নেতাহীন মুসলিম বিশ্ব : কাঁদছে গাজা
মাহমুদ আহমদ সুমন:
আল্লাহপাক এ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন মানবের সংশোধন আর দলে-উপদলে বিভক্ত না হয়ে সবাই যেন একই সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করে। এক নেতৃত্বের অধীনে থেকে জীবন পরিচালিত করাই আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা আর এ লক্ষ্যেই তিনি নবী-রাসূলদের প্রেরণ করেছেন। আজ মুসলিম জাহানের অবস্থার দিকে লক্ষ্য করলে সহজেই বোঝা যায়, তাদের অবস্থা কোন পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে। সমগ্র মুসলিম জাহান আজ চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসারী মুসলমানরা আজ সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত হচ্ছে। এর কারণ কী? আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয় এর মূল কারণ হচ্ছে, মুসলমান আজ পবিত্র কোরআনের আদেশ ও শ্রেষ্ঠ নবীর শিক্ষার ওপর আমল করা ছেড়ে দিয়ে মাজহাব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। পবিত্র কোরআন কি বলে তার অনুসরণ না করে মাজহাবের অনুসরণ করছে। অথচ মাজহাবের কোনো ভিত্তি নেই। মানুষ হিসেবে আমরা সবাই একই উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত, তাহলে কেন এত হানাহানি? একে অপরকে সহ্য করতে পারছি না অথচ এক জাতি হিসেবেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। যেভাবে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় তোমাদের এই উম্মত একই উম্মত এবং আমিই তোমাদের প্রভু-প্রতিপালক। অতএব, তোমরা আমার ইবাদত কর’ (সূরা আম্বিয়া : ৯২)। ‘আর জেনে রাখ তোমাদের এ সম্প্রদায় একটিই সম্প্রদায়। আর আমি তোমাদের প্রভু-প্রতিপালক’ (সূরা মুমেনুন : ৫২)। সবার সৃষ্টি যেহেতু একই ঐশী উৎস থেকে তাই সবার মূল কাজ হল সবার মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করা। আজ একেক মাজহাবের অনুসারীরা যার যার সুবিধা অনুযায়ী হাদিস তৈরি করে নিয়েছে আর তা দিয়ে অপরকে আঘাত করছে।
গত একমাস ধরে গাজায় ইসরাইলিরা যে ভয়াবহ নারকীয় তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে তা কোনো ধর্মই অনুমতি দিতে পারে না। নিরীহ-নিরপরাধ অবোধ শিশুদের ওপর একের পর এক বর্বরোচিত হামলা? গাজা সিটির আল শিফা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে নুর, খালেদ ও ইয়ামিনের মতো নাম না জানা আরও অনেকেই। যাদের বয়স এক থেকে ১০ বছরের মধ্যে। এ হাসপাতালেই গত কয়েক দিনে মারা গেছে তাদেরই মতো প্রায় ৫০০ শিশু। এই শিশুদের একটিই প্রশ্ন ‘কেন তারা বিশ্বের অন্য শিশুদের মতো বাঁচতে পারবে না, আমাদের স্বাধীনভাবে বাঁচতে দাও’। ৮ জুলাই থেকে ইসরাইলি অভিযান শুরুর পর গাজায় প্রায় দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে যাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক ও শিশু। আহত হয়েছে বেশ কয়েক হাজার মানুষ। অপরদিকে গাজার হামাস যোদ্ধাদের পাল্টা হামলায় ইসরাইলির ৬০-৭০ জন সেনা নিহত হয়েছে। ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে কিন্তু শিকার হচ্ছে নিরপরাধ সাধারণ মানুষ ও অবোধ শিশু। গাজা ভূখণ্ডের পশ্চিমে রয়েছে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে মিসর এবং উত্তরে, পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে ইসরাইল। যদিও জাতিসংঘে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতা পুরোপুরি স্বীকৃত নয়, এ অঞ্চলটি ফিলিস্তিনি হামাস শাসন করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইসরাইল এবং জাপান হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
যদিও ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজার বিভিন্ন শহর ও নগরে হামাস সদস্যদের সন্ধানে ঘরে ঘরে হামলা চালানো শুরু করেছে। ইসরাইলিরা হামাস সংগঠনের নামে যে আক্রমণ চালাচ্ছে তাতে প্রাণ হারাচ্ছে শতশত নিরীহ জনগণ। দেখা যায় একজনের বিপরীতে এক-দেড়শ’ নিরীহ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। এ নারকীয় তাণ্ডবলীলার জন্য ইসরাইলে ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা কেবল খোদাই ভালো জানেন।
হামাস অবৈধ দখলদারির প্রতিবাদে রকেট ছুড়েছে আর তা পড়েছে খোলা ময়দানে। আর ইসরাইল এ নিষিদ্ধ সংগঠন হামাসের জবাব দিচ্ছে নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করে। এ ধরনের অমানুষিক কর্মকাণ্ডের জন্য সব দেশের উচিত ছিল ইসরাইলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। সব দেশ না করলেও মুসলিম বিশ্ব তো পারত এর প্রতিবাদ করতে। কিন্তু দেখা যায় আরব বিশ্বসহ অন্যান্য দেশও ইসরাইলি বর্বরতার বিপক্ষে সোচ্চার না হয়ে বরং নীরবতা পালন করছে। প্রশ্ন হল সারা বিশ্বের কেন এই নীরবতা? ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন কোন আরব দেশের সম্মতিতে গাজায় হামলা চালিয়েছেন? বেশ অপ্রস্তুতভাবেই তিনি বলেছেন, ‘সহনশীল আরব’। হামাসকে ধ্বংস করার জন্য তারা হাত মিলিয়েছে ইসরাইলের সঙ্গে। কেন আরব বিশ্ব সহনশীল? তারা কি ইসরাইলের এ বর্বরতা হামলার প্রতিবাদ করতে পারে না? এখানে সন্ত্রাস নির্মূলের প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হচ্ছে মানবতার। হামাস মতাদর্শের সমর্থন আমরা করি না ঠিকই কিন্তু গাজার নিরীহ জনগণকে কোন অপরাধের জন্য নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে? এটাই সারা বিশ্বের দরবারে আমাদের প্রশ্ন। দোষ যদি আমি করে থাকি তাহলে তার শাস্তি আমারই প্রাপ্য। আমার অপরাধের জন্য আমার পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা আÍীয়স্বজন শাস্তি পাবে তা হয় না। আর পবিত্র কোরআনের শিক্ষাও এটাই। হামাস সংগঠনের লোকদের নির্মূল করতে ইসরাইলিদের এ বেপরোয়া হামলা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কোন অপরাধে চার দিনের সেই নিষ্পাপ শিশুটিকে হত্যা করা হল এর জবাব কি হামাস বা ইসরাইলি সৈন্য দিতে পারবে?
আজ এত মুসলমান দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন পারছে না গাজার অবোধ শিশুদের রক্ষা করতে? এর একমাত্র কারণ হল মুসলিম জাতির আজ কোনো ঐশী নেতা নেই।