আল্লামা শফীর বয়ান ও নারী জাগরণ

এরশাদ মজুমদার
আল্লামা শফী সাহেবের একটি বয়ান নিয়ে এখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ এবং একই পথের পথিক আরও কিছু বুদ্ধিজীবী বলে বহুল পরিচিত মানুষ কথার খৈ ফুটাতে শুরু করেছেন। কথা বলার ব্যাপারে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে হারাতে পারে এমন নারী বা পুরুষ বাংলাদেশে এখনও জন্ম নেয়নি। বহু বছর আগে আমাদের এক সাংবাদিক বন্ধু মুজাফফর প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন তাঁর ভাষার বিষয়ে। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এটাই তাঁর কালচার ও পারিবারিক ঐতিহ্য। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা গোপনে বলে থাকেন, নেত্রী যদি কম কথা বলতেন তাহলে দলের কিছু ভোট বাড়ত। শুনে যদি আপনি বলেন ২০০৮ সালে তো আপনারা কল্পনার বাইরে ভোট পেয়েছেন। তখন আওয়ামী নেতারা বলেন, ওটাতো একটা বিশেষ সময়ের নির্বাচন।
শুরুতেই বলতে চাই, আপনি যদি একজন ধর্মহীন জাগতিক (সেক্যুলার) নর বা নারী হন তাহলে ইসলামের ধর্ম বিধান বা নিয়ম-কানুন আপনার জন্য প্রযোজ্য নয়। তখন আপনি একজন মুক্ত মানুষ। আপনার আখেরাতও নেই, শেষ বিচারদিনও নেই। জগতই আপনার শেষ ঠিকানা। আর যদি বলেন, আপনি ধর্মে বিশ্বাস করেন তাহলে আপনার পরলোক আছে, আছে স্বর্গ-নরক। সব ধর্মেই পরলোক আছে, আছে বিচার। বাংলাদেশে ধর্মহীন মানুষের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। কিন্তু তাদের চোটপাট বেশি। কারণ, আমাদের সমাজে একশ্রেণীর জ্ঞানী-গুণী ও বুদ্ধিজীবী আছেন যারা নিজেদের মুক্তচিন্তার প্রগতিশীল মানুষ বলে দাবি করেন। নিজেদের নানা কৌশলে ধর্ম থেকে দূরে রাখতে চান। তারা মনে করেন ধর্ম মানলে আর প্রগতিশীল থাকা যায় না, সমাজে ইজ্জত থাকে না। লোকে মোল্লা বলে গালি দেবে। ক্লাবে গেলে বন্ধুরা হুজুর বা হাজী সাহেব বলে ডাকবে।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সরকার নিজেদের সেক্যুলার (ধর্মহীন) বলে দাবি করেন ও প্রচার করেন। তারা বলেন, সেক্যুলারিজমের সঙ্গে ধর্মের কোনো বিরোধ নেই। আমার ধারণা, তারা যখন নিজেদের সেক্যুলার বলেন, তা না বুঝেই বলেন। অথবা বুঝেও এ কাজটি করেন অদৃশ্য প্রভুর নির্দেশে। এইতো মাত্র ক’দিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহনজী বলেছেন, তারা বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকার দেখতে চান। সোজা কথা হলো ভারত বাংলাদেশে আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। কারণ, আওয়ামী লীগকে দিয়ে ভারতের লক্ষ্য আদর্শ ও স্বার্থ রক্ষা করা যায়। অপরদিকে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে মেজরিটি মানুষের ধর্ম ইসলামকে রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে নির্বাসনে পাঠানো যাবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে পশ্চিমা দেশগুলোর সংশ্লিষ্টতা অনেক বেশি। বিশেষ করে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত এখানে একজন অদৃশ্য বাদশাহ। সব ব্যাপারেই তিনি কলকাঠি নাড়েন। বাংলাদেশের রাজনীতিকরাও কথায় কথায় বাদশাহর দরবারে ধর্ণা দেন। হাবভাব দেখে মনে হয় বাদশাহ ঠিক থাকলে সব ঠিক। শোনা যায়, আমেরিকা ও ভারতের পরামর্শে সরকার হেফাজতের উপর হামলা চালিয়েছে পাঁচই মে গভীর রাতে বাতি নিভিয়ে দিয়ে। কিন্তু এতে আওয়ামী লীগ বা সরকারের কোনো উপকারই হয়নি। উল্টো হেফাজত রাজনীতিতে একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার, সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী ও পশ্চিমারা রাজনীতিতে ধর্ম বা পারলৌকিক কোনো বিষয় দেখতে চায় না বলে ঢোল পিটাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, সিটি নির্বাচনে বিরোধী দল ধর্মকে ব্যবহার