ঢাকা ছাড়ছে ৭০ লাখ মানুষ

Dhakaএম এ মালেক : আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ নাড়ির টানে ঢাকা ছাড়ছে। ঘরমুখো বিশাল এ জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬০ লাখ যাত্রী নৌ, বাস, বিমান ও রেলযোগে এবং বাকি ১০ লাখ বিকল্প হিসেবে অনিয়মিত পরিবহন বেছে নিচ্ছেন। অন্যদিকে মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গ্রামীণ জীবন যাত্রার আনন্দ ও অর্থনীতির গতি। সরকারি কোন পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬০ লাখ মানুষ ঘরে ফেরার তথ্য পাওয়া গেলেও মূলত এর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৭০ লাখে। বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন সিটিজেন রাইটস্ মোভমেন্টের দেয়া তথ্যানুযায়ী সড়ক পথে ২৫ লাখ, নৌপথে ৩০ লাখ, রেল ও বিমানে ৫ লাখ এবং বিকল্প পন্থায় আরো ১০ লাখ মোট ৭০ লাখ লোক ঢাকা ছাড়ছে। বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শুধুমাত্র নৌ-পরিবহন ব্যবস্থার ওপর ৩০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাবে প্রায় ৪ মিলিয়নের বেশি মানুষ। যার বেশিরভাগই নৌপথ ব্যবহারে অভ্যস্ত।
ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি এনায়েতুল্লাহ্ খান বলেন, প্রতিনিয়তই মানুষ গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে। তবে এবার যাত্রীর সংখ্যা বেশি। তিনি বলেন, প্রায় ৩৫ লাখ লোক সড়ক পথ ব্যবহার করবে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে নিয়মিত পরিবহন বাস, ট্রেন, লঞ্চে ৬০ লাখ ঘরমুখো মানুষ বিভিন্ন স্ট্যান্ড, স্টেশন আর ঘাটের দিকে ছুটছে। অন্যদিকে ব্যক্তিমালিকানাধীন ট্রাক, মাইক্রোবাস, ট্যাক্সিক্যাব এবং এম্বুল্যান্সগুলো বিশেষ ট্রিপ মারতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাধারণত নিয়মিত পরিবহনে যারা টিকিট পায়নি তারাই ছুটছে গাড়ি ভাড়া করতে। অনেকে আবার নিজের গাড়িতে চেপেই যাচ্ছেন। এভাবে বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থায় আরো প্রায় ১০ লাখ মানুষ আপন ঘরে ফিরবেন। সূত্র জানায় ঢাকা শহরে প্রায় ১০০টির মতো মাইক্রোবাস ও কার স্ট্যান্ড রয়েছে। যেখানে ঈদের আগের চারদিন গাড়ি ভাড়ার হিড়িক পড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ভাড়া হয় চাঁদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বরিশাল এবং সিলেটগামী যাত্রীদের কাছে। প্রতিদিন কি পরিমাণ গাড়ি ভাড়ায় ঢাকা ছাড়ছে জানতে চাইলে ঢাকা মাইক্রোবাস ও কার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহের হোসেন খান বলেন, এই ঈদে প্রতিবারের মতো এবারও বিরাট সংখ্যক যাত্রী ভাড়া করা গাড়িতে বাড়ি যাবেন। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে রোজার শেষ চার দিনে গড়ে প্রায় প্রতিদিন ১৫ হাজার গাড়ি ভাড়া হয়। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বরিশালগামী আল আমিন উত্তরা মুক্তাঙ্গনে এসেছেন মাইক্রোবাস ভাড়া করতে।
তিনি বলেন, কাক্সিক্ষত বাসের টিকিট না পাওয়ায় মাইক্রোবাস ভাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এদিকে প্রতি বছরের ঈদ উপলক্ষে গ্রামীণ অর্থনীতি এক ধরনের উজ্জীবিত হয়ে ওঠে।  গাঁয়ের পানে ছুটে চলা এই জনস্রোতের পেছনে দু’টি কারণকে চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা। প্রথমত প্রতিযোগীতামূলক বাজার ও অতীতের তুলনায় এবার জিনিসপত্রের দাম বেশি থাকলেও বাজার অর্থনীতিতে সুবাতাস বইছে। যার ফলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হাতের নাগালে থাকার কারণে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে উৎসাহিত হয়েছে সাধারণ মানুষ। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের আগমনে গ্রামাঞ্চলে অর্থের প্রবাহ বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। স্বল্পমেয়াদি হলেও গ্রামীণ জীবনে আসবে স্বচ্ছলতা। গ্রামীণ অর্থনীতিও ফিরে পাবে গতি।
এ বিষয়ে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত সাংবাদিককে বলেন, ৭০ লাখ মানুষ মানে ১২ লাখ পরিবার। এই বিশাল জনগোষ্ঠী বাড়ি যাওয়া মানে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে বেগবান করা। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই ঈদে ঘরেফেরা মানুষকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ অর্থনীতি উজ্জীবিত হচ্ছে। প্রতিবছরর ঈদ আসলেই ঢাকা শহরের বিভিন্ন পেশায় মানুষ তাদের নিজের পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ করতে গ্রামের চলে যান। ফলে একদিকে গ্রামে এক ধরনেরই আনন্দ ঢল নেমে আসে অন্যদিকে আবার গ্রামীণ অর্থনীতিরও চাঙ্গা হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button