ব্রিটেনে গভীর সংকটে ৫০ হাজার বাংলাদেশী স্টুডেন্ট
ইব্রাহিম খলিল: ব্রিটেনে উচ্চ শিক্ষা নিতে আসা প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশী শিক্ষার্থী এখন গভীর সংকটে। স্টুডেন্ট কনসালটেন্সির নামে দেশের কিছু চক্রের খপ্পরে পড়ে এই শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগকেই হতে হয়েছে সর্বস্বান্ত। অন্যদিকে ব্রিটেনের নামি দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা বলে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিলেও আনা হয়েছে নাম সর্বস্ব কিছু প্রতিষ্ঠানে। যার অধিকাংশই বিভিন্ন সময় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ অভিবাসন সংস্থার কঠোর নিয়মনীতির ফলে। ফলে দিন দিন বাড়ছে উচ্চ শিক্ষা নিতে এসে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশী ছাত্রের সংখ্যা। অন্যদিকে, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময় হোম অফিস অনুমোদন দিলেও বন্ধ হয়ে পড়ার পর শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউই।
সম্প্রতি সরকারী এক অনুসন্ধানে, বিদেশী স্টুডেন্টদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য দেয়া ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেষ্টের প্রায় ৪৮ হাজার অবৈধ ও সন্দেহজনক সার্টিফিকেটের প্রমাণ পাওয়া যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিত্রে হোম অফিস দেশের ৫৭টি কলেজ ও ৩টি ইউনিভার্সিটির লাইসেন্স বাতিল ও স্থগিত করে দেয়। একই সাথে হোম অফিস স্থগিত হওয়া ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এমন পরিস্থিতিতে হাউজ অব কমন্সের অধিবেশনে ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন মিনিস্টার জেমস ব্রুকেনশায়ার আরো কঠোর নীতিমালা আরোপের ঘোষণা দেন। স্থগিত হওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই হচ্ছেন বাংলাদেশ,ভারত পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা।
ইমিগ্রেশন মিনিস্টার বলেন, বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদনপ্রাপ্ত তালিকা থেকে ইতিমধ্যে ৭৫০টি কলেজের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৪শত’ প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সরকার অবগত আছে, যারা ভূয়া সনদ সরবরাহকারী এজেন্টদের সাথে যোগাযোগ রাখছে। জেমস ব্রুকেনশায়ার অভিযোগ করে বলেন, বিদেশী শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ২০ ঘন্টার বেশী কাজের অনুমতি না থাকলেও বছরে ২০ হাজার পাউন্ড উপার্জন করছে এমন বিদেশী শিক্ষার্থীও চিহ্নিত করতে পেরেছে রেভিনিউ অ্যান্ড কাস্টমস বিভাগ (এইচএমআরসি)।
আগামীতে এসব স্টুডেন্টের জন্য ব্রিটেনে বসবাস কঠিন হয়ে যাবে বলে তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন। ব্রিটিশ সরকারের এমন সিদ্ধান্তের খবরে হতাশা নেমে এসেছে ব্রিটেনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের মাঝে।
সম্প্রতি পূর্ব লন্ডনে কথা হয়, মইনুল হাসান নামের এক বাংলাদেশী স্টুডেন্টের সাথে। ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে তিনি ভর্তি হন ঢাকায় এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রায় বছর দেড়েক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, এখন তিনি লন্ডনে। ভাবনা ছিল অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ সহ বিশ্বের খ্যাত নামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেশ থেকে নিবে উচ্চতর ডিগ্রি। কিন্তু সেই স্বপ্ন পেছনে ফেলে এখন হাসান বাঙ্গালী মালিকানাধীন এক দোকানের কর্মচারী। উচ্চতর শিক্ষা তো দূরে থাক এখন হাসানের দিনকার চিন্তা লন্ডনের মত খরচে শহরে জীবিকা নির্বাহ করা।
হাসানের মত এমন আরো অর্ধ লক্ষ শিক্ষার্থী আছেন বৃটেনে যাদের প্রায় সবারই গল্প একই রকম। একদিকে যেমন বাংলাদেশে আর বৃটেনে গড়ে ওঠা কিছু স্টুডেন্ট কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিনিয়তই প্রতারিত হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীরা তেমনি নানান অজুহাতে ব্রিটেনের শিক্ষা বিষয়ক কর্তৃপক্ষ স্থায়ী বা সাময়িক ভাবে বন্ধ করছে বিভিন্ন সময় তাদেরই অনুমোদন দেয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আর্থিক ও মানসিকভাবে তেমনি হয়ে পড়ছে অবৈধ অভিবাসি। আর এভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন। অভিবাসী আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে না আসলে এর প্রভাব পড়বে যুক্তরাজ্যের আর্থ-সামাজিক পরিবেশে।