করে জিতে গেছে। তাই নির্বাচন কমিশন বলছে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ধর্মকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। পারলৌকিক বিষয়টা নাকি খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। শেষ বিচারের কথা শুনলেই ভোটাররা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে দেয়। দেশের বেশিরভাগ ভোটারই গ্রামে থাকেন এবং ধর্মপ্রাণ। ধর্মের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান তারা মেনে নিতে চান না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও মাঝে মাঝে হিজাব পরে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। তার নেতা-কর্মীরা প্রচার করেন, শেখ হাসিনা নিয়মিত নামাজ আদায় করেন ও কোরআন তেলাওয়াত করেন। অবাক এবং বিস্ময়ের বিষয় হলো ধর্মকে সবখানে ব্যবহার করতে পারবেন, শুধু নির্বাচনে ব্যবহার করতে পারবেন না। ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করেও এরশাদ সাহেব পার পাননি। তিনি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছেন, শুক্রবারকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু লোকে তাকে ধর্মপ্রাণ মানুষ মনে করে না। তাই ভোট দেয় না। আওয়ামী লীগ সেক্যুলারপন্থী নেতা ও মিত্রদের খুশি রাখতে গিয়ে দুই নৌকায় পা রেখেছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে বহাল রেখেছে। শুধু আল্লার নাম বা বিসমিল্লাহ ত্যাগ করেছে। ধর্মকে নিয়ে শেখ হাসিনা সত্যিই খুব বেকায়দায় পড়েছেন।
চলমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ বুঝাবার জন্যই পেছনের কিছু কথা বললাম। আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব বাংলাদেশের একজন বড় মাপের ধর্মীয় নেতা। তার রয়েছে হাজার হাজার ভক্ত। সম্প্রতি তার পুরনো একটি বক্তব্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে তার দলের লোকেরা নানা ধরনের অশ্লীল কথা বলেছেন। সরকার এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের জানা দরকার যে আল্লামা শফী কোরআন ও হাদিসের বাইরে কোনো কথা বলতে পারেন না। ধর্মীয় নেতা হিসেবে সেটাই তার সীমানা। আমাদের অবশ্যই মেনে নিতে হবে যে আল্লামা শফী ইসলামের দৃষ্টিতে নারী অধিকার কি এবং এর সীমা পরিসীমা কি তা আমাদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি জানেন। আমাদের দেশে তো ইসলাম সম্পর্কে কিছু না জানলেও রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, প্রধান সেনাপতি ও প্রধান সচিব হতে কোনো বাধা নেই। কোরআনের জ্ঞান না থাকলেও ধর্মমন্ত্রী ও ধর্ম সচীব হওয়া যায়। জেনারেল মইনের কেয়ারটেকার সরকারের আমলে একজন ধর্মমন্ত্রী হয়েছিলেন যার ধর্মজ্ঞান ছিল শূন্য। বরং তিনি নানা ধরনের ব্যভিচারে লিপ্ত থাকতেন। তাহলে তাকে কেন ধর্মমন্ত্রী করা হলো? কারণ, আমাদের দেশের নেতা-নেত্রী ও বড় বড় আমলাদের বেশিরভাগেরই ধর্মের প্রতি সম্মানবোধ নেই। এ ধরনের লোকেরাই এখন আল্লামা শফী সাহেবকে হেনস্থা করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। ইতোমধ্যে তাকে গ্রেফতার করার জন্য মানববন্ধন করেছে নারী জাতি। কিছু পুরুষও তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মানববন্ধন করছেন। এদের বেশিরভাগই ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ ও অনাগ্রহী। এরা সুন্দরী ময়না পাখির মতো। যা শিখিয়ে দেয়া হয় তাই বলতে থাকে। আমাদের দেশে বেশকিছু নারী আছেন যারা সামাজিক কারণে সমাজের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত। এদের কোনো ধরনের ধর্ম জ্ঞান নেই। এদের অনেকেই আইন ব্যবসা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, বড় বড় কোম্পানির মালিক বা সিনিয়ার লেবেলে চাকরি করেন। সময় সুযোগ বুঝে এরা সেমিনারে, গোলটেবিল বৈঠকে মতামত প্রকাশ করেন। আপনারা যে কেউ সিটি করপোরেশনের বিবাহ সালিশ আদালতে গিয়ে খোঁজ নিলে দেখবেন রাজধানীতে ৮০ ভাগ তালাক নোটিশ দিচ্ছেন শিক্ষিত মেয়েরা। নারী অধিকারের নামে আদালতে ৯০ ভাগ মিথ্যা মামলা দায়ের হচ্ছে। বিষয়টা নিয়ে কিছু লিখব বলে আমি একবার ড. কামালের ব্লাস্ট অফিসে গিয়েছিলাম। হিজাব পরা এক মহিলা আমাকে জানালেন, এটা একটা ক্রান্তিকাল বা ট্রানজিশনাল পিরিয়ড। হঠাত্ অধিকার পেয়ে মেয়েরা সংসার ভাংছে। সময়ই সব ঠিক করে দেবে। হয়তো চলমান সময়ে কিছু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কিছু পরিবার ভেঙে যাচ্ছে। পরে ভদ্র মহিলা আমাকে জানালেন, তারা গরিব মেয়েদের পারিবারিক আইন সহায়তা দিচ্ছেন। মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত নিয়ে তারা কাজ করেন না। সিটি করপোরেশনে যারা ডিভোর্স বা তালাক নোটিশ দিচ্ছেন তাদের সবাই মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শিক্ষিত নারী। বিয়ের ছ’মাস থেকে এক বছরের মধ্যে ৬০ ভাগ বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। এদের বিয়ে হয় মুসলিম বিবাহ আইনে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে। কাবিনের ১০০ ভাগ শর্তই মানতে হয় ছেলেকে। ছেলেকেই সব শর্ত পূরণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। মেয়েরা কোনো ওয়াদা করে না। এমন কি তালাকের অধিকারও বর কন্যাকে দান করে। বর্তমান কাবিননামায় মেয়েদের তালাকের কোনো প্রভিশন নেই। মেয়েরা সব ধরনের শর্ত মেনে নিয়ে বরকে কনের বাড়িতে তুলে নিয়ে যাবে এমন আইন বা বিধি এখনও চালু হয়নি। মুসলিম বিবাহ ব্যবস্থায় কন্যাকে মোহর দেয়ার বিধি রয়েছে এবং সে মোহর বাসর রাতের আগেই নগদ পরিশোধ করতে হয়। শিক্ষিত-অশিক্ষিত কোনো মেয়েই এ মোহর আদায় করে না বা বরপক্ষ দিতে চায় না। মোহর পরিশোধ না করলে নৈতিকতার দিক থেকে বিবাহ শুদ্ধ নয়। শিক্ষিত মেয়েরা তালাকের সময় মোহর আদায় করে। অশিক্ষিতদের কাবিনও থাকে না। অশিক্ষিত গরিব মেয়েরা পুরুষ কর্তৃক অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়। এদের মধ্যে কথায় কথায় তালাকের কথা ওঠে। কিন্তু শিক্ষিত সমাজে ছেলেরা নারী কর্তৃক নির্যাতিত। কিন্তু লজ্জায় বা সামাজিক অবস্থান বা পারিবারিক মর্যাদার কথা ভেবে ছেলেরা এ ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করে না। আমি বেশকিছু নামিদামি পরিবারকে চিনি, যাদের মেয়েরা তিন চারবার তালাক দিচ্ছে আর বিয়ে করছে। এরা এখন আর পরিবার বা বিয়ে বন্ধনকে মানতে চায় না। উচ্চশিক্ষিত বেশ কিছু মেয়ে উচ্চ মোহর নিয়ে ধনী পরিবারে বিয়ে করে। তালাক দিয়ে মোহর আদায় করে ধনী হয়েছে। বাংলাদেশের নারী জগতে এখন দুটি অবস্থা দৃশ্যমান। গরিব অশিক্ষিত নারীরা সীমাহীন নির্যাতনের শিকার। এমন সমাজের নেতারাও নারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে থাকে। আমরা নিয়মিত খবর পাই স্বামীরা তাদের উপর অত্যাচার করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ির লোকজন দলবেঁধে কন্যার উপর নানা বাহানায় অত্যাচার করে। বহু ক্ষেত্রে হত্যা করা হয়। শিক্ষা ছাড়া সমাজের এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না।
গৃহকর্মীদের অবস্থাও খুবই করুণ। মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণীর নারীরাই শিশুকন্যা ও নারী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার চালায়। এসব খবরও প্রতিদিন আসছে। তবে খবরের কাগজে ছাপা হয় ২০ ভাগ খবর। শিশু কন্যা ও নারী শ্রমিকরা গৃহকর্তা দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। ইদানিং বেশকিছু খবর এসেছে স্কুলের পুরুষ শিক্ষক ছাত্রীদের উপর যৌন নির্যাতন চালাচ্ছে। অনেক শিক্ষক অশ্লীল দৃশ্যগুলো ভিডিও করে মেয়েদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। গরিব অসহায় নারীদের উপর নানাভাবে নানা জায়গায় নির্যাতন এদেশের সরকার রাষ্ট্রেরও ব্যর্থতা। যারা নিজেদের সুশীল সমাজের সদস্য মনে করেন তাদেরও ব্যর্থতা। বহুযুগ ধরে নারীদের উপর এ অত্যাচার নির্যাতন চলে আসছে।
