বাস-ট্রেন মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১১
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজারে বরযাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের ৩ জন রয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরো অন্তত ৪০ জন। এ ঘটনার পর খুলনার সঙ্গে দেশের সব ধরনের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল শুক্রবার ভোর ৩টা ৫০ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে বর-কনে বহনকারী মাইক্রোবাস আগে চলে যাওয়ায় তারা বেঁচে গেছে। এ ঘটনার পরপরই কর্তব্যে অবহেলার দায়ে বারবাজার স্টেশন মাস্টার তুর্কি আহমেদ ও গেটম্যান হুমায়ুন কবিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম জানান, তার নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাসরিন জাহানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সময় রেল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পৃথক আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন একই পরিবারের ৩ জন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের ভবেশ কুমারের স্ত্রী তৃষ্ণা রানী (৩০), ছেলে কৌশিক অধিকারী (৮) ও ভাইয়ের মেয়ে বন্যা রানী (৩৫)। ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামের অনিল বিশ্বাসের ছেলে সুধীর কুমার (৪০), জগবন্ধু বিশ্বাসের ছেলে বিপ্লব কুমার (২৫), মহাপ্রসাদ দে’র ছেলে শোভন কুমার (২৮), একই গ্রামের সুবল কুমার (২২), ঐশী (৭), সুজয় (৩০), সঞ্জয় কুমার (৩৪) এবং ফরিদপুর জেলার কানাইপুরের শ্যামল কুমারের ছেলে উজ্জ্বল কুমার (৩০)।
শুক্রবার ভোরে বাসটি কালীগঞ্জের সাকো মথনপুর থেকে বিয়ে শেষে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামে যাচ্ছিল। এ ঘটনার পর থেকে খুলনার সঙ্গে ঢাকা-রাজশাহীগামী সব ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঈদে ফিরতি দূরপাল্লার যাত্রীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হন।
কালীগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার সাকো মথনপুর গ্রামের সুবল বিশ্বাসের মেয়ে স্কুল শিক্ষিকা জোসনা রানীর বিয়ে হয় ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার ফুলহরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাপস কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে। তাপস একই গ্রামের মৃত রনজিত কুমার বিশ্বাসের ছেলে। বিয়ে শেষে যাত্রীবাহী বাস বারবাজার মাছ বাজারের রেলক্রসিং অতিক্রম করছিল। এ সময় দিনাজপুরের সৈয়দপুর থেকে খুলনাগামী সীমান্ত ৭৪৮ ডাউন এক্সপ্রেস ট্রেন বাসটিকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ, যশোর, কোটচাঁদপুর ও কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে।
কোটচাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৯টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে কালীগঞ্জ হাসপাতালে আরো দুজন মারা যায়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে কমপক্ষে ৪০ জনকে। তাদের কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ, যশোর ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
দুর্ঘটনার পর রেলের পশ্চিম জোনের জেনারেল ম্যানেজার আবদুল আওয়াল ভুইয়া, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার, ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল হাই, জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্টেশন মাস্টার-গেটম্যান বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ট্রেন-বাস সংঘর্ষের ঘটনায় বারবাজার রেল স্টেশনের মাস্টার ও রেলক্রসিংয়ের গেটম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন। দুর্ঘটনার কারণে খুলনার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল সাত ঘণ্টা বন্ধ থাকে।
পশ্চিম রেলের বিভাগীয় ম্যানেজার (পাকশী) মোশাররফ হোসেন জানান, বারোবাজারের স্টেশন মাস্টার আবু সানিয়াব ও গেটম্যান আবদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কালীগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ট্রেন এলে রেলক্রসিংয়ে যান চলাচল বন্ধের জন্য ‘ব্যারিয়ার’ থাকলেও ঘটনার সময় সেটি নামানো হয়নি। দায়িত্বে থাকা গেটম্যান আবদুর রহমানও সে সময় উপস্থিত ছিলেন না।
দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে পশ্চিম রেলের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম আবদুল আওয়াল মিয়া।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে বলে জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।