আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে চাইলে যা যা করতে হবে
মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান:
বর্তমানে সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে জ্ঞান, মেধা ও বুদ্বির প্রতিযোগীতা। এ প্রতিযোগীতায় মুসলিমতরুনদের এগিয়ে যেতে প্রয়োজন মেধার সবোর্চ্চচর্চা ও সময়ের সদ্বব্যবহার।যা অনেকাংশে সম্ভব হয়ে ওঠে বিশ্বখ্যাতশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যায়নের মাধ্যমে। একটি বিদেশী মানসম্মত প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নেরসুযোগ বদলে দিতে পারে আপনার জীবনেরগতিধারা। আল আজহার তেমনি একটি বিশ্ব বিদ্যালয়। ইসলাম চর্চার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে ”আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়” বিশ্বব্যাপী পরিচিত স্ব- মহিমায় উজ্জ্বল এক নাম। একে “কাবাতুল এলেম” হিসেবেও আক্ষ্যায়িত করা হয়।আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বিদার উপর প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি সারাবিশ্বের ইলমি মারকাজ।এখানে বিশ্বর বড় বড় খ্যতিমান আলেমগন অধ্যাপনা করেন। এক সময় ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ইমাম জালালুদ্দিন সূয়ূতি, ইমাম গাযযালি সহ অসংখ্য খ্যাতিমান বুযুর্গ ওলামারা এখানে শিক্ষকতা করেছেন। ৯৭২ সাল থেকে হাজার বছর পাড়ি দিয়ে কালের নীরব সাক্ষী প্রতিষ্ঠান টি এ পর্যন্ত নিরলশ ভাবে ইসলামী ঞ্জানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্ব জুড়ে, দিগ-দিগন্তে । প্রথমেই জানা আবশ্যক মনে করি, এখানে অধ্যয়নের জন্য দুটি উপায় রয়েছে । একটি রাজকীয় শিক্ষা বৃত্তি । অপরটি হচ্ছে নিজ খরচিয়। । এখানে প্রথমে ইসলামিক শরীয়াহ তথা ধর্মীয় বিষয়সমূহ থাকলেও ১৯৬১ সালে এর সাথে সাধারণ বিষয়সমূহ যুক্ত হয়।.১। প্রতি বছর ১০৪ টি দেশের শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপের মাধ্যমে সুযোগ পায় এখানে পড়াশুনা করার জন্য। ২। বাকীদের পড়াশুনা করতে হয় নিজ খরচে । নিজ খরচে পড়াশুনা করতে আসা ছাত্র-ছাত্রীর তালিকার শীর্ষে আছে ইন্দেনেশিয়া ও মালয়েশিয়া । শুধু ইন্দেনেশিয়া থেকেই রয়েছে অধ্যয়নরত প্রায় দশ হাজার ছাত্র-ছাত্রী । নিজ খরচে আসতে চাইলে বাংলাদেশী ছাত্র ভাইয়েরা যোগাযোগ করতে পারেন নিজ পরিচিত কারো সাথে ।
যারা হাজার বছরের এই প্রাচীন ও কালজয়ী আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছাব্যক্ত করেন। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি নিম্নে পেশ করছি।
আল আজহারের পক্ষথেকে প্রতি বছর বাংলাদেশের ১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য স্কলারশিপ ঘোষনা করে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ইসলামী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ইনকিলাব পত্রিকার মাধ্যমে স্কলারশিপ পেতে আগ্রহি শিক্ষার্থীদের দরখাস্ত আহবান করা হয়। দরখাস্তের সাথে নিম্নবর্নিত কাগজ দাখিল করতে হবে।
