে ইসলামের খেদমতে। আসাদ সরকারের অত্যাচারে তাদের অনেকেই হয়তো লেবানিজদের মতো ব্রাজিলে স্থায়ী আবাস গড়বেন।
ব্রাজিলের মাটিকে ইসলাম প্রচারের উর্বর ভূমি মনে করছেন স্থানীয় মুসলমানেরা। ব্রাজিলিয়ানরা খুবই ভদ্র ও সাদাসিদে মানুষ। ইসলাম সম্পর্কে তাদের ব্যাপক আগ্রহ। তাই ল্যাটিনের এই দেশে ইসলামের ব্যাপক প্রসার হবে বলে আশাবাদÑ ইমাম রডরিগো, নও মুসলিম মার্সেলে আবদুল্লাহদের। কারণ ব্যাপক অশ্লীলতা ও পারিবারিক বন্ধনবিহীন জীবন নিয়ে অসন্তুষ্ট তারা।
তবে কিছু নামধারী মুসলমানের অনইসলামিক আচরণ ইসলামের ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে স্থানীয়দের মন্তব্য।