যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশমতো নজরদারি করে ১০ কোটি পাউন্ড পেয়েছে ব্রিটেন
ফের চমকানো সংবাদ প্রকাশ করলেন এডওয়ার্ড স্নোডেন। মস্কো বিমানবন্দর ছাড়ার আগে এই প্রাক্তন মার্কিন সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, গত তিন বছরে মার্কিনিদের নির্দেশ মতো নজরদারি করার পারিশ্রমিক বাবদ ব্রিটিশ গোয়েন্দা দপ্তর অন্তত ১০ কোটি পাউন্ড দক্ষিণা পেয়েছে। সদ্য রাশিয়ায় আশ্রয় পাওয়া প্রাক্তন মার্কিন গুপ্তচর এডওয়ার্ড স্নোডেন আবারও অস্বস্তিতে ফেলেছেন ব্রিটিশ প্রশাসনকে। সংবাদসংস্থা দ্য গার্ডিয়ান\’কে সেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দর ছাড়ার আগে এমন কিছু তথ্য দিয়ে গিয়েছেন তিনি, যাতে নতুন করে মাথা হেট হলো ডেভিড ক্যামেরনের সরকারের। এছাড়াও জি-৮ বৈঠকে যোগ দেয়া প্রতিনিধিদের ওপর ব্রিটিশ নজরদারি চলেছিল, এমন তথ্য ফাঁস হওয়ার পর স্নোডেনের ফাটানো নতুন এই বোমায় রীতিমতো চাপে পড়েছে ব্রিটিশ সরকার। প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীদের থেকে কৈফিয়ত তলব করা হতে পারে, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে পুরোমাত্রায়। দ্য গার্ডিয়ান, এএফপি।
২০০৯ সাল, মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ) থেকে বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা \’গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশন হেড কোয়ার্টার\’ (জিসিএইচকিউ) পেয়েছে ২ কোটি ২৯ লাখ পাউন্ড। ২০১০ সালে আমেরিকা থেকে ইংল্যান্ডে \’পারিশ্রমিক\’ হিসেবে এসেছে প্রায় ৩ কোটি ৯৯ লাখ পাউন্ড। ২০১১-১২-তে ৩ কোটি ৪৭ লাখ পাউন্ডের আদান-প্রদান হয়েছে দুই সংস্থার মধ্যে। স্নোডেনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এমনই প্রতিবেদন ছাপিয়েছে \’দ্য গার্ডিয়ান\’। তার মধ্যে ৪০ লক্ষ পাউন্ড এসেছে আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর হয়ে গোয়েন্দাগিরি করে দেয়ার পারিশ্রমিক হিসেবে। এ ছাড়াও ইন্টারনেটে নজরদারি চালিয়ে পাওয়া বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করা এবং মার্কিন হয়ে নজরদারির কাজ চালানোর পারিশ্রমিক হিসেবে জিসিএইচকিউ পেয়েছে এক কোটি ৭২ লাখ পাউন্ড।
মার্কিন প্রশাসনের হাত এড়িয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় পাওয়া স্নোডেন মস্কো বিমানবন্দর থেকেই একাধিকবার হুমকি দিয়েছিলেন, তার হাতে দুনিয়াকে চমকে দেয়ার মতো বেশ কিছু তথ্য এখনো রয়েছে। সেই হুমকি যে নিতান্তই ফাঁকা আওয়াজ ছিল না তা \’দ্য গার্ডিয়ান\’-এ প্রকাশ পাওয়া প্রতিবেদন থেকেই টের পাওয়া গেল। বৃটিশ নজরদারি ব্যবস্থা মার্কিনদের তুলনায় অনেকটাই দুর্বল। তাই উন্নততর প্রযুক্তি পাইয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে বৃটিশ সংস্থা জিসিএইচকিউ-কে দিয়ে সহজেই মার্কিনদের সেবা করতে একরকম বাধ্য করা হয়েছিল- এমন তথ্যও রয়েছে স্নোডেনের ফাঁস করে দেয়া খবরের মধ্যে। যদি মার্কিনদের নির্দেশ মতো কাজ না-করা হয়, তা হলে বৃটিশদের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনেকটাই চোঁট খাবে বলে আশঙ্কা ছিল বৃটিশদের। তাই মার্কিনদের \’তুষ্ট করতেই\’ তাদের নির্দেশ মতো কাজ করে যেতে একরকম বাধ্য হন ইংরেজরা। অর্থের বিনিময়ে যখন কাজ তখন কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই। ব্যতিক্রম ছিলেন না মার্কিনরাও। ইংরেজ গোয়েন্দাদের কাজে যে তেমন সন্তুষ্ট ছিলেন না \’মার্কিন প্রভু\’রা তেমন কথাও জানিয়েছেন স্নোডেন।
একাধিক ক্ষেত্রে জিসিএইচকিউ যে এনএসএ-র প্রত্যাশা মতো কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দ্বিধা করেনি বিতর্কিত এই মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা। ২০১০ সাল থেকেই নাকি ইংরেজ গোয়েন্দাদের কাজের মান পড়তে শুরু করে, স্নোডেনের কাছ থেকে এমন খবরই পেয়েছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র।