অপরদিকে জাগরিত, আলোকিত বলে পরিচিত কিছু নারী আছেন যারা সমাজের উপরের স্তরে বাস করেন। তথাকথিত প্রগতিশীল বলে নিজেদের জাহির করেন এমন নারীরা সমঅধিকারের নামে বাংলাদেশের শিক্ষা সংস্কৃতি ও চিরায়ত ঐতিহ্যে ধুলায় মিশিয়ে দেয়ার কাজে জড়িত হয়ে পড়েছেন। এরা নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করেন, কিন্তু কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত নারী অধিকার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ইদানিং তো উচ্চ মর্যাদার একশ্রেণীর নারী-পুরুষ ইসলামের ব্যাখ্যাও দিতে শুরু করেছে। কথাবার্তা শুনে মনে হয় তারা সবাই ইসলামিক স্কলার! ইসলামের নামে ইসলাম বিরোধী নানা ধরনের কথাবার্তা বলে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলেছেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা সবার আগে ও প্রথম কাতারে রয়েছেন। এরা সবাই দলবেঁধে কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা করে চলেছেন। এক সময় ইহুদিরা নিজের ধর্মগ্রন্থকে বিকৃত করে যেমন ইচ্ছা তেমন ব্যাখ্যা করত। রাসুল (সা.)-এর যুগেও কিছু মোনাফেক ছিল যারা মুসলমানদের কাছে বলত আমরা খাঁটি মুসলমান।
আবার মোনাফেকদের কাছে ফিরে গিয়ে বলত, আমরা মুসলমানদের ঠকাবার জন্যই ওদের কাছে যাই। আমাদের দেশে মোনাফেকরা সর্বত্রই প্রথম কাতারে। কিন্তু ওদের কিছু বলতে পারবেন না। ধেই ধেই করে তেড়ে আসবে আপনাকে পিটাবার জন্য। পবিত্র কালামে পাকে মহান আল্লাহতায়ালা নারীদের মর্যাদা, জগতে তাদের অধিকার, সংসারে তাদের ভূমিকা, তাদের পোশাক-আশাক পর্দা পুশিদা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা ও বর্ণনা করা হয়েছে। আমাদের কন্যারা বা বোনেরা, স্ত্রী বা মায়েরা যারা অতি আধুনিক, অতি উচ্চশিক্ষিত বা ক্ষমতাবান বা ধনবান নিজেদের কঠিন মুসলমান ভাবলেও কোরআন সম্পর্কে তাদের বিন্দুতম জ্ঞান নেই। তারা বুক ফুলিয়ে চলেন, তরুণীরা টিশার্ট ও জিন্সের প্যান্ট পরেন, অফিসে ডালতে অনেকেই কোট-প্যান্ট পরেন, শাড়ি পরে অনেকেই নাভি দেখান আর স্লিভলেস বুক-পিঠ খোলা ব্লাউজ পরেন। তারাই আবার নারী সমাজের নেতৃত্ব দেন। অনেকেই ক্লাবেও যান পার্টিতে। গভীর রাতে বাড়ি ফিরেন। অনেকেই বলবেন এমন নামিদামি জাগরিত নারীর সংখ্যা খুবই কম। আমিও তাদের সঙ্গে একমত। কিন্তু তারা নেত্রী ও প্রভাবশালী।
এরাই আল্লামা শফী সাহেবের বিরুদ্ধে আজেবাজে বলছেন। নারী অধিকার সম্পর্কে তারা যা বলেন বা বলে চলেছেন তা ১০০ ভাগই কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সুযোগ্য পুত্র জয় নাসারা বা খ্রিস্টান বিয়ে করেছেন, ইহুদি বিয়ে করেননি। এতে নাকি ধর্মে কোনো অসুবিধা নেই! এর আগেও প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি মদিনা সনদ মোতাবেক দেশ চালাবেন। আসলে তিনি এসব না জেনেই বলে থাকেন। খ্রিস্টানরা কিন্তু আমাদের রাসুলকে (সা.) মানে না, স্বীকারও করে না। আল কোরআনের আগমনের সাথে সাথে অতীতের কিতাব ও শরীয়ত স্থগিত হয়ে গেছে। একজন মুসলমানের সঙ্গে একজন অমুসলমানের বিয়ে হতে পারে না। সৈয়দ আশরাফ সাহেবতো স্বীকারই করেছেন তিনি হিন্দুও নন, মুসলমানও নন। শুনেছি তিনি নিজেও বিয়ে করেছেন একজন অমুসলমান নারীকে। তাই অনুরোধ করব ক্ষমতার জোরে এমন কথা বলবেন না যা আপনাদের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।
লেখক : কবি ও ঐতিহ্য গবেষক

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button