রমযান উপলক্ষে প্যারিসে দরিদ্রদের খাবারের ব্যবস্থা করে মুসলিম সংস্থা
ফ্রান্সের একটি ইসলামী দাতব্য প্রতিষ্ঠান দুই যুগের বেশি সময় ধরে পবিত্র রমযান মাস উপলক্ষে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে বিশেষ খাবার প্রদান করে থাকে। প্যারিসের হাজার হাজার দরিদ্র ও গৃহহীন মানুষের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকরা এ খাবার বিতরণ করে। দাতব্য সংস্থার সভাপতি হাকিম দিদৌসে ফ্রান্স-২৪ কে গত শনিবার বলেন, যেসব মুসলমান রোজা পালন শেষে এখানে ইফতার করতে আসে তাদের আমরা ইফতারীর ব্যবস্থা করি। পাশাপাশি দরিদ্র ও গৃহহীন অমুসলিমদেরও আমারা খাবার প্রদান করে থাকি। আমাদের দরজা সবার জন্য খোলা।
প্যারিসের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পোর্টে ডেস লিলাস নামক স্থানে ধাতব ও প্লাস্টিক দিয়ে নির্মিত একটি অস্থায়ী ঘরে দরিদ্র ও গৃহহীন মানুষের মধ্য ‘সবার জন্য খাদ্য বিতরণ” কর্মসূচির আওতায় এই খাবার বিতরণ করা হয়। প্রায় ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী এই খাদ্য বিতরণ করে থাকে। গত ২১ বছর ধরে প্রতি রমযানে আনুমানিক ১ হাজার লোককে প্রতিদিন খাওয়ানো হয়ে থাকে।
‘কালচার মতার’ নামক একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত দানের অর্থ দিয়ে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২শ’ লোকের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এ খরচের অর্থ সাধারণত দাতা ও বেসরকারি সংস্থা যোগান দিয়ে থাকে বলে হাকিম জানান।
খাবার বিতরণ শুরু করার প্রায় ১ ঘণ্টা আগে লোকজন লাইনে দাঁড়িয়ে যায়। কেউ কেউ খাবারের প্যাকেট নিয়ে বাসায় চলে যায়। ৩৪ বছর বয়সের ওয়াসিলা বলেন, আমার ছোট বাসার চেয়ে এখানে অনেক ভাল অনুভব করি। বাসায় প্রচ- গরম। আলজেরীয় বংশোদ্ভূত ওয়াসিলা বলেন, এই সাহায্য করার মধ্য দিয়ে মনে হয় আমার মূলে ফিরে যাই। যখন আমি খাবার বিতরণ করি তখন আমি আরবীতে কথা বলি। তখন মনে হয় আমি যেন আলজিরিয়ায় আমার পরিবারের সঙ্গে আছি। তখন আমার মনে হয় আমি যেন আমার ভাষা ও ঐতিহ্যের মধ্যে ফিরে গেছি।
ওয়াসিলা ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবীর একজন। ছাত্র, কর্মী, বেকার ও অবসরপ্রাপ্তরাই সাধারণত স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে থাকে।
হাসিঠাট্টা ও দৃঢ় সংকল্পের মধ্যদিয়ে কাজ চলে। কেউ রান্না করে, কেউ শাকসবজি রান্নার জন্য তৈরি করে আবার কেউ অন্য কাজ করে। শেষ পর্যন্ত খাবার তৈরি হয়ে যায়।
ইসিন নামের ২২ বছরের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, এখানে আমি এসেছি সাহায্য করতে, ভাল কিছু করতে এবং আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে। রমযান মাসে এই অতিরিক্ত কাজ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই কাজ করার মাধ্যমে আমি নৈতিক ও মানসিক সন্তুষ্টি লাভ করে থাকি। আগতদের মধ্যে ইফতারী বিতরণের সময় সেন্টারের পরিবেশে একটা উৎসবের ভাব বিরাজ করে এবং কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে।
স্বামী খালিদসহ খাবার নিতে আসা ওয়ার্দা বলেন, ইফতারের সময়টা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত বলে মনে হয়। ফ্রান্সের পশ্চিমাঞ্চলের একটি নিভৃত গ্রাম থেকে তিনি সম্প্রতি প্যারিসে এসেছেন। ইফতারের উৎসবমুখর পরিবেশ দেখে তিনি অবাক হন। ওয়ার্দা বলেন, এটা আমার পরিচিতির একটি অংশ। আমি কখনো এই স্মৃতি ভুলবো না। বেকার ও আশ্রয়হীন এই দম্পতি ২ সপ্তাহ আগে এখানে আসে।
স্বামী খালিদ বলেন, এখানে আসার পর অনেক ভাল কিছু পেয়েছি যদিও গ্রীষ্মের তাপ খুব বেশি। এর মধ্যেও গরম খাবার খুবই ভাল।
কাছের একটি টেবিলে বসা ছিলেন ৪০ বছর বয়সী সিদ্দিকা তিনি বলেন, আমি একজন নিষ্ঠাবান মুসলমান নই। রোজাও থাকি না। তবে খাবারের জন্য আসি কারণ এই পরিবেশটা আমার কাছে খুব ভাল লাগে।
তিনি বলেন, আমি এতদূর বলবো না যে, আপনারা এখানে বন্ধু বানাচ্ছেন তবে অন্তত এইটুকু বলবো, আপনারা লোক সমাগমের একটা ব্যবস্থা করেছেন। যদিও আমি রোজা রাখি না তারপরও বলবো, এটা হচ্ছে একটি শক্তিশালী ঐতিহ্যের একটি উপাদান। আমি এটা ভালভাবে উপভোগ করি।
গত ৯ জুলাই ফ্রান্সে রোজা শুরু হয়েছে। পবিত্র রমযান মাসে প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত থাকে।
এই পবিত্র মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগী ও ভাল কাজে লিপ্ত থাকে।