যে ব্রিটিশদের বন্ধু ভালোবাসা নেই !
লাখ লাখ ব্রিটিশ নর-নারীর একজনও ঘনিষ্ঠ বন্ধু নেই, তাঁদের অনেকেই ভালোবাসাহীন জীবন কাটাচ্ছেন! শুনতে অবাক লাগলেও ‘২০১৪ সালে আমরা যে পথে আছি’ শিরোনামে যুক্তরাজ্যে পরিচালিত এক জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে ওই জরিপের ফল তুলে ধরেছে।
জরিপে দেখা গেছে প্রতি ১০ জনে ১ জন ব্রিটিশের কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু নেই। জনসংখ্যার অনুপাতে হিসাব করলে এই হার অনুযায়ী ৪৭ লাখ ব্রিটিশই হয়তো বন্ধুহীন জীবনযাপন করছেন। যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক বিষয়ক দাতব্য সংস্থা রিলেট এ জরিপ চালায়। মঙ্গলবার জরিপের ফল প্রকাশের পর দাতব্য সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী রুথ সাদারল্যান্ড বলেছেন, এই জরিপের ফলে জাতির এমন ছবি ফুটে উঠেছে, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষই বন্ধু-স্বজনের সঙ্গ ছাড়াই বেঁচে আছেন।
৬৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সীদের ৬৯ ভাগই আর্থিক উদ্বেগের কথা জানালেও ১৬-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৩৭ ভাগ এ নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। ছবি: ব্রিটিশ পাবস ডট ব্লগপোস্টইংল্যান্ড, ওয়েলস, উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডজুড়ে দৈব চয়ন পদ্ধতিতে এই জরিপ চালানো হয়। ১৬ বছর এবং তার চেয়ে বেশি বয়সী ৫ হাজার ৭৭৮ জন নর-নারী এতে অংশগ্রহণ করেন। জীবনসঙ্গী, বন্ধু এবং কর্মক্ষেত্রের বস ও সহকর্মীসহ সব ধরনের সম্পর্ক নিয়েই অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন জরিপকারীরা।
বিবাহিত জীবন কাটাচ্ছেন কিংবা কারও সঙ্গে একত্রে বসবাস করছেন এমন মানুষদের ৮১ ভাগই ব্যক্তিগত জীবনে ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন। আর একা জীবন কাটাচ্ছেন এমন মানুষদের ৬৯ ভাগ জানিয়েছেন যে, ব্যক্তিগত জীবনে তাঁরা ভালো আছেন।
অবশ্য, এই জরিপের ফলে ইতিবাচক যে বিষয় উঠে এসেছে তা হলো—প্রতি ১০ জনে ৯ জন ব্রিটিশই জানিয়েছেন তাঁদের অন্তত একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছে। এছাড়া নারীদের ৮১ ভাগই জানিয়েছেন তাঁরা তাদের সম্পর্ক নিয়ে সুখী। তবে পুরুষরা নারীদের তুলনায় সম্পর্ক নিয়ে কম সুখী বলে দেখা গেছে এই জরিপে। পুরুষদের ৭৩ ভাগ জানিয়েছেন যে সম্পর্ক নিয়ে সুখী তাঁরা।
১৬ বছর এবং তার চেয়ে বেশি বয়সী ৫ হাজার ৭৭৮ জন ব্রিটিশ নর-নারী এ জরিপে অংশগ্রহণ করেন। ছবি: দ্যা গার্ডিয়ানপরিবার-কর্মক্ষেত্র-টাকাকড়ি
জরিপের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে পরিবার জীবনের ধরন দ্রুত পাল্টাচ্ছে। বিবাহ-বিচ্ছেদের হার বাড়ছে। জরিপে অংশ নেওয়া প্রতি চারজনে একজনই বিবাহ-বিচ্ছেদ বা সম্পর্ক ভাঙার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন।
সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চাপ সৃষ্টিকারী বিষয় হিসেবে ৬২ ভাগই টাকাকড়ির সমস্যার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি এই জরিপে দেখা গেছে যে, তরুণদের তুলনায় বয়স্করা টাকাকড়ির সমস্যা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন। ৬৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সীদের ৬৯ ভাগই আর্থিক উদ্বেগের কথা জানালেও ১৬-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৩৭ ভাগ এ নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
কর্মক্ষেত্রে বসের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার কথা জানিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৬০ ভাগই। কিন্তু ৪২ ভাগই জানিয়েছেন, কর্মক্ষেত্রে তাঁদের কোনো বন্ধু নেই। আর প্রতি তিনজনে একজনই জানিয়েছেন, তাঁদের বস মনে করেন ভালো কর্মীরা পরিবারের চেয়ে কাজকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।