আমার পায়ের তলায় মাটি নেই : তসলিমা

Toslimaবিতর্কিত বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিন যাদের জন্য এত কিছু করলেন তারাই মুখ ফিরিয়ে নিলো তার দিক থেকে। তার ‘লজ্জা’ উপন্যাস ভারতের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে গোটা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিল বিজেপি। সেই বিজেপিই আজ তার প্রতিপ। এটাই কি নিয়তির প্রতিশোধ। আর এ কারণেই তসলিমা নাসরিন বলতে বাধ্য হচ্ছেন, ‘আমার পায়ের তলায় এখন আর মাটি নেই।’ নতুন বার্তা।
তসলিমা নাসরিনের ভারতে বসবাসের রেসিডেন্স পারমিট বাতিল করে দিয়েছে নরেন্দ্র্র মোদি সরকার। পরিবর্তে তাকে দেয়া হয়েছে দুই মাসের টুরিস্ট ভিসা। ঘটনাচক্রে ২০০৭ সালে কলকাতা থেকে বিতাড়িত হওয়ার সময় গোটা দেশে একমাত্র একজন রাজনৈতিক নেতাই বাংলাদেশের এই বিতর্কিত লেখিকার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি হলেন গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র্র মোদি। এবার সেই মোদির সরকারই তার ভারতে বসবাসের অধিকার কেড়ে নিতে বসায় বিস্ময় গোপন করতে পারছেন না তসলিমা। তিনি বলেছেন, ‘দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি যে পারমিট পাব না। মোদি তো একমাত্র রাজনীতিক, যিনি আমাকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছিলেন। সেই মোদির আমলে এ রকম হলো? আমি তো ভেবেছিলাম মোদির আমলে এবার আমি পাঁচ বছরের জন্য থাকার পারমিট পাব। আমি তো নাগরিকত্ব চাইনি। থাকার সুযোগ চেয়েছিলাম। সেটাও পেলাম না!’
তবে তসলিমা বিজেপির সমালোচনা করেননি, কেবল হতাশা প্রকাশ করেছেন। তসলিমা জানেন, মোদি সরকারকে আক্রমণ করলে তার অবস্থা আরো খারাপ হবে। টুরিস্ট ভিসাও বাতিল হয়ে যেতে পারে। আসলে তসলিমা এখন ভারতের রাজনীতিতে অপাঙ্ক্তেয় ও বোঝা হয়ে গেছেন। ব্যবহারকারীদের কাছে তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে।
২০০৪ সাল থেকে ইউপিএ আমলের গত ১০ বছর ধরে রেসিডেন্স পারমিট পেয়ে আসছিলেন তসলিমা। গত ২৮ জুন পারমিটের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার কেন্দ্র্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে তসলিমাকে জানানো হয়েছে, তাকে রেসিডেন্স পারমিট দেয়া হবে না। এর পরই তসলিমা টুইট করেন, ‘ভারত সরকার আমার রেসিডেন্স পারমিট খারিজ করে দিয়েছে। তারা দুই মাসের জন্য অস্থায়ী টুরিস্ট ভিসা মঞ্জুর করেছে।’
এ ব্যাপারে সরকারের তরফে একমাত্র প্রতিক্রিয়াটা এসেছে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের কাছ থেকে। কেন পারমিট দেয়া হলো না তার মধ্যে না গিয়ে তিনি শুধু বলেছেন, টুইট করার অধিকার সবারই আছে।
তসলিমাকে কেন রেসিডেন্স পারমিট দেয়া হলো না তার কোনো ব্যাখ্যা এ দিন কেন্দ্র্রীয় সরকারের তরফ থেকে অন্তত দেয়া হয়নি। আপাতত দুই মাস পর কী করবেন সেই চিন্তাতেই আচ্ছন্ন হয়ে আছেন তসলিমা।
নয়ের দশকের গোড়ায় বাংলাদেশে তিনি যখন হিন্দুদের প হয়ে লিখছিলেন, তখন থেকেই সঙ্ঘ পরিবারের পছন্দের ব্যক্তিত্ব তসলিমা। তাই এখন বিজেপির জমানায় এমন সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েই তসলিমা প্রশ্ন তুলছেন। বেশ কিছু দিন ধরেই দিল্লির বসন্ত বিহারের বাসিন্দা তিনি। ইউপিএ সরকার তার জন্য সশস্ত্র প্রহরার ব্যবস্থা করেছিল। এনডিএ আমলেও তা বহাল। কিন্তু এসব সত্ত্বেও আহত স্বরে তসলিমা বলেন, ‘একটা মানুষ আর কত সহ্য করবে বলুন তো। সেই ২০ বছর বয়স থেকে শুরু হয়েছে। এখন তো ৫০ বছর বয়স হয়ে গেল। আমার পায়ের তলায় এখন আর মাটি নেই।’
মোদি সরকার কেন এই সিদ্ধান্ত নিলো তার কোনো ধারণাই তসলিমার নেই। তার প্রতিক্রিয়া, ‘আমি জানি না। আমি কি সিরিয়াল কিলার নাকি যে আমায় পারমিট দেয়া হবে না।’ বাংলাদেশ থেকে, কলকাতা থেকে যে তসলিমাকে চলে যেতে হয়েছে তার পেছনে ছিল কট্টরপন্থীদের বিােভ ও প্রতিবাদ। কিন্তু মোদি সরকারের তো সেই প্রতিবাদের ভয় নেই। এখন তসলিমাকে পারমিট না দেয়ারও কোনো দাবি ওঠেনি। যে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে বিজেপি বরাবর সংখ্যালঘু তোষণের অভিযাগ করে এসেছে, তারাই তো দশ বছর ধরে তাকে দেশে থাকতে দিয়েছে, প্রথমে ছয় মাস ও তার পর এক বছর অন্তর অন্তর পারমিটের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাহলে মোদি সরকার কেন পারমিট দিলো না? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাচ্ছেন না তসলিমা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button