১: পাসপোর্ট (ফটোকপি)
২: দাখিল ও আলিমের সার্টিফিকেট এবং মার্কসিট (আরবি অনুবাদ সহ নোটারি করিয়ে মাদ্রাসা বোর্ড,শিক্ষা মন্ত্রনালয়,পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে সত্যায়িত করতে হবে।)
৩: জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট ( আরবী অনুবাদ সহ নোটারি করিয়ে জেলা সিভিল সার্জন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে সত্যায়িত করতে হবে।)
৪: মেডিকেল সার্টিফিকেট (জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাওয়া যাবে। অতপর আরবী অনুবাদসহ নোটারি করিয়ে সিভিল সার্জন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে সত্যায়িত করতে হবে।)
পত্রিকায় নোটিশ দেওয়ার পর ৫-১০ দিনের মধ্যেই দরখাস্তসহ সকল কাগজপত্র জমা দিতে হয়। তাই আগ্রহি সকলকেই এখন থেকে কাগজপত্র রেডি করার পক্রিয়া শুরু করতে হবে।
(ক) ২ নাম্বারে উল্লেখিত চারটি কাগজ অর্থাত দাখিলের মার্কসিট,দাখিলের সার্টিফিকেট,আলিমের মার্কসিট,আলিমের সার্টিফিকেট,এবং ৩ ও ৪ নাম্বারে উল্লেখিত জন্মনিবন্ধন ও মেডিকেল সার্টিফিকেট সর্বমোট এই ৬ টি কাগজ আরবিতে অনুবাদসহ নোটারি করতে হবে।
(খ) ২ নাম্বারে উল্লেখিত ৪ টি কাগজ প্রথমে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে ব্যংকে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কাউন্টারে জমা দিয়ে আসতে হবে।জমাদানের ২-৩ দিন পর কাগজ ফিরত দিবে।
(গ) অতপর এই ৪ টি কাগজ সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রনালয়ের কাউন্টারে সকাল ৯ টার মধ্যে জমা দিতে হবে এবং একই দিন বিকেল ৪ টায় ফিরত দিবে ।
(ঘ) ৩ ও ৪ নাম্বারে উল্লেখিত কাগজ ও আরবিতে অনুবাদ সহ নোটারি করিয়ে সিভিল সার্জন থেকে সত্যায়িত করতে হবে।
(চ) উপরক্ত কাজ শেষ হওয়ার পর ৬ টি কাগজ একত্রিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে সকাল ৯ টার মধ্যে জমা দিতে হবে এবং একই দিন বিকেল ৪ টায় ফেরত পাওয়া যাবে।
ঢাকার দৈনিক বাংলার মোড়ে অসংখ্য অনুবাদ কেন্দ্র আছে সেখান থেকে আরবী অনুবাদ করান যাবে। একই জায়গা থেকে নোটারিও করান যাবে।
মনে রাখতে হবে প্রতিটি কাগজ সত্যায়িত করার সময় অবশ্যই মূল কাগজের সাথে আরবি অনুবাদসহ নোটারি করা কাগজ ও মূল কপির ফটোকপি সহ জমা দিয়ে সত্যায়িত করাতে হবে।
সব কাগজপত্র পস্তুত করার পর নির্ধারিত সময়ে দরখাস্তসহ উপরোক্ত কাগজ সমূহ জমা দিতে হবে।
ইসলামি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নির্ধারিত দিনে লিখিত ও মোখিক পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সে পরিক্ষাতেই ১০ জনকে নির্বাচিত করা হবে।
পরিক্ষা অনুষ্টিত হওয়ার দু-এক দিনের মধ্যেই নির্বাচিতদের নাম নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
পরীক্ষায় অংশগ্রহনের আগে কিছুবিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহন করা জরুরী। যেমন:
১: কোরআন শরীফ কমপক্ষে ২ পারা হিফয করতে হবে।
২: মিযান,মুনশাইব,নাহুমীর ভালোভাবে জানা থাকতে হবে।
