পশ্চিমা তরুনদের মধ্যে ইসরাইল বিরোধী ক্ষোভ বাড়ছে
গাজায় ইসরাইলি বর্বরতার প্রতিবাদে পশ্চিমা তরুনরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে। গত কয়েক দশকের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট বা ইউরোপীয় দেশগুলো ইসরাইল বিরোধী এতটা ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেনি। এসব দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ইসরাইলকে সমর্থন দিলেও সাধারন মানুষের মধ্যে ইসরাইল সর্ম্পকে মনোভাবের বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা হচ্ছে। মেলবোর্ন থেকে ক্যালিফোর্নিয়া কিংবা লন্ডন প্যারিস সর্বত্র যে ইসরাইল বিরোধী সমাবেশ হয়েছে তার নেতৃত্ব দিয়েছে তরুনরা। ব্রিটেনের একটি ব্যান্ডদল গাজার পক্ষে গান গাইলে ইুউ টিউব থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর জরিপেও এমন চিত্র উঠে এসেছে। হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে তুলে ধরার ইসরাইল ও পশ্চিমা মিডিয়ার প্রবল প্রচারনাও এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে কথা বলা মানে এন্টি সেমিটিক এমন মিথও ভেঙ্গে গেছে। ইউরোপ ও আমেরিকার জনগনের মনোভাবের এই পরিবর্তন ইহুদি বুদ্ধিজীবীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ইসরাইলের গনমাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক মনে করেন পশ্চিমের তরুনদের একটি বড় অংশের মধ্যে আদর্শবাদি চিন্তার বিকাশ ঘটছে। তার প্রতিফলন এখন পাওয়া যাচ্ছে।
গাজায় ইসরাইলি বর্বরতার পর বিশ্বজুড়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে ইহুদিদের সর্ম্পেক বিরুপ ধারনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত অর্থে ইসরাইল যে শান্তি ও সহবাস্থানের নীতিতে বিশ্বাস করে না তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে কম। আরব দেশগুলো হামাস ও মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে যে অবস্থান গ্রহন করেছে তার প্রভাব পড়েছে মুসলিম দেশগুলোতে।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে গত কয়েক দশকের মধ্যে মধ্যে ওয়াশিংটন লন্ডন ও প্যারিসে এত বড় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়নি। ফ্রান্স সরকার প্রথমে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করলে সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মানুষ রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। পরে অবশ্য বিক্ষোভ সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়।
একই ভাবে গাজায় হামলার পর থেকে ওয়াশিংটন ও লন্ডনে টানা বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহর গুলোতে এক জরিপে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের তরুনদের ৫১ শতাংশ গাজায় ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ব্রিটেনে গার্ডিয়ান পত্রিকার এক জনমত জরিপে দেখা গেছে ব্রিটেনের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ ইসরাইলের বিরুদ্ধে। বিশেষ করা তরুনরা ইসরাইলের ওপর ক্ষুদ্ধ
ইসরাইল বরাবর হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে তুলে ধরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে প্রচারনা চালানোর চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। বিবিসি,সিএনএন, স্কাই এর মতো নিউজ চ্যানেলগুলো ইসরাইলের পক্ষে প্রচার চালালেও তা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। বরং ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক মাধ্যমে ইসরাইলি বর্বরতার ছবি ও বিবরন জনমতকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছে।
হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে একঘরে করার ইসরাইলি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনে সংখ্যাগরিষ্ট দেশের ভোটাভুটির ভিত্তিতে ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধ তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকার ৫টি দেশ বলিভিয়া ব্রাজিল পেরু ইকুয়েডর ও চিলি ইসরাইল থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। দক্ষিন আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান খালেদ মিশালকে চিঠি লিখে সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। হামাসের জন্য এটা ছিলো বড় ধরনের কূটনৈতিক বিজয়।
ইসরাইল বিরোধী জনমত যে পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি করছে বৃটেন ও স্পেনের ইসরাইলে অস্ত্র বিক্রি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত তার প্রমান। গাজা প্রশ্নে ব্রিটিশ সরকারের নীতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাইয়েদা হুসেইন ওয়ার্সি পদত্যাগ করেন।তিনি জানিয়েছেন, গাজা প্রশ্নে সরকারের নীতি তার পক্ষে আর সমর্থন করা সম্ভব নয় বলে তিনি পদত্যাগ করেন। তিনি তার ট্যুইটারে বলেন, তিনি ‘গভীর অনুশোচনা’ নিয়ে সরে যাচ্ছেন। সাঈদা ওয়ার্সীর পদত্যাগ সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তিনি বৃটেনের গাজা নীতির প্রতিবাদের পদত্যাগ করেন।
এছাড়া বৃটেনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ শুরু থেকেই গাজায় ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছিলেন। গার্ডিয়ান পত্রিকায় এক নিবন্ধে তিনি ইসরাইলকে পরামর্শ দিয়েছিলেন দ্রুত হামাসের সাথে আলোচনায় বসার জন্য। ইউরোপের সাধারন মানুষের মধ্যে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এই মাত্রায় গিয়েছিলো যে অষ্ট্রিয়ায় একজন চিকিতসক বয়স্ক ইহুদি নারীর চিকিতসা করতে অস্বীকার করে তাকে গাজায় গিয়ে চিকিতসা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক মনে করে ইসরাইলের বর্বরতা অব্যাহত তাহলে ইউরোপ ও আমেরিকায় ইহুদি বিদ্বেষ বাড়তে পারে। ইসলমো ফোবিয়া এবং অ্যান্টি সেমিটিক প্রচারনা হিসাবে তুলে ধরে ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবে না।
ইউরোপ ও আমেরিকার তুলনায় মুসলিম দেশগুলোতে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে কম। যদিও সাধারন মানুষের মধ্যে ছিলো তীব্র ক্ষোভ। মুসলিম দেশগুলোর শাসকদের দমন পীড়ন আর বিধি নিষেধের কারনে বিক্ষোভ সমাবেশ কম হয়েছে। আরব দেশগুলোর চিত্র অনেকটা একই রকম। এছাড়া অনেক আরব দেশে আভ্যন্তরিন সংঘাত চলছে। তারপও সৌদি আরবে এক জনমত জরিপ থেকে সাধারন মানুষের মনোভাবের প্রতিফলন পাওয়া যায়।
রাকেন ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থার জরিপে দেখা যায় দেশটির ৯৫ শতাংশ নাগরিক ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যুদ্ধকে সমর্থন করেন। ৩ শতাংশ মাত্র দ্বিমত পোষন করেছেন। ২০০০ সৌদি নাগরিকের মধ্যে এই জরিপ চালানো হয়েছিলো। ৮২ শতাংশ মানুষ হামাসের রকেট নিক্ষেপ সমর্থন করেছেন। ১৪ শতাংশ এর বিরুদ্ধে মত দেন। দুই তৃতীয়াংশ লোক ইসরাইলের বিরুদ্ধ সামরিক অভিযান চালানোর পক্ষে মত দেন। ৮৬ শতাংশ সৌদি নাগরিক হামাসের আন্দোলনকে সমর্থন করেন। ৪ শতাংশ লোক মনে করেন মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সর্ম্পকিত এই সংগঠনের ভিন্ন এজেন্ডা আছে। আর ১ শতাংশ মনে করেন হামাস ইসরাইলের পক্ষের একটি শক্তি। এই জরিপে এক তৃতীয়াংশ সৌদি নাগরিক ইসরাইলের পক্ষে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে যুদ্ধে যাওয়ার পক্ষে মত দেন।