৩: দোন্দন্দিন আরবী কথোকথন জানা থাকতে হবে।
৪: প্রয়োজনিয় মাসয়ালা মাসায়েল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে।
৫: আহলে সুন্নাতের বিভিন্ন আক্বিদা প্রমানে যথেষ্ট দলিলাদি জানা থাকতে হবে।
পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ৪/৫ মাসের মধ্যেই ভিসা চলে আসে। ভিসা আসলে মিসর এম্বাসি থেকে নির্বাচিতদের ফোন করা হবে। এবং নির্ধারিত দিনে পাসপোর্ট জমা দিলে ভিসা দিয়ে দিবে। সাধারনত নভেম্বর মাসে ভিসা দেওয়া হয়।
স্কলারশিপ প্রাপ্তদের জন্য আজহারের যে সকল সুবিধা পাওয়া যায়:
১: টিউশন ফি ।
২: হোষ্টেলে থাকার সুবিধা । হোস্টেলের একটি মনোরম দৃশ্য ।
৩: ২ বেলা খাবার ।
৪: মাসিক ৪৫০০ টাকা বৃত্তি ।
৫: ফিরতি ফ্লাইট ফেয়ার (১ বার ) শিক্ষা সমাপন শেষে ।
চান্স প্রাপ্তরা দাখিল আলিমের গ্রুপ ও রেজাল্ট অনুযায়ী অনার্স কোর্সের প্রায় ২০ টি ফ্যাকাল্টির বিষয় সমূহের মধ্যে পছন্দ সই বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন। (শর্ত সাপেক্ষ)।
আজহারে আসার আগে নিয়্যত খালেস করতে হবে, মূল মাক্বসাদ থাকতে হবে দ্বীনি সহিহ এলেম অর্জন করা এবং দ্বীনি প্রচারে আত্মনিয়োগ করা।
প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের পাশাপাশি ইসলামের অনেক নিদর্শন সম্পর্কে বাস্তব ঞ্জানার্জন করার সুযোগ পাবেন। এখানে অসংখ নবী রাসুল ও সাহাবায়ে কেরামের আগমন ঘটেছে। নবি ইয়াকুব (আ ), ইউনুছ (আ ), আইয়্যুব (আ), ইউসুফ (আ ), লোকমান (আ), হারুন (আ) দানিয়াল (আ) এর মাজার এদেশেই। নবি সোলায়মান (আ) মুসা (আ ) অনেক স্মৃতি এই দেশে বিদ্যমান।যে পাহাড়ে বসে মুসা (আ) আল্লাহর সাথে অসংখবার কথা বলেছেন যে পাহাড়ে তওরাত শরীফ নাযিল হয়েছে সে “তূরে সিনা ” এবং আল্লাহর নিদর্শন ১২ টি ঝড়না এ মিসরেই অবস্থিত। কোরআনে কারীমে আল্লাহ পাক মিসরকে “বালাদূন আমিন” নিরাপদ জমিন ঘোষনা করেছেন। কোরআনে মিসরের সম্পর্কে প্রত্যক্ষভাবে পাচবার আর পরোক্ষভাবে অসংখ্য বার আলোচিত হয়েছে।
আমাদের নবিজী (স:) এর কলিজার টুকরা ইমাম হোসাইন (রা:) এর ‘শের’ (মাথা) মোবারকের মাজার শরীফ আছে আল আজহারের ক্যাম্পাসের নিকটে । প্রসিদ্ধ সাহাবী আবু আইয়ুব আনসারী (রা:), পাচজন বদরি সাহাবীর মাজার, জগতবিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে হাজার আস-কালানী (র), ইমাম শাফেয়ী (র) ইমাম জালাল উদ্দিন সূয়ুতি (র) কাসিদায়ে বুরদার লেখক ইমাম বুসুরি (র্),দুরুদে তাজের লেখক ইমাম শাজুলি (র) সহ অসংখ আওলাদে রাসুল (দ) এবং ইসলামী দার্শনিকদের মাজার শরীফ আছে মিসর জুড়ে। হানাফি মাজহাবের ব্যারিস্টার খ্যাত ইমাম ত্বহাবী এখানেই শায়িত আছেন চির-নিদ্রায়। প্রখাত ” হিদায়া” গ্রন্থের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যা গ্রন্থ ১০ খণ্ডের ‘ফাতহুল ক্বাদীর’ এর লেখক ইমাম কামাল ইবনুল হুমাম (র) সহ ইমাম দাক্বিক ইবনুল ঈদ,ইমাম আতাউল্লাহ ইস্কান্দারানি,জগৎ খ্যাত ক্বারি খলিল খুসারি,মা’সরাবি সহ ক্বারি আব্দুস সামাদ আব্দুল বাসেত ধন্য করেছেন এ পুন্যভূমি ।
সূত্র, লাইট হাউস